ডোয়ার্কিন এন্ড সন রেকর্ড
'ডোয়ার্কিন এন্ড সন'
(Dwarkin & Son) কোম্পানির বাজারজাতকৃত রেকর্ড।
ডোয়ার্কিন এন্ড সন কোম্পানির মালিক ছিলেন দ্বারকানাথ ঘোষ।
১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ২
লোয়ার চিৎপুর সড়কে, বাদ্যযন্ত্র
নির্মাণ ও মেরামতে জন্য একটি কারাখানা স্থাপন করেছিলেন। তখন এই প্রতিষ্ঠানের
নাম ছিল 'ডি ঘোষ অ্যান্ড সন'। এই সময় এই প্রতিষ্ঠানটি পিয়ানো টিউনিং-এর জন্য
বিখ্যাত ছিল। দ্রুত তাঁর এই ব্যবসায় উন্নতি হলে, স্থানাভাবে অসুবিধায় পড়েন। তাই
তিনি ৬ লোয়ার চিৎপুর সড়কে কারখানা স্থানান্তর করেন। এই সময় এই কোম্পানির
বাদ্যযন্ত্রের নির্মাণ এবং মেরামতের তালিকায় ভারতবর্ষে প্রচলিত সকল দেশী ও বিদেশী
বাদ্যযন্ত্রই ছিল। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে এই কোম্পানি হাতে চালিত বেলো
হারমোনিয়াম
যন্ত্রের ব্যাপক উন্নয়ন করেন। অচিরেই এই যন্ত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক প্রসার ঘটলে, এর নতুন
নাম দেওয়া হয় 'ডোয়ার্কিন এন্ড সন'। সাহেবি কেতায়
ইংরেজি কোম্পানিগুলোর মতো নাম
দেওয়ার জন্য, দ্বারকানাথের ইংরেজি বানান
Dwarkanath-এর
প্রথম অংশ অনুসরণে Dwarkin এবং এর সাথে
& Son
যুক্ত করে কোম্পানির নামকরণ করেছিলেন
Dwarkin & Son।
কথিত আছে Dwarkin
নামটি দিয়েছিলেন
উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। প্রকৃতপক্ষে এর বাংলা উচ্চারণ হওয়া উচিৎ ছিল 'দ্বারকিন এণ্ড সন্'। কিন্তু সাহেবি
উচ্চারণে তা হয়ে গিয়েছিল 'ডোয়ার্কিন এন্ড সন'
১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে 'ডোয়ার্কিন
এন্ড সন' স্থানান্তরিত হয়ে ২৬৭ বৌবাজার স্ট্রিটে চলে আসে। এখানেই স্থাপিত হয় কোম্পানির
নতুন অফিস ও কারখানা। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে এই কোম্পানি কলকাতার ৮/২ ডালহৌসি স্কয়ার-এ
একটি শোরুম চালু করে। একই সাথে এই কোম্পানি
হারমোনিয়াম
তৈরির জন্য 'দ্যা ইন্ডিয়া হার্মোনিক কোম্পানি' নামে পৃথক একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা
করে। এর বাইরে এরা বাংলায় সঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশেরও উদ্যোগ নেয়। এ জন্য এরা ৩৮
ক্রিক রো-তে একটি প্রকাশনা অফিস স্থাপন করে।
গ্রামোফোন রেকর্ডের চাহিদা বৃদ্ধি লক্ষ্য করে
দ্বারকানাথ ঘোষ
পুরানো ব্যবসার পাশাপাশি রেকর্ড ব্যবসায় শুরু করেন।
কিছুদিনের মধ্যে এই কোম্পানি নিজেরাই সিলিন্ডার রেকর্ড তৈরি করা শুরু করে। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই
প্রতিষ্ঠান নিজেদের নামে রেকর্ড বাজারজাত করার বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করে। এই সময়ের
বিজ্ঞাপনে শিল্পীর নাম পাওয়া যায়
লালচাঁদ বড়াল, রমজান খান, পিয়ারা সাহেব,
কুসুমকুমারী
প্রমুখ। তবে রেকর্ড নির্মাণের প্রতিযোগিতায় এই কোম্পানি বেশিদিন টিকে থাকতে পারে
নি। এই সময় ধীরে ধীরে এদের রেকর্ড ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
দ্বারকানাথ ঘোষ
পুত্র কিরণচন্দ্র ব্যবসায়িক
কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পর, কোম্পানি তাদের বাদ্যযন্ত্র ক্রয় ও নির্মাণের ব্যবসায়ে
ফিরে যায়। এরই মধ্য দিয়ে, সম্ভবত ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে এই কোম্পানির
রেকর্ড বিষয়ক কার্যক্রম চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র:
The Gramophone Company's First Indian
Recordings (1899-1908)/Michaet Kinnear. Bombay Popular Prakashan.1994