আজিজুর রহমান মল্লিক, অধ্যাপক
(১৯১৮-১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ)
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, শিক্ষাবিদ। এ আর মল্লিক নামেই তিনি বিশেষ পরিচিত ছিলেন।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা জেলার ধামরাই থানার রাজাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে মানিকগঞ্জ মডেল হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন ।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ সম্মান পাশ করেন।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে এমএ পাস করেন।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে
প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে মতের মিল না হওয়ায় তিনি চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে চলে যান রাজশাহী সরকারী কলেজে।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে পিএইচডি ডিগ্রী করার জন্য বিলেত চলে যান। মাত্র ১ বছর ৮ মাসে তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে আসেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
এই সময় তিনি বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের কিউরেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালকন করেন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ২৯ আগষ্ট পাকিস্তানের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি
আয়ুব খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
করেন। এরপর ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প-পরিচালক হিসেবে
দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়
এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মার্চ তাঁর সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। ২৩ মার্চ তাঁর সভাপতিত্বে চট্টগ্রামের প্যারেড গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভাতেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
২৪শে মার্চ স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনে প্রাক্তন ছাত্র সমিতির
আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে যে বিশাল গণসঙ্গীতের আবোজন করা হয়েছিল,
তাঁর প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন তিনি। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তিনি
আত্মগোপন করে থাকেন। সম্ভবত এপ্রিল মাসের ১৫-২০ তারিখের মধ্যে তিনি রামগড় হয়ে তিনি
আগরতলা চলে যান। পরে তিনি তাজউদ্দিনের ডাকে আগরতলা থেকে কলকাতায় যান। এরপর থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারত,
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে প্রচারণা চালান। বিশেষ করে তিনি মাত্র ৩৬ দিনে আমেরিকার হার্ভার্ড, ইয়াল, বস্টোন, পেনসিলভেনিয়া, স্ট্যানফোর্ড, নিউইয়র্ক, কলম্বিয়া, বার্কালি, লংবিচ, শিকাগো, বাফেলো, নর্থ ক্যারোলাইনা, টেক্সাস সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে
বক্তৃতা ও বিবৃতির মাধ্যমে, বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয়
ককর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন ।
যুদ্ধের সময়
ভারতের
কলকাতায়
বাংলাদেশ থেকে
আশ্রয় গ্রহণকারী বুদ্ধিজীবী, শিল্পী এবং সাহিত্যিকদের নিয়ে 'লিবারেশন কাউন্সিল
অব ইন্টেলিজেনসিয়া নামের একটি সংস্থা গড়ে তোলেন । উল্লেখ্য এই সংগঠনের
সম্পাদক ছিলেন জহির রায়হান। আর আজিজুর রহমান ছিলেন সভাপতি ।
এই সংগঠনের শিল্পীদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
একই সময় কলকাতায় গঠিত হলে 'বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি', তিনি এই সংগঠনেরও সভাপতি
হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে
ভারতে
বাংলাদেশের প্রথম হাই কমিশনার
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ অক্টোবর তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫
খ্রিষ্টাব্দে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত
বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা সচিব এবং বাংলাদেশের
অর্থমন্ত্রী। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ
ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান, বাংলা একাডেমির ফেলো, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির সভাপতি
এবং এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।