সহজ
প্রাণায়াম
যোগশাস্ত্রে বর্ণিত
একটি প্রাণায়াম বিশেষ।
কুম্ভক ছাড়া পূরক ও
রেচকসহ এই প্রাণায়াম করা হয়। এই প্রাণায়াম অভ্যাস করার সময় অল্পস্বলজপ ভুল হলেও কোন
প্রকার ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। এছাড়া সকল বয়সের মানুষ এই প্রাণায়াম করতে পারেন। সহজ
প্রাণায়াম কয়েকটি প্রণালীতে করা যেতে পারে। যেমন―
প্রণালী-১
১. মেরুদণ্ড সোজা
করে
পদ্মাসন
বা কোন সহজ আসনে উপবেশন করুন।
২. এবার নাক দিয়ে সশব্দে
বুক ভরে শ্বাস টেনে নিন।
৩। এবার কণ্ঠকূপে চিবুক
রাখুন।
৪. এবার সশব্দে শ্বাস
ত্যাগ করুন।
৫. এবার চিবুক উঁচু করে
সজোরে শ্বাস গ্রহণ করুন এবং পূর্বের মতো কণ্ঠকূপে চিবুক স্পর্শ করে শ্বাস ত্যাগ
করুন।
৬. প্রথম দিকে শ্বাস
গ্রহণ ও ত্যাগের জন্য সমান সময় নিন। পরে ধীরে শ্বাস গ্রহণের চেয়ে শ্বাস ত্যাগের
জন্য সময় বেশি নিন। এইভাবে হাঁপিয়ে না উঠা পর্যন্ত শ্বাস গ্রহণ ও শ্বাস ত্যাগের
অনুশীলন করতে থাকুন।
৭. এরপর যতক্ষণ না
শ্রান্তি দূর হয়,
ততক্ষণ
শবাসনে
বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১. ফুসফুসের ব্যায়াম
হয় এবং সর্দি-কাশির উপশম হয়।
২. ইনফ্লুয়েঞ্জা,
নিউমোনিয়া,
যক্ষ্মা রোগের ক্ষেত্রে
প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। তবে এই জাতীয় রোগ থাকা অবস্থায় এই প্রাণায়াম করবেন
না।
প্রণালী-২
১. মেরুদণ্ড সোজা করে
পদ্মাসন
বা কোন সহজ আসনে উপবেশন করুন।
২. এবার নাক দিয়ে সশব্দে
বুক ভরে শ্বাস টেনে নিন।
৩. মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে
এবং অবিচ্ছিন্নভাবে শ্বাস ত্যাগ করুন।
৪. এরপর ৫ মিনিট ধরে এই
শ্বাস ত্যাগ ও শ্বাস গ্রহণের অনুশীলন করতে থাকুন।
৫. এরপর যতক্ষণ না
শ্রান্তি দূর হয়,
ততক্ষণ
শবাসনে
বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১. ফুসফুসের ব্যায়াম হয়
এবং সর্দি-কাশির উপশম হয়।
২. ইনফ্লুয়েঞ্জা,
নিউমোনিয়া,
যক্ষ্মা রোগের ক্ষেত্রে
প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। তবে এই জাতীয় রোগ থাকা অবস্থায় এই প্রাণায়াম করবেন
না।
৩. মুখের গন্ধ দূর হয়।
৪. যকৃত ভালো থাকে।
প্রণালী-৩
১. মেরুদণ্ড সোজা
করে
পদ্মাসন
বা কোন সহজ আসনে উপবেশন করুন।
২. এবার নাক দিয়ে সশব্দে
বুক ভরে শ্বাস টেনে নিন।
৩. পাখির ঠোঁটের মতে
মুখ সরু করে ধীরে ধীরে এবং থেমে থেমে শ্বাস ত্যাগ করুন।
৪. এরপর ২ মিনিট ধরে এই
শ্বাস ত্যাগ ও শ্বাস গ্রহণের অনুশীলন করতে থাকুন।
৫. এরপর যতক্ষণ না
শ্রান্তি দূর হয়,
ততক্ষণ
শবাসনে
বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১. ফুসফুসের ব্যায়াম
হয় এবং সর্দি-কাশির উপশম হয়।
২. ইনফ্লুয়েঞ্জা,
নিউমোনিয়া,
যক্ষ্মা রোগের ক্ষেত্রে
প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। তবে এই জাতীয় রোগ থাকা অবস্থায় এই প্রাণায়াম করবেন
না।
৩. মুখের গন্ধ দূর হয়।
প্রণালী-৪
১. মেরুদণ্ড সোজা
করে
পদ্মাসন
বা কোন সহজ আসনে উপবেশন করুন।
২. এবার নাকের উভয়
রন্ধ্র দিয়ে বুক ভরে শ্বাস টেনে নিন।
৩. শ্বাসগ্রহণ শেষে মুখের পেশী ও
স্নায়ুর উপর জোর দিয়ে হাঁ করে মুখ দিয়ে সজোরে শ্বাস ত্যাগ বা রেচক করুন।
এভাবে নিজ নিজ সামর্থ মতো ২ থেকে ৫ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
৪. এরপর যতক্ষণ না
শ্রান্তি দূর হয়,
ততক্ষণ
শবাসনে
বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১. কণ্ঠমাধুর্য্য
বৃদ্ধি করে। সঙ্গীত শিল্পীদের জন্য এই প্রাণায়াম অত্যন্ত উপকারী
২. ইনফ্লুয়েঞ্জা,
নিউমোনিয়া,
যক্ষ্মা রোগের ক্ষেত্রে
প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। তবে এই জাতীয় রোগ থাকা অবস্থায় এই প্রাণায়াম করবেন
না।
৩. মুখের গন্ধ দূর হয়।
প্রণালী-৫
১. মেরুদণ্ড সোজা
করে
পদ্মাসন
বা কোন সহজ আসনে উপবেশন করুন।
২. এবার ধীরে ধীরে
শ্বাস ত্যাগ করতে করতে পেট বা
উদর বায়ুশূন্য করুন।
৩.
উদর ও তলপেট বা নাভিপ্রদেশ মেরুদণ্ডের টানুন
(আকুঞ্চন ক্রিয়া) এবং ধীরে ধীরে নাকের উভয় রন্ধ্র দিয়ে বাতাস ত্যাগ করুন।
৪. এরপর শ্বাস গ্রহণ
করতে থাকুন। এই সময় আকুঞ্চন
ক্রিয়াকে শিথিল করে দিতে হবে।
৫. ভাবে প্রাণায়ামটি ২ থেকে ৫
মিনিট অভ্যাস করুন।
৬.
এরপর যতক্ষণ না শ্রান্তি দূর হয়,
ততক্ষণ
শবাসনে
বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১. হজমশক্তি বৃদ্ধি
পায়।
২.
উদর ও নাভিপ্রদেশের স্নায়ু ও পেশীগুলোকে সতেজ
করে এবং অপ্রয়োজনীয় চর্বি জমতে দেয় না।
৩. প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয়, অগ্ন্যাশয়, যৌনগ্রন্থি প্রভৃতি সুস্থ ও সক্রিয় রাখে।
৪. হাঁপানী রোগীদের জন্যেও তা বিশেষ উপকারী।
প্রণালী-৬
১. মেরুদণ্ড সোজা
করে
পদ্মাসন
বা কোন সহজ আসনে উপবেশন করুন।
২.
এবার দমভরে পুরক বা শ্বাস নিতে থাকুন।
৩.
একই সাথে তলপেট বা নাভিপ্রদেশ আকুঞ্চন করে
ভেতরের দিকে টেনে নিন।
৪.
শ্বাস নেয়া শেষ হলে নাক বন্ধ করে মুখে ফু দিয়ে
বাতাস
ধীরে ধীরে বের করে দিন। এই সময় আকুঞ্চন ধীরে ধীরে করুন।
৫. ভাবে প্রাণায়ামটি ২ থেকে ৫
মিনিট অভ্যাস করুন।
৬.
এরপর যতক্ষণ না শ্রান্তি দূর হয়,
ততক্ষণ
শবাসনে
বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১. হজমশক্তি বৃদ্ধি
পায় এবং পেটের অধিকাংশ রোগ দূর হয়।
২.
পেট ও তলপেটের মাংসপেশী দৃঢ করে এবং এ অঞ্চলের
স্নায়ুজাল সক্রিয় রাখে।
৩. প্লীহা, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, মূত্রাশয় ও যৌনগ্রন্থি সুস্থ ও সক্রিয় রাখে।
৪. রাত্রে যাদের ভালো ঘুম হয় না, নাক-মুখ দিয়ে গরম হাওয়া বের হয়, তাদের জন্য এই
প্রাণায়ামটি অত্যন্ত উপকারী।
প্রণালী-৭
১. মেরুদণ্ড সোজা
করে দণ্ডায়মান অবস্থায় স্থির হোন।
২.
বাঁ হাত বাঁ বুকের উপর
এবং ডান হাত ডান বুকের উপর রাখুন। এই সময় কনুই দুটোকে পেছনদিকে যথাসাধ্য ভেঙে
রাখুন।
৩.
উভয় নাক দিয়ে ধীরে
ধীরে ও গভীরভাবে শ্বাস নিতে থাকুন।
যতক্ষণ শ্বাস নেয়া
অব্যাহত থাকবে ততক্ষণ বুক ও হাতের পেশী ও স্নায়ু সটান থাকবে।
৪.
শ্বাস নেয়া শেষ হলে নাক বন্ধ করে মুখে ফু দিয়ে
বাতাস
ধীরে ধীরে বের করে দিন।
৫. ভাবে প্রাণায়ামটি ২ থেকে ৫
মিনিট অভ্যাস করুন।
৬.
এরপর যতক্ষণ না শ্রান্তি দূর হয়,
ততক্ষণ
শবাসনে
বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১.
ফুসফুস ও শ্বাসক্রিয়া
সতেজ ও সক্রিয় হওয়ার সাথে সাথে বুকের গড়ন সুঠাম ও সুন্দর করে।
২.
বয়েস অনুযায়ী যাদের
বুক সরু বা অপরিণত, তাদের জন্য প্রাণায়ামটি খুবই উপকারী।
প্রণালী-৮
১. মেরুদণ্ড সোজা
করে দণ্ডায়মান অবস্থায় স্থির হোন।
২.
এখন হাত দুটো কাঁধ
বরাবর সামনে উপরে তুলুন।
৩.
এবার ধীরে ধীরে শ্বাস
ছাড়তে ছাড়তে কিছুটা নত হয়ে দু’হাত দিয়ে দু’ হাঁটু স্পর্শ করার চেষ্টা করুন।
প্রক্রিয়াটা
এমনভাবে হবে যেন শ্বাসত্যাগও শেষ হবে আর হাতও হাঁটু স্পর্শ করবে।
৪.
এবার শ্বাস নিতে নিতে
সোজা হয়ে দাঁড়ান যেন শ্বাস নেয়াও শেষ হয় এবং সেই সঙ্গে দেহটাও সোজা হয়।
৫. ভাবে প্রাণায়ামটি ২ থেকে ৫
মিনিট অভ্যাস করুন।
৬.
এরপর যতক্ষণ না শ্রান্তি দূর হয়,
ততক্ষণ
শবাসনে
বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১.
ফুসফুস ও শ্বাসক্রিয়া
সতেজ হয়ে।
২. ফুসফুসের বায়ু ধারণ
ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
৩.
যক্ষ্মারোগ প্রতিরোধ করে।
প্রণালী-৯
১.
পা দুটো জোড়া রেখে,
কোনো সমতল স্থানে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন।
২.
এখন হাত দুটো পাঁজরের
দু’পাশে লম্বা করে রাখুন।
৩.
এবার ধীরে ধীরে শ্বাস
নিতে নিতে হাত দুটো উপরদিকে তুলুন এবং মাথার পেছনদিকে নিয়ে লম্বা করে মাটিতে রাখুন।
প্রক্রিয়াটি এমনভাবে হবে যেন শ্বাস নেয়াও শেষ হবে আর হাত দুটোও মাথার পেছনে মাটিতে
লাগবে।
৪.
এবার শ্বাস ছাড়তে
ছাড়তে হাত দুটো পূর্বাবস্থায় পাঁজরের দু’পাশে মাটিতে রাখুন যেন শ্বাসত্যাগও শেষ হয়
এবং হাত দুটোও পূর্বাবস্থায় মাটিতে আসে।
৫. এবার পা
দুটো দিয়ে এই অভ্যাস করুন। প্রথমে পুরক বা শ্বাস নিতে নিতে ডান পায়ের হাঁটু না ভেঙে
সোজা অবস্থায় রেখে যতদুর সম্ভব উপরে তুলুন। এরপর রেচক বা শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা’টিকে
পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসুন।
৬. এবার একই পদ্ধতিতে বাম পায়ের অভ্যাস করুন।
৭. ভাবে প্রাণায়ামটি ২ থেকে ৫
মিনিট অভ্যাস করুন।
৮.
এরপর যতক্ষণ না শ্রান্তি দূর হয়,
ততক্ষণ
শবাসনে
বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১.
ফুসফুস ও শ্বাসক্রিয়া
সতেজ হয়ে।
২. ফুসফুসের বায়ু ধারণ
ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
৩. হাত,
পা ও তলপেটের পেশী দৃঢ় ও সবল করে এবং এসব অঞ্চলের স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে।
৪. সর্দি কাশি
নিরাময় করে।
প্রণালী-১০
১.
শবাসনে
শুয়ে দেহটাকে শিথিল ও স্থির করুন।
২.
হাত
দুটো পরস্পর অঙ্গুলিবদ্ধ করে নাভির উপর রাখুন।
৩.
উভয়
নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দমভরে পুরক বা শ্বাস গ্রহণ করুন এবং
ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করুন।
৪. ভাবনা সংযোগ করুন। এর বিষয়টি হবে―
যেন, বায়ুস্থ প্রাণশক্তি দেহের মধ্যে প্রবেশ করে
অগ্ন্যাশয়ে জমা হচ্ছে এবং অগ্ন্যাশয়ে সঞ্চিত প্রাণ-শক্তি
দেহের প্রতিটা রন্ধ্র, গ্রন্থি, স্নায়ু ও শিরা-উপশিরায়
ছড়িয়ে পড়ছে। শ্বাস ত্যাগকালে মনে করতে হবে, দেহের সঞ্চিত
ক্ষতিকারক সকলকিছ বায়ুর সাথে বের হয়ে যাচ্ছে।
৫. ভাবে
প্রাণায়ামটি ২ থেকে ৫ মিনিট অভ্যাস করুন।
৬.
এরপর যতক্ষণ না শ্রান্তি দূর হয়,
ততক্ষণ
শবাসনে
বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা
১.
নিয়মিত এ প্রাণায়ামের অভ্যাস নীরোগ দেহ
২.
প্রবল ইচ্ছাশক্তি-চিন্তাশক্তি সম্পন্ন বলিষ্ঠ মন গঠনে
বিশেষভাবে সহায়তা করে।
৩.
দেহ
ও মনকে প্রশান্তিময় করে তোলে।
সূত্র :
যোগাসনে রোগ আরোগ্য। ডঃ রমেন মজুমদার
রোগারোগ্যে যোগব্যায়াম। কানাইলাল সাহা
যোগ সন্দর্শন। ডাঃ দিব্যসুন্দর দাস
যোগ ব্যায়াম। সবিতা মল্লিক