মহাযান
বৌদ্ধধর্মের একটি অন্যতম মতাদর্শগত
ধারা। ‘মহা’ অর্থ মহৎ
বা উৎকৃষ্ট এবং ‘যান’ অর্থ মার্গ বা উপায়। যে উৎকৃষ্ট সাধনার ভিতর দিয়ে
বোধিসত্ত লাভ করা যায়, সেই বিশেষ ধারাটি হলো মহাযান।
গৌতম বুদ্ধের নির্বাণলাভের
(৫৬৩ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ) পর থেকে
খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মালম্বীরা কঠোরভাবে ধর্মচর্চা করতেন।
এঁদের এই মৌলিক ধর্মীয় মতবাদকে বলা হয়
থেরোবাদ।
খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর ভিতরে সংস্কৃত
ভাষাভাষী-সহ অন্যান্য ভাষার মানুষ ত্রিপিটক পাঠ করার সুযোগ লাভ করে। এর ফলে বৌদ্ধ
ধর্মের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়ে কিছু কিছু
বৌদ্ধধর্মাবলম্বী
মনে করা শুরু করেন যে,
থেরোবাদের
কঠোর নিয়ম শিথিল করে
বোধিসত্ত লাভের মধ্য
দিয়ে নির্বাণলাভ সম্ভব। এই ভাবনা থেকে বৌদ্ধ ধর্মের যে নতুন ধারার সূচনা হয়, তাকেই
বলা হয় মহাযান। এই মতে
বোধিসত্তকে সাধনার
আদর্শ এবং সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়ে থাকে। তাই মহাযানকে অনেক সময় বোধিসত্ত্বযানও
বলা হয়।
মহাযানীরাদের মতে বোধিসত্ত হচ্ছেন তিনিই, যিনি বারবার জন্মগ্রহণ করেন এবং অপরের পাপ ও দুঃখভার গ্রহণ করেন এবং তাদের আর্তি দূর করেন। তিনি শুধু নিজের নির্বাণ লাভের কথা ভাবেন না। তিনি চান জগতের সকলের মুক্তির জন্য কাজ করবেন এবং সকলের নির্বাণলাভের পর, তিনি পরিনির্বাপিত হবেন।
মহাযানীদের মতে বুদ্ধ হচ্ছেন ঈশ্বর এবং সিদ্ধার্থ গৌতম তাঁর প্রতিভূ। তাঁদের মতে বুদ্ধের আগে ২৬ জন বুদ্ধ অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বুদ্ধ ছিলেন ২৭তম বুদ্ধ। এরপর ২৮তম বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটবে। এই মতবাদের অনুসারী ছিলেন নাগার্জুন, চন্দ্রকীর্তি, অসঙ্গ, বসুবন্ধু, দিঙ্নাগ, ধর্মকীর্তি, অশ্বঘোষ, অতীশ দীপঙ্কর প্রমুখ। জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান, মঙ্গোলিয়া, চীন, তিববত, ভিয়েতনাম, নেপাল, ভুটান প্রভৃতি দেশে মহাযান পন্থী।