হর্ষবর্ধন
(রাজত্বকাল: ৬০৬-৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দ)
উত্তর ভারতের পুষ্যভূতি রাজবংশের রাজা।

পুষ্যভূতি রাজবংশের রাজা প্রভাকরবর্মণের কনিষ্ঠ পুত্র। প্রভাকরবর্মণের মৃ্ত্যুর পর হর্ষবর্ধেনে বড় ভাই
রাজ্যবর্ধন ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ সিংহাসন লাভ করেন। তাঁর বড় বোন রাজ্যশ্রী ছিলেন ছিলেন মৌখরী-রাজ্ গ্রহ বর্মণের স্ত্রী।  মালবের গুপ্ত-রাজা মৌখরীর রাজ্য আক্রমণ করে। এই আক্রমণে মৌখরী-রাজ গ্রহ বর্মণ নিহত হন এবং তাঁর স্ত্রী রাজ্যশ্রীকে বন্দী করেন।

৬০২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পিতা
প্রভাকরবর্মণ হুনদের আক্রমণ প্রতিহত করার সময় যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তিনি থানেশ্বরের সিংহাসন লাভ করেন। সিংহাসন লাভের পর তিনি হুনদের প্রতিহত করেন। এই সময় মালবের গুপ্ত-রাজা শশাঙ্ক মৌখরীর রাজ্য আক্রমণ করে। এই আক্রমণে মৌখরী-রাজ গ্রহ বর্মণ নিহত হন এবং তাঁর স্ত্রী রাজ্যশ্রীকে বন্দী করেন। রাজ্যবর্ধন এই সংবাদ পাওয়ার পর, ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্যবর্ধন
 তাঁর ছোটো ভাই হর্ষবর্ধনের হাতে রাজ্যভার অর্পণ করে, দশ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে দেবগুপ্তে বিরুদ্ধে যুদ্ধ অগ্রসর হন। এই সময় দেবগুপ্তকে সাহায্যের জন্য শশাঙ্কও অগ্রসর হন। কিন্তু শশাঙ্কের পৌছানোর আগেই রাজ্যবর্ধন দেবগুপ্তকে পরাজিত করে হত্যা করেন। এরপর তিনি রাজ্যশ্রীকে উদ্ধারের প্রস্তুতি নেন।

রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে রাজশ্রীকে উদ্ধার ও শশাঙ্ককে শাস্তি দিতে অগ্রসর হন। এই সময় এর সাথে যোগ দেন কামরূপ রাজ ভাস্করবর্মন। বাণভট্টের হর্ষচরিত সূত্রে জানা যায়, হর্ষবর্ধন বিন্ধ্যা পর্বতের জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে রাজ্যশ্রীকে উদ্ধার করেন। এরপর শশাঙ্ক ভাস্করবর্মণ ও হর্ষবর্ধনের সেনাবহিনী দ্বারা আক্রমণ এড়িয়ে, কৌশলের সাথে তিনি কনৌজ ত্যাগ করেন। এই কারণে হর্ষবর্ধন শশাঙ্ককে শাস্তি দিতে না পেরে রাজধানীতে ফিরে আসেন এবং তিনি বোন রাজ্যশ্রীর অনুমতি নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন।

এরপর তিনি রাজ্যের উন্নয়নে হাত দেন এবং একটি বিশাল সেনাবাহিনী তৈরি করেন।
এরপর তিনি সাম্রাজ্য সীমা ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ ভারত জয় করার উদ্দেশ্য হর্ষবর্ধন অভিযান পরিচালনা করেন। এই সময় দক্ষিণ ভারতের চালুক্য-রাজ পুলকেশী নর্মদা নদীর তীরে হর্ষবর্ধনকে বাধা দেন। এই যুদ্ধে হর্ষবর্ধন পরাজিত হয়ে ফিরে যান। হর্ষবর্ধনকে পরাজিত করে পুলকেশী 'পরমেশ্বর' উপাধি ধারণ করেন।

গৌড়ের রাজা
শশাঙ্কের মৃত্যুর পর ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে হর্ষবর্ধন এবং ভাস্করবর্মন গৌড়রাজ্যের বিভিন্ন অংশ দখল করে নেন। এছাড়া উড়িষ্যা আক্রমণ করে গঞ্জাম পর্যন্ত পর্যন্ত অগ্রসর হন। গঞ্জাম অধিকারের পর সেখানকার মহাযান বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি সভা আহ্বান করেন। সম্মেলনের পর তিনি জয় সেন নামক জনৈক বৌদ্ধ-আচার্যকে উড়িষ্যার ৮০টি নগরীর রাজস্ব অর্পণ করেছিলেন।

হর্ষবরধন একাধিক বার কাশ্মীরে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন।
কাশ্মীরে অভিযানের ফলাফল জানা যায় না। তবে সিন্ধুদেশে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

তিনি পশ্চিম ভারতের সৌরাষ্ট্রের বলভী রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে দ্বিতীয় ধ্রুব সেনকে পরাজিত করেছিলেন। হিউসেন সাং এর বিবরণ থেকে জানা যায়, তিনি তাঁর নিজ কন্যাকে  ধ্রুব সেনের সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন।

৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দে হর্ষবর্ধন মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর কোনো উত্তরাধিকার না থাকায়, তাঁর অবর্তমানে অর্জুন নামক এক মন্ত্রী রাজত্ব লাভ করেন।