প্রাগৈতিহাসিক
ভাষা |
সাঁওতালি ভাষা
অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবার-এর
একটি অন্যতম ভাষা উপ-পরিবার হলো‒
মুণ্ডা
। এই ভাষা উপ-পরিবারে একটি শাখা হলো
উত্তর মুণ্ডা
। এই
ভাষা উপ-শাখা খেওয়ারি-তে
রয়েছে মোট ১৫টি ভাষা। তার ৩টি ভাষা নিয়ে তৈরি হয়েছে সাঁতালি ভাষাগোষ্ঠী। এই ভাষাগুলো
হলো‒
সাঁওতালি ভাষার নামানুসারে এই ভাষাগোষ্ঠীর নামকরণ করা হয়েছে। এই
ভাষার অন্যান্য নাম কোল্হ, হোরো, মোন্ডারি, মুনারি।
এই ভাষার লোকেরা বাস করে ভারতের বিহারের ভাগলপুর এবং মুঙ্গের জেলায়, ঝাড়খণ্ডের
মানভূম এবং হাজারিবাগ জেলায়, উড়িষ্যার বালাসর জেলায়,
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম এবং বাঁকুরা জেলায়, আসাম, ত্রিপুরা। ভারতের বাইরে বাংলাদেশের
উত্তরবঙ্গে, ভুটান এবং নেপালে এদের দেখা যায়।
ভারতের ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে জনগণনায় এদের সংখ্যা দেখানো হয়েছিল প্রায় ৬২,১৮,৯০০ লক্ষ।
এই সাঁওতালি ভাষার কোন নিজস্ব বর্ণমালা নেই। তবে খ্রিষ্টান মিশনারিদের হাতে সর্বপ্রথম সাঁওতালি ভাষার লিখিত রূপ দেওয়া হয় রোমান হরফে। ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সাঁওতাল পরগনার লুথারিয়ান মিশনে স্থাপিত একটি ছাপাখানা থেকে প্রথম সাঁওতাল ভাষার ব্যাকরণ ও অন্যান্য বই প্রকাশিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে রঘুনাথ মুর্মু ‘অলচিকি’ নামে সাঁওতালি বর্ণমালা তৈরি করে এবং তার সরকারি স্বীকৃতিও লাভ করে।
নৃততাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের
বিচারে এরা
নেগ্রিটো,
প্রোটো-অস্ট্রালয়েডদের উত্তরসূরী। বাংলদেশ
এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে এরাই প্রকৃত আদিবাসী। এরপর এদের সাথে রক্তের এবং ভাষার
সংমিশ্রণ ঘটেছিল দ্রাবিড়দের সাথে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত যে সকল শব্দকে সাধারণভাবে
দেশী বলা হয়, তার অনেকাংশ এসেছে এই ভাষা থেকে। যেমন‒
সাঁওতালি আকাল>বাংলা
আকাল
সাঁওতালি আখড়া>বাংলা চুলা
সাঁওতালি বড়সি>বাংলা
বড়শি
সাঁওতালি বড়ে>বাংলা
বট (গাছ)
সাঁওতালি বয়ার>বাংলা
বয়ার (মহিষ)
সাঁওতালি বণ্ডি, বণ্ড>বাংলা বেঁটে
সাঁওতালি বণ্ড>বাংলা
বেঁড়ে
সাঁওতালি চুলহা>বাংলা চুলা
সাঁওতালি ঢাল>বাংলা ঢাল
সাঁওতালি হে>বাংলা হাঁ
সাঁওতালি হুড়কা>বাংলা হুড়কা
সাঁওতালি কালা>বাংলা
কালা (বধির)
সাঁওতালি খচুর>বাংলা খচ্চর
সাঁওতালি খুণ্টি>বাংলা খুঁটি
সাঁওতালি মট,
মটরা>বাংলা মোট
সাঁওতালি মোটা>বাংলা
মোট
সাঁওতালি লেঙ্গা>বাংলা নেঙ্গা (বাঁ)
সাঁওতালি রাণ্ডি>বাংলা রাঁড় (বিধবা)
সাঁওতালি লড়্হাই>বাংলা লড়াই
মুণ্ডারি টোঙ্গা>বাংলা ঠোঙ্গা
মুণ্ডারি তোটড়া>বাংলা তোতলা
সূত্র :
বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স। জুলাই
১৯৯৮
http://en.wikipedia.org/wiki/Austroasiatic_languages
http://www.ethnologue.com/subgroups/north-munda