স্ত্রীবৃন্দ আয়েশাহ সুলতান বেগম
বিবি মুবারিকা ইউসুফযায়
দিলদার বেগম
গুলনার আগাচেহ
গুলরুখ বেগম
মহিম বেগম
মাসুমাহ বেগম
নারগুল আগাচেহ
সাদিয়া আফাক
সন্তানাদি হুমায়ুন, পুত্র
কামরান মির্জা, পুত্র
আসকারি মির্জা, পুত্র
হিন্দাল মির্জা, পুত্র
বারবুল মির্জা, পুত্র
ফারুক মির্জা, পুত্র
শাহরুখ মির্জা, পুত্র
সুলতান আহমদ মির্জা, পুত্র
আলোয়ার মির্জা, পুত্র
গুলবদন বেগম, কন্যা
মেহেরজান বেগম, কন্যা
ঈশান বেগম, কন্যা
মাসুমা বেগম, কন্যা
গুলগাদার বেগম, কন্যা
গুলরঙ বেগম, কন্যা
গুলচেহারা বেগম, কন্যা

বাবর, মোগল সম্রাট
১৫২৬-১৫৩১ খ্রিষ্টাব্দ
চাঘাতাই/ফার্সি :  ﻇﻬﻴﺮ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻇﻬﻴﺮ ﺍﻟﺪﻳﻦ محمد بابر
পুরো নাম: জহির উদ্-দিন মুহাম্মদ জালাল উদ্‌-দিন বাবর
ভারতের মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।

বংশের পূর্বপুরুষ হিসেবে, বাবরের আগে তৈমুর লং ১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত আক্রমণ করেন এবং উত্তর পশ্চিম ভারত তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এই দিক থেকে তৈমুর লংই ভারতের প্রথম মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু  তৈমুর লং বংশ পরম্পরায় ভারতের রাজতন্ত্র প্রতিওষ্ঠা করতে সক্ষম হন। এই কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল বাবরের মাধ্যমে। তাই বাবরকেই মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল (সোমবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ৯৩৩ বঙ্গাব্দ) রুশ-তুর্কিস্থানের অন্তর্গত ফাফারগানায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবরের পিতা অমর-শেখ মির্জা, রগানা নামক স্থানের অধিপতি ছিলেন। মায়ের নাম কুতলুক নিগার খানাম।

১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে (৯৪৫ বঙ্গাব্দ), মাত্র
বার বৎসর বয়সে পিতৃহীন হয়ে বাবর ফারগানার সিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রথম দিকে তাঁর জ্ঞাতিগোষ্ঠীর লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। কিন্তু তাঁর কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাহায্যে সেই প্রতিকুল অবস্থাকে নিজের আয়ত্বে আনতে সক্ষম হন। শৈশব থেকে তাঁর ইচ্ছা ছিল, বড় হয়ে তিনি
তৈমুর লং-এর রাজধানী সমরকন্দ দখল করবেন। এই উদ্দেশ্য তিনি তাঁর সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করেন। ১৪৯৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সমরকন্দের শাসকদের ভিতর আত্মকলহ সৃষ্টি হলে, তিনি সমরকন্দ দখল করে নেন। এই সময় তাঁর অনুপস্থিতিতে ফারগানায় বিদ্রোহ দেখা দিলে, তিনি ফারগানার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এই সুযোগে সমরকন্দের উজবেগ নেতা সাহেবানী খাঁ সমরকন্দ দখল করেন। এই সূত্রে উভয়ের ভিতর যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়, তার জের ধরে ১৫০৩ খ্রিষ্টাব্দে আর্চিয়ানের যুদ্ধে উভয়ের ভিতর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বাবর পরাজিত হলে, সমরকন্দ ও ফারগানা উভয়ই তাঁর হাত ছাড়া হয়ে যায়। রাজ্য হারা হয়ে তিনি যখন দিশাহারা, তখন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তাঁকে আফগানিস্তান আক্রমণে উদ্বুদ্ধ করে। ১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সামান্য কিছু সৈন্য নিয়ে আফগানিস্তান আক্রমণ করে দখল করে নেন।

এর ভিতর সাহেবানীর সাথে পারশ্যের অধিপতি ইসমাইল সাহাবীর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে সাহেবানী পরাজিত ও নিহত হন। এই সম কৌশলী বাবর ইসমাইল সাহাবীর সাথে মিত্রতা গড়ে তোলেন এবং তাঁর সহায়তায় তিনি আবার সমরকন্দ দখল করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে উজবেগ সৈন্যরা তাঁকে সমরকন্দ থেকে বিতারিত করেন। সেই সাথে তাঁর পৈত্রিক রাজ্য ফারগানা দখলের ইচ্ছাও বাতিল হয়ে যায়। এরপর তিনি ভারত জয়ের জন্য নতুন করে সেনাবাহিনী তৈরি করেন। ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাঙ্গুর ও সোয়ার্নের পথ ধরে ঝিলম নদীর পশ্চিম পারের ভেরাতে উপস্থিত হন। এখানে তিনি নিজেকে কিছুটা গুঁছিয়ে নিয়ে ১৫২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কান্দাহার জয় করেন। ১৫২৪ খ্রিষ্টাব্দে ঝিলম ও চেনাব নদী অতিক্রম করে, পাঞ্জাবের  দিলালপুর দখল করেন। এই সময় দিল্লীর শাসক ছিলেন ইব্রাহিম লোদী। তিনি দূত মারফত ইব্রাহিম লোদীর কাছে তুর্কিদের অধিকৃত অঞ্চলগুলোর দাবি করেন। ইব্রাহিম লোদী এই দাবি অস্বীকার করলে, তিনি পাঞ্জাবের ভেরা, খুসাব ও চেনাব নদীর অববাহিকা দখল করেন এবং কাবুল ফিরে যান।

১৫২৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দ্বিতীয় বার ভারত আক্রমণের জন্য কাবুল থেকে রওনা দেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে প্রথম বাধা দেন দৌলত খাঁ লোদী। এই যুদ্ধে দৌলত খাঁ পরাজিত হয়। এরপর পাণিপথ নামক স্থানে ইব্রাহিম লোদির সাথে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদি পরাজিত হন। এই জয়ের ফলে, দিল্লী ও আগ্রা বাবরের অধিকারে আসে।

এই যুদ্ধ জয়ের পর বাবর ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মেবারের রাণা সংগ্রাম সিংহ এবং পূর্ব-ভারতে আফগানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই সময় বাবরের সহযোদ্ধারা আফগানিস্তানে ফিরে যাওয়ার সংকল্প করে। বাবর তাদেরকে বুঝিয়ে সিংহ এবং পূর্ব-ভারতে আফগানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাজি করান। হুমায়ুন দ্রুততার সাথে কাল্‌পি, বায়না এবং জৌনপুর দখল করেন। বিহারের আফগানরা বাবরের কাছে সাময়িকভাবে নতি স্বীকার করেন। এই সময় বাবর অনধিকৃত অঞ্চলে তাঁর কতিপয় আমির পাঠিয়ে আফগানদের দমন করেন। ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে মেবারের রাণার বিরুদ্ধে বাবর যুদ্ধাভিযান চালান। ইব্রাহিম লোদির বিরুদ্ধে বাবরের যুদ্ধের সময়, রাণা সংগ্রাম সিংহ তাঁকে সাহায্য করবেন এমন কথা ছিল। কিন্তু সংগ্রাম সিংহের অভিযোগ ছিল, বাবর তাঁকে না জানিয়ে কাল্‌পি, বায়না দখল করেছেন। এই দ্বন্দ্বের সূত্রে খানুয়ার প্রান্তরে উভয় বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে রাণা সংগ্রাম সিংহ পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন এবং ১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে সংগ্রাম সিংহ মৃত্যুবরণ করেন। এরপর মেদেনী রাও এর নেতৃত্বে রাজপুতরা পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়। এরই ফলশ্রুতিতে বাবর চান্দেরি দুর্গ অবরোধ করেন। এই যুদ্ধেও রাজপুতরা পরাজিত হন।

উত্তর-পশ্চিম ভারতে মোগলদের ক্ষমতা ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধির কারণে বাংলা সুলতান নসরৎ শাহ শঙ্কিত ছিলেন। এই সময় তিনি মোগলদের দ্বারা বিতারিত আফগানদের নিয়ে তিনি একটি মোগলবিরোধী সংঘ গড়ে তোলেন। তিনি জৌনপুরের লোহানী বংশীয় সুলতান বাহার খাঁ লোহানী, বিহারের শের শাহ ও লোদী বংশের মাহমুদ খাঁর সাথে যুক্তি করে এই সংঘকে জোরদার করেন। এই সংঘ মোগলদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। বাবরের সেনাবাহিনী প্রথমে এলাহাবাদ, বারাণসী ও গাজীপুর দখল করেন। এরপর ১৫২৯ খ্রিষ্টাব্দে ঘর্ঘরা নদীর তীরে আফগান নেতা শের শাহের ও মাহমুদ শাহ্ -এর সাথে বাবরের বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে উভয় নেতা পরাজিত হন। এরপর নসরৎ শাহকে তাঁর আনুগত্যের দাবি করেন। নসরৎ শাহ এই দাবি না মেনে নানাভাবে বাবারকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবর তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে- বাংলার দিকে অগ্রসর হন। উভয় রাজশক্তির মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে নসরৎ শাহ পরাজিত হন। এরপর মৌখিকভাবে তিনি বাবরের আনুগত্য স্বীকার করেন।

১৫৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর সিংহাসনে বসেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র হুমায়ুন


সূত্র :
বাবর/ পিরিমকুল কাদিরভ

ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।