কোহিনুর
ইংরেজি :
kohinoor
 

নতুন করে কাটার পরে কোহিনুর

একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক হীরক খণ্ড। ফারসি কোহ-ই-নুর অর্থ হলো- পাহাড়ের আলো। কথিত আছে এই হীরক খণ্ডের নামকরণ করেছিলেন নাদির শাহ।

কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে এই হীরক খণ্ড গোলকুণ্ডার খনিতে পাওয়া গিয়েছিল। অন্য মতে এটি পাওয়া গিয়েছিল মহীশূরের কোলারের খনিতে। কথিত আছে- এটি মালবের রাজার সম্পত্তি ছিল। পরে আলাউদ্দীন খিলজি মালব অধিকার করলে, কোহিনূর তাঁর অধিকারে আসে। এই সময় এর ওজন ছিল ৭৮৭ ক্যারেট। এরপর হাত বদল হয়ে গোয়লিয়রের রাজা বিক্রমাদিত্যের হস্তগত হয়। ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে  গোয়লিয়রের রাজা মোগল সম্রাট
বাবরকে প্রদান করেন। পরে বাবর তাঁর পুত্র হুমায়ুনকে এই হীরকখণ্ডটি উপহার দেন। সে সময়ে এই হীরকটি সাধারণভাবে 'বাবরের হীরক' নামে পরিচিতি লাভ করে। উত্তরাধিকার সূত্রে সম্রাট শাহজাহান এই রত্নটির অধিকার লাভ করেন এবং ‌তিনি তাঁর ময়ূর-সিংহাসনে তা স্থাপন করেন। শাহজাহানকে বন্দী করে আওরঙ্গজেব সিংহাসন অধিকার করার পর, কোহিনুর আওরঙ্গজেবের হস্তগত হয়। এরপর তিনি কোহিনুর  লাহোরে নিয়ে আসেন এবং তিনি তাঁর ব্যক্তিগত বাদশাহী মসজিদে এটাকে স্থাপন করেন।

১৭৩৯ খ্রিষ্টাব্দে নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করে দিল্লী অধিকার করেন। তিনি লাহোরসহ দিল্লী আগ্রা লুট করে ইরানে নিয়ে যান। এই সময় অন্যান্য সামগ্রীর সাথে নাদির শাহ এই হীরকটির মালিকানা লাভ করেন। কথিত আছে নাদির শাহ এর নামকরণ করেন কোহিনুর। ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দে আততায়ীর হাতে নাদির শাহ নিহত হন। এই সময় এই হীরকখণ্ডের মালিক হন তাঁর পুত্র মালিক শাহরুখ। পরে শাহরুখ এটি নজরানা হিসেবে দেন আফগানিস্থানের আমির আহম্মদশাহ দুরারানি-কে দেন। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্ আহম্মদশাহ দুরারানির মৃত্যুর পর কোহিনুরের মালিক হন, তাঁর পুত্র শাহ শুজা। রাজত্বের অধিকারের দ্বন্দ্বে টিকতে না পেরে তিনি কাবুল থেকে পালিয়ে ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলের কেশরী রণজিত্ সিংহের আশ্রয় নেন। এই সময় কোহিনুর শাহ শুজার কাছেই ছিল। রণজিৎ সিং শাহ সুজাকে জায়গীর প্রদান করেন, বিনিময়ে তিনি রণজিৎ সিং-কে কোহিনূর প্রদান করেন। ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে রণজিৎ সিং তাঁর মৃত্যুশয্যায় কোহিনুরটি উড়িষ্যার জগন্নাথ মন্দিরে নামে উৎসর্গ করেন। রণজিৎ সিং-এর মৃত্যুর পর হীরকটির অধিকার পায় রানী ঝিন্দন ও তাঁর নাবালক পুত্র দলিপ সিং।

 

রানী আলেক্সান্দ্রার মাথায় কোহিনুর খচিত মুকুট

১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ গভর্নর জেনারেল ডালহৌসী দলিপের কোষাগার দখল করে এই রত্নটি অধিকার করেন। ডালহৌসী রনজিৎ সিং-এর শেষ ইচ্ছা পূরণ না করে কিছুদিন এই হীরকটি নিজের তত্ত্বাবধানে রাখেন। ব্রিটিশরা বিভিন্নভাবে এই রাজ পরিবারকে অসুবিধার ভিতরে ফেলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৩ বৎসর বয়সে দলিপ সিংহ ইংল্যান্ডে যান এবং ইংল্যাণ্ডের রানী ভিক্টোরিয়াকে এই হীরকটি উপহার দিয়ে সাময়িকভাবে স্বস্তি লাভ করেন।

 

এ সময় এই কোহিনূরের ওজন ছিল ৩২০ রতি (প্রায় ১৮৬ ক্যারেট)। লণ্ডনের এ্যামসটারডামের শিল্পীরা মণিটিকে কেটে প্রায় ১০৬ ক্যারেটে পরিণত করে। রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর এই কোহিনুর স্থাপন করে নতুন মুকুট তৈরি করা হয়। এই নতুন মুকুট প্রথম পরিধান করেন রানী আলেক্সান্দ্রা। এই সূত্রে এই মুকুট পরবর্তী সময়ে পরেছেন রানী মেরি এবং রানী এলিজাবেথ।

১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে রানী এলিজাবেথ যখন ভারত সফরে আসেন, তখন ভারতের বিভিন্ন মহল থেকে এই হীরকটি ভারতে ফিরিয়ে দেওয়া দাবি তোলেন। কারণ ১৩ বৎসরের বালক রাজার উপহারকে আইনের চোখে বৈধ বিবেচনা করা হয় না। সর্বোপরি এই উপহার দেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশদের সৃষ্ট চাপে।


সূত্র :
বাংলা বিশ্বকোষ। দ্বিতীয় খণ্ড। নওরোজ কিতাবিস্তান। ডিসেম্বর ১৯৭৫।
http://en.wikipedia.org/wiki/Koh-i-Noor