অঙ্গদ
১৫০৪-১৫৫২ খ্রিষ্টাব্দ
শিখ ধর্মের দ্বিতীয় ধর্মগুরু।
গুরুনানকের অত্যন্ত প্রিয় ও বিশ্বাসভাজন ছিলেন।
১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ পাঞ্জাবের মাত্তে দি সরাই গ্রামে (অধুনা ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের মুক্তসরের কাছে সরাই নাগা গ্রাম)
জন্মগ্রহণ করেন। হিন্দু খাতরি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর
পিতা ফেরু মল ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাঁর মায়ের নাম ছিল রামো। তাঁর পারিবারিক নাম
ছিল- ভাই লহনা। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন হিন্দু ধর্মের শিক্ষক
এবং দুর্গা দেবীর পূজারী।
১৫২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তিনি খিবি নামক খাতরি বালিকার সাথে বিয়ে
হয়। তাঁর দুই পুত্রের নাম ছিল দাসু ও দাত্তু। ভিন্ন মতে তাঁরভ দুই কন্যা সন্তান ছিল।
এঁদের নাম ছিল -আমরো ও আনোখি।
১৫২০ থেকে মোগল সম্রাটা
বাবর, ভারতবর্ষে তাঁর
অভিযাব শুরু করলে, ফেরু মল তাঁর পৈত্রিক আবাস ত্যাগ করে বিপাশা নদীর দীরবর্তী খাদুর
সাহিব নামক গ্রামে চলে আসেন।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে শিখ ধর্মের প্রবর্তক
গুরুনানকের
সাথে সাক্ষাৎ হয়। পর তিনি শিখ ধর্মগ্রহণ করেন। এই সময় কর্তাপুরে এসে ছয় বৎসর গুরু নানকের সেবা করেন এবং
তাঁর প্রবর্তিত শিখধর্ম প্রচারে অংশগ্রহণ করেন। গুরু নানকই তাঁকে 'অঙ্গদ' নাম দেন।
১৫৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর গুরুনানক
তাঁকে গুরুর প্রদান করেন। ২২ সেপ্টেম্বর গুরুনানক
মৃত্যবরণ করলে- অঙ্গদ কর্তাপুর ত্যাগ করে, সপরিবারে খাদুর সাহিব গ্রামে গ্রামে চলে আসেন।
গুরু নানকের দুই পুত্র শ্রী চন্দ ও লখমী দাস ছিলেন গুরগদ্দির দাবিদার। তাই
অঙ্গদ গুরুপদে নির্বাচিত হওয়ার পর একটি সময় পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক শিখই তার নেতৃত্ব স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু গুরু অঙ্গদ বিতর্কের দিকে দৃষ্টিপাত না করে গুরু নানকের শিক্ষার দিকে মনোনিবেশ করেন এবং লঙ্গর প্রভৃতি সেবামূলক কাজের মাধ্যমে একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলেন।
এবং ধীরে ধীরে তিনি শিখদের কাছে দ্বিতীয় গুরু হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হন।
১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ
সম্রাট শেরশাহ সুরির
কাছে পরাজিত হয়ে মুঘল সম্রাট
হুমায়ুন
পলায়ন করেন। পরে তিনি গুরু অঙ্গদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। শিখ সন্তজীবনী অনুযায়ী,
হুমায়ুন যখন খাদুর সাহিবের গুরদ্বারা মাল আখারা সাহিবে উপস্থিত হন,
তখন গুরু অঙ্গদ সঙ্গতের স্তোত্রগান শুনছিলেন। সেই অবস্থায় তিনি উঠে দাঁড়িয়ে সম্রাটকে অভিবাদন জানাতে
পারেন নি। এতে ক্রুদ্ধ হুমায়ুন তৎক্ষণাৎ তরবারি বের করেন। সেই সময় গুরু অঙ্গদ তাকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, সিংহাসন হারানোর সময় যুদ্ধ না করে সম্রাট পলায়ন করেছিলেন; আর এখন তিনি প্রার্থনারত ব্যক্তিতে আক্রমণে উদ্যত হয়েছেন। এই ঘটনার এক শতাব্দীরও পরে লেখা শিখ গ্রন্থগুলিতে
বলা হয়েছে- গুরু অঙ্গদ সম্রাটকে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং একদিন তিনি নিজের সিংহাসন ফিরে পাবেন বলে আশ্বাসও
দিয়েছিলেন। শিখ গুরু হিসেবে দক্ষতা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি
গুরুমুখীলিপির প্রবর্তন করেন। এই লিপিতে শিখধর্মের সকল গ্রন্থাদি লেখা হয়ে থাকে।
অঙ্গদ ৬২টি
(মতান্তরে ৬৩টি) গীত রচনা করেন। পরবর্তী সময়ে এই গীতগুলো গ্রন্থ সাহিবের
অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি প্রথম প্রত্যেক শিখ ধর্মস্থানে লঙ্গর প্রথাটিকে প্রণালীবদ্ধকরণ। এই লঙ্গরগুলিতে স্থানীয় এবং দূরাগত সকল দর্শনার্থীদের একত্রে বসিয়ে বিনামূল্যে সাধারণ খাদ্য পরিবেশনের
ব্যবস্থা করেন। তিনি ব্যায়াম, যুদ্ধকৌশল ও মল্লযুদ্ধ শিক্ষার জন্য তিনি একাধিক মল্ল আখাড়া চালু করেন। শরীরচর্চার পাশাপাশি এই সব আখড়ায় তামাক ও অন্যান্য মাদক দ্রব্য বর্জনের উপদেশ দানের মতো স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনার
ব্যবস্থা করেন।
১৫৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর শিষ্য
অমর দাশকে গুরুপদ দান করে যান।
তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল- মাতা খিবি। সন্তানরা ছিলেন- বাবা দাসু, বাবা দাত্তু, বিবি আমরো ও বিবি আনোখি।