মুনিম খান
(?–১৫৭৫খ্রিষ্টাব্দ)
মোগল সম্রাট
হুমায়ুন
ও আকবর
-এর উচ্চপদস্থ সেনাপতি। তাঁর পূর্বপুরুষ আন্দিজান (বর্তমান
উজেবকিস্তান ) থেকে এসেছিলেন। তার বাবার নাম মিরান বেগ আন্দিজানি।
আইন-ই-আকবরী গ্রন্থ থেকে জানা যায় তাঁর আসল নাম ছিল মির্জা মুনিম বেগ । ১৫৬০ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর তাঁকে এই উপাধী দিয়ে উপাধি দিয়ে ওয়াকিল পদে নিয়োগ করেন। ১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত
তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।
১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দে উজবেক বিদ্রোহ দমনের পর তিনি জৌনপুরের সুবাদার নিযুক্ত হন।
১৫৭৪-১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর মনসবদরি প্রথা প্রবর্তন করলে, মুনিম খানকে তৎকালীন সর্বোচ্চ পাঁচ হাজারী মনসবদারের মর্যাদা প্রদান করেন।
বাংলার সুলতান দাউদ খান কররানী সম্রাট আকবরের বশ্যতা অস্বীকার করলে, সম্রাট এই
বিদ্রোহ দমনের জন্য দাউদের বিরুদ্ধে মুনিম খানকে পাঠান।
মুনিম খান এই অভিযানে জয় লাভ করতে ব্যর্থ হলে ১৫৭৪ খ্রিষ্টাব্দে আকবর নিজেই
অভিযানে আসেন। সম্রাট এই অভিযানে হাজীপুর ও পাটনা থেকে দাউদকে বিতারিত করে রাজধানী ফিরে আসেন। এই
সময় তিনি দাউদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযানের দায়িত্ব দেন মুনিম খান ও
টোডরমলের উপর।
মুনিম খান ২০,০০০ সৈন্য নিয়ে বাংলার দিকে অগ্রসর হন এবং বিনা বাধায় সুরজগড়, মুঙ্গের, ভাগলপুর ও কহলগাঁও অধিকার করেন।
এরপর তিনি তেলিয়াগড়ি গিরিপথে এসে পৌঁছালে,
দাউদ প্রতিরোধ ব্যূহ রচনা করেন। মুনিম খান স্থানীয় জমিদারদের সাহায্যে রাজমহল পবর্তমালার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়।
এরপর ১৫৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বাংলার রাজধানী তান্ডায় প্রবেশ করেন। ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ৩ মার্চ সুবর্ণরেখা নদীর নিকট সংঘটিত তুকারয়ের যুদ্ধে দাউদ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান।
এরপর রাজা
টোডরমলের
ভিন্ন পথে ভদ্রকে উপস্থিত হন। দাউদ আত্মরক্ষার জন্য কটক দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। রাজা
টোডরমলের কটক অবরোধ করলে দাউদ নিরুপায় হয়ে সন্ধির প্রস্তাব দেন। ১২ এপ্রিল
তিনি মুনিম খানের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। উভয়পক্ষে সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। মুনিম খান রাজধানী তান্ডা থেকে গৌড়ে সরিয়ে নেন। কিন্তু গৌড় বহুকাল পরিত্যক্ত থাকায় বাসোপযোগী ছিল
না।
১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর মুনিম খান প্লেগ রোগে মারা যান।
তাঁর মৃত্যুর পর বাংলার সুবেদার হিসেবে আসেন
হোসেনকুলী বেগ।