হোসেন কুলী বেগ
সম্রাট
আকবর-এর একজন উচ্চপদস্থ সেনাপতি। বাংলার সুবাহদার।
তাঁর জন্মের তারিখ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। তাঁর
পিতার নাম ওয়ালী বেগ জুল-কদর। বৈরাম খান
ভাগ্নে। ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে
সম্রাট
আকবর তাঁকে খান-ই-জাহান এই উপাধি দিয়ে বাংলার সুবাহদার নিযুক্ত করেছিলেন।
সম্রাট
আকবর -এর সেনাবাহিনীর একজন সাধারণ সৈনিক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু
হয়।
শত্রুদের প্ররোচনায় বৈরাম খানের প্রতি বিরূপ হয়ে ১৫৬০ খ্রিষ্টাব্দে
আকবর তাঁকে পদচ্যুত করেন।
এই সময় তিনি
বৈরাম খানের পক্ষ গ্রহণ করার কারণে তিনি বন্দি হন এবং কিছুদিন কারাভোগের পর
তিনি মুক্তি লাভ করেন। এরপর আকবর তাঁকে পূর্বপদে বহাল করেন। এরপর থেকে হোসেন কুলী বেগ তাঁর বাকি জীবন অত্যন্ত আন্তরিকতা ও আনুগত্যের সাথে
মোগল সাম্রাজ্যের স্বার্থে কাজ করেন এবং অতি দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন।
বাংলা শাসনের অধিকারপ্রাপ্ত অধিনায়ক
মুনিম খান ১৫৭৫
খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর প্লেগ রোগে মারা যান। এরপর ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ নভেম্বর সম্রাট
আকবর তাঁকে ‘খান-ই-জাহান’ উপাধিসহ বাংলার সুবাহদার নিযুক্ত করেন।
মূলত তিনিই ছিলেন সুবাহ বাংলার প্রথম সুবাহদার। সম্রাট তাঁকে আফগান
কররানী রাজবংশের আফগান সুলতান দাউদ খান কররানীর কবল থেকে
বঙ্গদেশকে পুনরুদ্ধার করে সেখানে মোগল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
দীর্ঘদিন যুদ্ধ করার
পরে ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ১২ জুলাই রাজমহলের যুদ্ধে তিনি আফগানদের পরাজিত করেন এবং বাংলার আফগান
বংশোদ্ভূত
কররানী রাজবংশের সুলতান দাউদ খান কররানীকে বন্দী করে শিরশ্ছেদ করেন।
এরপর তিনি আরও অগ্রসর হয়ে দাউদ খানের অবশিষ্ট অনুসারীদের পরাজিত করেন এবং সাতগাঁও মুগল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
এরপর আফগান দলপতি ও ভূঁইয়ারা
ঈসা খাঁ-এর নেতৃত্বে
ভাটি অঞ্চলে মোগলদের বিরুদ্ধে পুনরায় লড়াই শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।
এই বিদ্রোহ দমনের জন্য ১৫৭৮ খ্রিষ্টাব্দে হোসেন কুলী বেগ ভাটি অঞ্চলে অভিযান
পরিচালনা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ভাওয়াল অঞ্চলে শিবির স্থাপন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে
তিনি কিছুটা সাফল্য লাভ করলেও কাসতুলে নৌ-যুদ্ধে তাঁর বাহিনী ঈসা খানের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। এরপর খান-ই-জাহান ভাটি অঞ্চল ত্যাগ করেন এবং ১৫৭৮
খ্রিষ্টাব্দের ১৯ ডিসেম্বর. তৎকালীন মোগল বাংলার রাজধানী
তাণ্ডারে নিকটবর্তী কোন এক স্থানে তাঁর মৃত্যু হয়।