ঈসা খাঁ

১৫২৯-১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দ।
পূর্ব-বাংলার স্বাধীন বার ভুঁইয়াদের একজন।

 

১৫২৯ খ্রিষ্টব্দের ১৮ই আগষ্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নাম সোলায়মান খাঁ ছিলেন আফগানিস্তানের সোলায়মান পার্বত্য অঞ্চলের এক আফগান দলপতির বংশধর।

কররাণী আফগান শাসক তাজ খানের অনুগ্রহে ৩৫ বছর বয়সে ঈশা খাঁ বাংলার কররাণী শাসকের সামন- হিসাবে সোনারগাঁও ও মহেশ্বরদী পরগানায় ১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দে জমিদারী লাভ করেন। তিনি ১৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের তিনি একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী তৈরি করে, পূর্ববাংলার অন্যতম শাসকে পরিণত হন। ১৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সোনারগাঁওয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মোঘল নৌবহরকে বিতাড়িত করতে দাউদ খানের সেনাপতিকে সাহায্য করেছিলেন। দাউদ খানের প্রতি কর্তব্য পালনের প্রতিদানে তিনি মসনদ-ই-আলা উপাধি লাভ করেন।

১৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সম্রাট আকবর মানসিংহকে বাংলার শাসক করে পাঠান। পূর্ববঙ্গকে মোগল শাসনাধীনে আনার জন্য মানসিংহ, ঈশা খাঁর বিরুদ্ধে এক অভিযান পরিচালনা করেন।
১৫৯৬ খ্রিষ্টাব্দে মোগল বাহিনী এবং ঈসা খাঁর বাহিনীর ভিতরে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যা নদীর সম্মিলনস্থলে, বর্তমান ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার সম্পূর্ণ দক্ষিণ প্রান্তের টাঙ্গার গ্রামে হয়। কিন্তু ঈশা খাঁকে পরাজিত করা সম্ভব হয় নি।
১৫৯৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মানসিংহ স্থল ও জলপথে ঈসা খানের বিরুদ্ধে দুটি বিরাট বাহিনী পাঠান। এই বাহিনী প্রথম দিকে কিছুটা সাফল্য লাভ করে। এই সময় এরঁ ঈসা খানের রাজধানী কাত্রাবো আক্রমণ করে। কিন্তু ৫ই সেপ্টেম্বর বিক্রমপুর থেকে ২০ কি.মি. দূরে এক নৌ-যুদ্ধে দুর্জন সিংহ নিহত হন এবং মোগল বাহিনী বিধ্বস্ত হয়। এরপর তিনি ঈশাখাঁর সাথে সন্ধি করেন। এভাবে ঈসা খানের বিরুদ্ধে মানসিংহের অভিযান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং হতোদ্যম মানসিংহ ১৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দে আজমীরের উদ্দেশে বাংলা ত্যাগ করেন।
 

কথিত আছে ঈশা খাঁ, ত্রিপুরার ভুঁইয়া চাঁদ রায়ের কন্যা স্বর্ণময়ীকে অপহরণ করে বিবাহ করেছিলেন। বিবাহের পর তাঁর নাম রাখা হয়েছিল সোনাবিবি।

১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই সেপ্টেম্বর মৃত্যু বরণ করেন। গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানায় বক্তারপুর গ্রামে ঈশা খাঁ সমাহিত আছেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুসা খাঁ সোনার গাঁও এবং ভাটি অঞ্চলের স্বাধীন শাসক হন।


সূত্র :
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।