জুলিয়াস সিজার
ইংরেজি
Julius
Caesar।
প্রখ্যাত
রোমান সেনাপতি ও শাসক।
খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ অব্দে ১২ বা ১৩ জুলাই তারিখে প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের সম্ভ্রান্ত
পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কথিত আছে, ইনি ছিলেন ট্রোজান রাজকুমার ঈয়েনেয়াস-এর বংশধর।
এঁর পিতা গাইয়ুস জুলিয়াস সিজার (Gaius
Julius Caesar)
ছিলেন রোমান সিনেটর। মায়ের নাম ছিল আউরেলিয়া কোট্টা (Aurelia
Cotta)।
জুলিয়াস সিজারের কোনো ভাই ছিল না। দুটি বড় বোন ছিল। এদের নাম জুলিয়া সিজারিস মেজর (Julia
Caesaris Major) ও
জুলিয়া সিজারিস মাইনর (Julia
Caesaris Minor)।
প্রথম বোনের সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। তবে ছোট বোন
জুলিয়া সিজারিস মাইনর ছিলেন
রোমের প্রথম সম্রাট অগাস্টাসের মাতামহী।
এঁর পিতা
কোস্সুটিয়া
নামক এক রোমান তরুণীর সাথে জুলিয়াসের বিবাহ দেন। কিন্তু জুলিয়াস এই বিবাহকে মেনে
নিতে পারেন নি।
খ্রিষ্টপূর্ব ৯১ অব্দ থেকে ৮২ অব্দ পর্যন্ত রোমকে নানাবিধ যুদ্ধ বিগ্রহের ভিতর
কাটাতে হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৮২ অব্দে
লুসিকাস কোর্নেলিয়াস সুল্লা রোমের ক্ষমতার শীর্ষে চলে আসেন, তাঁর
যুদ্ধ জয়ের যোগ্যতা বলে।
এর ভিতরে খ্রিষ্টপূর্ব ৮৫ অব্দে তাঁর
পিতার মৃত্যুর হয়। এরপর খ্রিষ্টপূর্ব ৮৪ অব্দে তিনি
কোস্সুটিয়াকে
ত্যাগ করেন। এই তরুণীর গর্ভে তাঁর সন্তানও জন্মগ্রহণ করে নি। অনেক
ঐতিহাসিক মনে করেন যে, তাঁর পিতা এই কন্যার সাথে জুলিয়াসের বিয়ে ঠিক করেছিলেন,
কিন্তু বিয়ের আগেই তাঁর পিতা মৃত্যুবরণ করায়, তিনি সম্পর্ককে ভেঙে দিয়েছিলেন। এরপর
তিনি
মারিয়ান পার্টির নেতা লুসিকাস সিন্না
(Lucius Cornelius Cinna
)-র
কন্যা
কোর্নেলিয়া সিন্নিলা
-কে
খ্রিষ্টপূর্ব ৮৪
অব্দের বিয়ে করেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৮২ অব্দে
লুসিকাস কোর্নেলিয়াস সুল্লা
রোমে স্বৈরশাসন শুরু করেন। এই সময় তিনি জুলিয়াসকে এই মর্মে আদেশ করেন যে, সে যেন
তাঁর স্ত্রী
কোর্নেলিয়া সিন্নিলা
-কে
অবিলম্ব ত্যাগ করে। কিন্তু জুলিয়াস এই আদেশ অমান্য করেন এবং
সুল্লা'র
ভয়ে লুকিয়ে পড়েন। পরে জুলিয়াসের প্রভাবশালী আত্মীয় ও বন্ধুদের দ্বারা তিনি কাছে ক্ষমা পান।
জুলিয়াস রোম ত্যাগ করে তাঁর নিজের বাহিনীতে যোগদান করেন। এই সময় তিনি সিভিক ক্রাউন
পুরস্কার লাভ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৮ অব্দে
সুল্লা'র
মৃত্যুর পর তিনি রোমে ফিরে আসেন। এজিয়ন সাগর পার হওয়ার সময় সিজারকে কিছু জলদস্যু
বন্দী করে। পরে তিনি ৫০ ট্যাল্টের বিনিময়ে মুক্তি পান। এরপর সিজার একটি নৌবাহিনী
তৈরি করে জলদস্যুদের গ্রেফতার করেন এবং জলদ্স্যুদের ক্রুসে মৃত্যুদণ্ড দেন।
রোমে ফেরার পর তিনি রোমে ট্রাইবান (tribune
)
হিসাবে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি রাজনৈতিকভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৬৯ অব্দে
তিনি কোয়েষ্টর (
Quaestor
)
হিসাবে নির্বাচিত হন। এই বৎসরে তাঁর স্ত্রী
কোর্নেলিয়া সিন্নিলামৃত্যুবরণ করেন।
এরপর তিনি কোয়েষ্টর হিসাবে স্পেনে যান।
খ্রিষ্টপূর্ব ৬৭ অব্দে তিনি রোমে
ফিরে আসেন এবং পম্পেইয়াকে (Pompeia
)
বিবাহ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৬৩ অব্দে তিনি
Pontifex Maximus
পদের জন্য নির্বাচনে
দাঁড়ান এবং সহজেই নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এই বৎসরে
Catiline
ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে
Cicero
কনসুল হন।
এই ষড়যন্ত্রের সাথে সিজারের কিছু যোগ থাকলেও তিনি রক্ষা পান। এরপর সিজার স্পেনের
গভর্নর হিসাবে নিয়োগ পান। স্পেন দুটি স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর রাজ্য দখল করেন। এই
সময় তিনি triumph
উপাধি লাভ করেন। এরপর তিনি কন্সুল পদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫৯ অব্দে কন্সুল পদে নির্বাচিত
হন। ৫৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তিনি গল প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। গল জাতি পো নদীর অববাহিকায় বসতি স্থাপন করেছিল। গলদের
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠিগুলো পরস্পরের শত্রু ছিল। সিজার যখন গল-এর শাসনকর্তা হন, তখন
শুধুমাত্র পো নদীর অববাহিকা আর ভূ-মধ্য সাগরীয় উপত্যকার কিছু অংশ রোমানদের অধিকারে
ছিল। তিনি গলদের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে গল প্রদেশ অধিকারে আনার চেষ্টা করেন। যুদ্ধের শুরুতে রোমান
বাহিনী Battle of Magetobriga
যুদ্ধে পরাজিত হয়। পরে সিজার নতুন কৌশলে
এদের পরাজিত করেন। এরপর থেকে রোমান বাহিনী গলদের সাথে এক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে
পরে। তারপরেও রোমান বাহিনী গলদের দমন করতে সমর্থ হন। রোমান সেনাবাহিনী গলদের
পবিত্রস্থানের (যেখানে দেবতাকে নিবেদন করার উদ্দেশ্যে আনীত
স্বর্ণ সঞ্চয় করে রাখা হত) অর্থভাণ্ডার লুট করে। সিজার ঐ লুটের মাল দিয়ে সেনাদের বেতন
বাড়িয়ে দিলেন এবং একই সঙ্গে তিনি তাদেরকে ভূ-সম্পত্তি বণ্টন করার প্রতিশ্রুতিও দান
করলেন। এভাবে সিজারের একটি সম্পূর্ণ আজ্ঞানুবর্তী এক শক্তিশালী সেনাবাহিনী তৈরি
করতে সক্ষম হন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০ অব্দে রোমের সিনেটর পম্পেই (Pompey
)
সিজারকে রোমে ফিরে আসতে বলেন। কারণ ইতিমধ্যে সিজারের শাসন করার সময় সীমা অতিক্রম
হয়েছিল। কিন্তু সিজার ভেবেছিলেন, এটা ছিল রোমকে অধিকারের রাখার জন্য পম্পেই-এর
ক্রৌশল। তাই তিনি
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৯ অব্দে, তাঁর বাহিনী নিয়ে রোম আক্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা
করলেন এবং গলিয়ার দক্ষিণ সীমানায় অবস্থিত রুবিকন নদীর তীরে এসে পৌঁছিলেন। এইভাবে
সসৈন্যে রোমের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার অর্থ হলো- বিদ্রোহ করা। সিজারের সম্মুখে তখন
দু'টি পথ
হয় রোম শাসন করা, নয়ত কলঙ্কিত মৃত্যুদণ্ড। সিজার ‘
alea icta esto
’ (অর্থাৎ দান চালা হয়ে গেছে)
উচ্চারণ করে তার বাহিনী নিয়ে তিনি রোমের পথে অগ্রসর হলেন। এ থেকেই এ বাগ্বিধির
উৎপত্তি To cross the Rubicon
(যা থেকে আর পিছানো যাবে না এমন বিপদজনক কোন কাজের সিদ্ধান্ত নেয়া)।
সিনেটের সৈন্যবল সিজারের অপেক্ষা বেশি থাকলেও, তা বিভিন্ন প্রদেশে ছড়ানো ছিল। সিনেট
তখন পম্পেই এর উপর ভার দিলেন সিজারকে প্রতিরোধ করার। কিন্তু সিজার এত দ্রুত রোম
আক্রমণ করেছিলেন যে, পম্পেই প্রতিরক্ষার কোন আয়োজন করারই সুযোগ পান নি। সুতরাং
প্রায় কোন প্রতিরোধের সম্মুখীন না হয়েই সিজার রোম এবং সমগ্র ইটালি দখল করে নিলেন।
এই আক্রমণ থেকে পম্পেই কোনো ক্রমে নিজেকে রক্ষা করে স্পেন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেন।
ইতিমধ্যে পম্পেই বলকান উপদ্বীপে বিরাট এক বাহিনী গঠন করেন।
পম্পেই ও জুলিয়াস সিজারের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু হল। সিজারের বাহিনী
পম্পেই এর বাহিনী মোকাবেলার উদ্দেশ্যে অভিযান চালায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮ অব্দে দু'বাহিনী
পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখী হল। এশিয়া মাইনরে ফারসালাসের এই যুদ্ধে পম্পেই নিহত হলে
সিজার রোমের একচ্ছত্র অধিপতি হলেন। এই বিজয়ের পর সিজার মাত্র তিনটি শব্দে তার
বিজয় সংবাদ রোমে পাঠিয়েছিলেন:
Veni, vidi, vici
(এলাম, দেখলাম, জয় করলাম)। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮ অব্দে পুনরায় তিনি ডিরেক্টর হিসাবে
নির্বাচিত হন। খ্রিষ্ট-পূর্ব ৪৬ অব্দে তিনি দশ বৎসরের জন্য ডিরেক্টর নির্বাচিত হন।
আর খ্রিষ্ট-পূর্ব ৪৪ অব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি আমরণ ডিরেক্টর পদ লাভ করেন। আর এর
১ মাস পরে, খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ অব্দের ১৫ মার্চ-এ বিরোধীদলের চক্রান্তে তিনি
নিহত হন।
মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর সিংহাসনের উত্তরাধিকার করে গিয়েছিলেন
অগাস্টাস
-কে।
সেই সূত্রে রোমের পরবর্তী রাজা হন
অগাস্টাস
।
সূত্র :
বাংলা বিশ্বকোষ। চতুর্থ খণ্ড। নওরোজ কিতাবিস্তান। নবেম্বর ১৯৯৭৬।
http://www.vroma.org/~bmcmanus/caesar.html