উজ্জায়ী
প্রাণায়াম
যোগশাস্ত্রে বর্ণিত
একটি প্রাণায়াম বিশেষ।
ফুসফুস এবং এর সাথে সম্পর্কিত
শারীরীক ক্রিয়াকে স্বাভাবিককরণে এর প্রয়োগ-বিধান রয়েছে।
পদ্ধতি
১. পদ্মাসন, সুখাসন বা এই জাতীয় কোন সহজ আসনে এই প্রাণায়াম করা হয়ে থাকে। এই কারণে, প্রথমে এই দুটি আসনের যে কোন একটি বেছে নিন।
২.
এরপর,
পিঠ সোজা ও শক্ত করুন
এবং মাথা নিচু করে কণ্ঠকূপে চিবুক ঠেকান।
এরপর হাত দুটো সামনের
দিকে প্রসারিত করুন।
৩. এবার হাতের তালু
উপরের দিকে রেখে দুই হাটুর উপর স্থাপন করুন।
তারপর হাতের বুড়ো
আঙুলের মাথায় ও তর্জনীর মাথা স্পর্শ করুন এবং অন্যান্য আঙুলগুলো সামনের দিকে
প্রসারিত করে দিন।
ফলে
জ্ঞান
নামক মুদ্রা তৈরি হবে।
৪. এবার চোখ বন্ধ করুন। একটি লম্বা শ্বাস গ্রহণ করে জোর করে সম্পূর্ণ নিশ্বাস ত্যাগ করুন। এরপর মুখ বন্ধ করে খুব ধীরে ধীরে বুকের ভিতর বাতাস টেনে নেওয়া শুরু করুন। এমন ভাবে বাতাস টেনে নিতে হবে যেন, একটু সাসা শব্দ করে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে বাতাস নেবার সময় যেন, পেট ফুলে না উঠে। এইভাবে বাতাস নেওয়াকে বলা হবে পূরক।
৫. এবার পুরো নাভির নিচ থেকে পেটের অংশ মেরুদণ্ডের দিকে টেনে আনার চেষ্টা করুন। পুরো বাতাস গ্রহণ এবং পেটকে মেরুদণ্ডের দিকে টেনে রাখা অবস্থায় দু সেকেণ্ড বাতাস ধরে রাখুন। এইভাবে বাতাস ধরে রাখাকে বলা হয় অন্তর কুম্ভক।
৬. এরপর চাপ রেখেই ধীরে ধীরে বাতাস ত্যাগ করতে থাকুন। ফলে টাকরায় চাপা হা-ধ্বনি হতে থাকবে। এই ধ্বনি অবশ্য নিজেই ভালোভাবে শুনতে পাবেন। এইভাবে বাতাস ত্যাগ করাকে বলা হবে রেচক।
৭. পুরো রেচক সম্পন্ন হওয়ার পর, অর্থাৎ ফুসফুস থেকে পুরো বাতাস বের করে দিয়ে, ১ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। এই অপেক্ষাকালকে বলা হয় বাহ্য কুম্ভক।
৮. এইভাবে পূরক, কুম্ভক, রেচক, বাহ্য মিলেই সৃষ্টি হবে উজ্জায়ী প্রাণায়াম। এই নিয়মে পুরো দুই মিনিট প্রাণায়াম করুন। এরপর দুই মিনিট শবাসনে বিশ্রাম নিন।
প্রথম প্রথম দুই মিনিট এই প্রাণায়াম করলেই শ্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু কিছুদিন এটি অভ্যাস করলেই দেখবেন, আর শ্রান্তি লাগছে না। তখন এই প্রাণায়াম ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত করতে পারবেন।
উপকারিতা
১. ফুসফুসের বাতাস গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কণ্ঠসঙ্গীতের শিল্পীরা শ্বাস বৃদ্ধির জন্য এই প্রাণায়াম করতে পারেন।
২. শ্লেষ্মা দূর হয়।
৩. সর্দিকাশি, হাঁপানি, স্নায়বিক দুর্বলতা, অনিদ্রা দূর হয়।
৪. পিছনে হেলান দিয়ে এই প্রাণায়াম করলে, রক্তচাপ হ্রাস পায় এবং করোনারি ধমনীর রোগে উপকার হয়।
সূত্র :
যোগাসনে রোগ আরোগ্য। ডঃ রমেন মজুমদার
রোগারোগ্যে যোগব্যায়াম। কানাইলাল সাহা
যোগ সন্দর্শন। ডাঃ দিব্যসুন্দর দাস
যোগ ব্যায়াম। সবিতা মল্লিক