চান্দেরি দুর্গ
ভারতের মধ্য প্রদেশের অন্তর্গত অশোকনগরের বেতওয়া নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত একটি দুর্গ বিশেষ।

বিভিন্ন কারণে
প্রাচীন কাল থেকে চান্দেরি বেশ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মার্যাদা লাভ করেছিল। মহাভারতে এই স্থানটি শিশুপাল এই অঞ্চলের শাসক ছিলেন। মধ্যযুগে চান্দেরি ছিল মালওয়া এবং বুন্দেলখণ্ডের সীমান্তে। খ্রিষ্টীয় ১১ শতকে চান্দেরি ছিল মধ্যভারতের অন্যতম বাণিজ্যপথ। এই পথ ধরে গুজরাট, মালোয়া মেওয়ার, মধ্য প্রদেশ ও দাক্ষিণাত্যের বাণিজ্য যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল। ১০৩০ খ্রিষ্টাব্দে পারশ্যের পণ্ডিত আলবেরুনির রচনা থেকে এর নাম পাওয়া যায়।

চান্দেরি বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনা করে, এখানে একটি দুর্গ নির্মিত হয়েছিল বেশ আগেই। ১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সম্রাট চান্দেরি দুর্গ মোগল সম্রাট বাবর দখল করে নেন। এরপর এই দুর্গের সংস্কার করা হয়। দুর্গটি মূল শহর থেকে ৭১ মিটার উঁচুতে পাহাড়ের মাথায় তৈরি করা হয়েছিল। এর প্রধান ফটকের নাম 'খুনি দরজা'। দুর্গের দেওয়াল তৈরি করা হয়েছিল মুসলিম শাসনামলে। এর দক্ষিণ-পশ্চিমের ফটকটির নাম কাট্ট-খাট্টি।


১২৫১ খ্রিষ্টাব্দে
গিয়াসউদ্দিন বলবন তৎকালীন দিল্লির সুলতান নাসিরুদ্দিনের পক্ষে চান্দেরি করেছিলেন। ১৪৩৮ খ্রিষ্টাব্দে মালওয়ার সুলতান মাহমুদ খিলজি এই শহরটি দখল করে নেন। ১৫২০ খ্রিষ্টাব্দে মেবারের রানা সিংহ এই শহরটি অধিকার করে এবং মেদেনী রাইকে উপহার দেন।

১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে মেবারের রাণার বিরুদ্ধে বাবর যুদ্ধাভিযান চালান। ইব্রাহিম লোদির বিরুদ্ধে বাবরের যুদ্ধের সময়, রাণা সংগ্রাম সিংহ তাঁকে সাহায্য করবেন এমন কথা ছিল। কিন্তু সংগ্রাম সিংহের অভিযোগ ছিল, বাবর তাঁকে না জানিয়ে কাল্‌পি, বায়না দখল করেছেন। এই দ্বন্দ্বের সূত্রে খানুয়ার প্রান্তরে উভয় বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে রাণা সংগ্রাম সিংহ পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন এবং ১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে সংগ্রাম সিংহ মৃত্যুবরণ করেন। এরপর মেদেনী রাও এর নেতৃত্বে রাজপুতরা পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়। এরপর বাবর চান্দেরি দুর্গ অবরোধ করেন। এই যুদ্ধেও রাজপুতরা পরাজিত হন।  ফলে চান্দেরি দুর্গ মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে মোগল সম্রাট হুমায়ুন, 
শেরশাহ বিরুদ্ধে অভিযান চালান। এই যুদ্ধে হুমায়ুন পরাজিত হলে, চান্দেরি শেরশাহ অধিকারে আসে। শেরশাহর মৃত্যুর পর, পুনরায় দখল করেছিলেন সম্রাট আকবর। মূলত আকবর চান্দেরিকে একটি বিশেষ মর্যাদায় নিয়ে আসেন। তিনি সুবাহ মালাওয়ার'র প্রাশাসনিক শহর গড়ে তোলেন। ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে চান্দেরি বুন্দেল রাজপুতদের অধিকারে চলে যায়। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে দেবী সিংহ বুন্দেলা এখানে প্রশাসক হিসেবে গভর্নর পদ তৈরি করেন। ১৮১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দেবী সিংহের বংশধরদের অধিকারে থেকে যায়। ১৮১১ খ্রিষ্টাব্দে গোয়ালিয়রের শাসক দৌলাত রায় সিন্ধিয়ার পক্ষে জিন বাপ্তিস্তে ফিলোস, চান্দেরিকে তার রাজ্যের অংশ করে নেন। ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দে চান্দেরি দুর্গ-সহ পুরো প্রশাসনিক এলাকা ব্রিটিশরা অধিকার করে। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের সময় চান্দেরি বিদ্রোহীদের হাতে চলে যায়। ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সেনাপতি স্যার হগ রোজ চান্দেরি পুনরায় দখল করেন। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়াসদের অধিকারে আসে। পরে গোয়ালিয়র রাজ্যের ইসাগড় জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে গোয়ালিয়ার মধ্য ভারতের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে অঞ্চলটি মধ্যপ্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়।


সূত্র: