প্রাণায়াম
ইংরেজি :
Pranayama
প্রাণ-আ-যম (সংযত করা)+ ঘঞ্ করণবাচ্য। পতঞ্জলি কর্তৃক প্রণীত
যোগশাস্ত্রে বর্ণিত
আটটি অঙ্গের মধ্যে চতুর্থ অঙ্গ। অপরদিকে হটযোগের সাধনার জন্য সাতটি সাধনবিধির
একটি।
প্রাণায়াম মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ। প্রাণের আয়াম অর্থাৎ প্রাণের দীর্ঘতাই
প্রাণায়াম। এখানে প্রাণ শব্দটিকে বায়ু শব্দের সমার্থ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সঠিক
নিয়মে এই শ্বাস গ্রহণ, ধারণ এবং বর্জন বা ত্যাগকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রাণায়াম
করা হয়। যোগশাস্ত্রে নাকের সাহায্যে ফুসফুসে
বাতাস পুরণ করে সংরক্ষণ এবং ফুসফুস থেকে বাতাস বের দেওয়ার বিশেষ নিয়মবদ্ধ প্রক্রিয়ার
দ্বারা প্রাণায়াম করা হয়। শরীরের ভিতরে
বায়ুর প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণের প্রক্রিয়ার দ্বারা,
বায়ুর বিস্তার ঘটে,
তার সংযম করার
প্রক্রিয়াই হলো প্রাণায়াম। এই সংযমের প্রক্রিয়া পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হয়। এই চারটি
ধাপ হলো—
পূরক,
অন্তর কুম্ভক,
রেচক ও বাহ্য কুম্ভক।
পূরক : বাতাস
দ্বারা ফুসফুস পূরণ করণ।
অন্তর কুম্ভক :
বাতাস দ্বারা ফুসফুস পূরণ হওয়ার পর,
কিছুকাল তা ধারণ করা।
রেচক : ফুসফুস
থেকে সম্পূর্ণ বাতাস খালিকরণ।
বাহ্য কুম্ভক :
ফুসফুস বায়ুশূন্য করার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা।
প্রাণায়ামে পর্যাক্রমে এই চারটি ধাপ সম্পন্ন করা হয়।
আবার প্রাণ ও অপান-বায়ুর
পরস্পর সংযোগকেও প্রাণায়াম বলা হয়ে থাকে। প্রাণায়াম প্রক্রিয়ায় শ্বাস গ্রহণ করতে
সাধারণত যে সময় নেয়া হয়, শ্বাস ত্যাগ করতে প্রায় তার দ্বিগুণ সময় নিতে হয়। এ বিষয়ে
নানা নানা মত আছে। অনেকে বলেন পূরক, কুম্ভক ও রেচকের অনুপাত ২ : ১ : ২ হওয়া উচিৎ।
এক্ষেত্রে কুম্ভকের সময়কালকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। তা হতে হবে আয়াসহীন
ও সুখকর। তবেই শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। অর্থাৎ পূরক, কুম্ভক, রেচক যত সময় নিয়েই করা
যাক না কেন, আয়াসহীন হওয়া চাই। শরীরের ক্ষতি তখনই হয়, যখন জোর করে ফুসফুসের শক্তির
বিচার না করে শ্বাস-ব্যায়াম করা হয়। তাই প্রাণায়াম অভ্যাসের সময়কাল আপেক্ষিক এবং
ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রাণায়াম ততক্ষণ করা যেতে পারে, যতক্ষণ ফুসফুস
ক্লান্ত না হয়।
প্রাণায়াম অভ্যাসের
জন্য চারটি বিশেষ দিকে নজর দিতে হয়। এই দিক চারটি হলো—
১. উপযুক্ত স্থান
২. বিহিত কাল
৩ পরিমিত আহার
৪. নাড়ীশুদ্ধি।
এই বিচারে যে বিষয়গুলো
মান্য করা উচিৎ, তা হলো—
প্রাণায়ামের উদ্দেশ্য উপকারিতা
দেহের প্রাণশক্তি বৃদ্ধি করে এবং জরা, ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর হাত থেকে দেহকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্য প্রাণায়াম করা হয়।
১. ফুসফুসের ব্যায়ামের ক্ষেত্রে প্রাণায়াম অত্যন্ত ফলপ্রসু।
২. প্রাণায়ামের ফলে প্রায় কুড়ি প্রকার কফ থেকে অব্যাহতি পাওয়া
যায়।
৩. প্রাণায়াম স্নায়ুকে অত্যন্ত কার্যকরী ও সবল করে থাকে।
যোগশাস্ত্রে নানাভাবে প্রাণায়াম করার বিধান আছে। প্রাণায়ম প্রক্রিয়া অনুসারে যে
তালিকা পাওয়া যায়, সেগুলো হলো—
যোগী এবং গৃহীদের বিচারে
প্রাণায়ামকে
চারভাগে ভাগ করা হয়। যেমনো—
১. সহজ প্রাণায়াম : গৃহীদের জন্য
২, লঘু প্রাণায়াম : গৃহীদের জন্য
৩. বৈদিক প্রাণায়াম
: যোগে অভিজ্ঞ এমন গৃহীদের জন্য।
৪. রাজযোগ প্রাণায়াম: অভিজ্ঞ যোগী ও সাধকদের জন্য।
সূত্র :
যোগাসনে রোগ আরোগ্য। ডঃ রমেন মজুমদার
রোগারোগ্যে যোগব্যায়াম। কানাইলাল সাহা
যোগ সন্দর্শন। ডাঃ দিব্যসুন্দর দাস
যোগ ব্যায়াম। সবিতা মল্লিক