কৃষ্ণচন্দ্র দে
১৮৯৩-১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ।
প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনেতা।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার, ৯ ভাদ্র ১৩০০),
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সিমলে পাড়ার মদন ঘোষ লেনে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
জন্মাষ্টমীতে জন্মগ্রহণ বলেই তাঁর নামকরণ হয়েছিল কৃষ্ণচন্দ্র। তবে ডাকনাম ছিল বাবু। তাঁর পিতা শিবচন্দ্র দে
এবং মাতা রত্নমালা দেবী।
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে আকস্মিক মাথার যন্ত্রণা থেকে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকেন, ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্জদে
তিনি পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন।
শৈশব থেকে সঙ্গীতের প্রতি প্রবল আকর্ষণ লক্ষ্য করে, তাঁর মা
তাঁকে সঙ্গীত শিক্ষার ক্ষেত্রে উৎসাহ দিতে থাকেন। কৃষ্ণচন্দ্র পারিবারিক উৎসাহে খ্যাত খেয়ালিয়া শশীমোহন দে-র শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সংগীত চর্চা শুরু করেন।
এরপরে খেয়াল গানের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন ওস্তাদ বাদল খাঁর
কাছে। এছাড়া টপ্পাচার্য মহেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সরোদিয়া কেরামৎউল্লা, শিবসেবক মিশ্র, দবীর খাঁ, দর্শন সিং, জমিরুদ্দিন খাঁ, কীর্তনীয়া রাধারমণ দাস প্রমুখ গুণীদের কাছে সংগীত শিক্ষা করেন। হিন্দি ও উর্দু সঠিক ভাবে উচ্চারণের জন্য মৌলবির কাছে বিষয়ে শিক্ষা নেন।
১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর এইচ.এম.ভি থেকে তাঁর প্রথম গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়।
গানের রেকর্ড হয়েছিল কলকাতার শিয়ালদহের ১৩৯, বেলিয়াঘাট সড়কস্থ
এইচ.এম.ভি'র রেকর্ডিং স্টুডিও।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের শিশিরকুমার ভাদুড়ীর আমন্ত্রণে মঞ্চে আসেন এবং অভিনয়ের
সাথে কণ্ঠশিল্পীও হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মার্চ অ্যালফ্রেড থিয়েটারে "বসন্তলীলা" নাটকে বসন্তদূতের ভূমিকায় অভিনয়
করেন।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৬ আগষ্ট শিশির কুমার ভাদুরী তাঁর
নাট্যদলকে সংস্কার করেন। এই নতুন নাট্যদলের নাম রাখা হয় মনোমোহন নাট্যমন্দির। এই
নাট্যমন্দিরে যোগেশচন্দ্র চৌধুরী রচিত 'সীতা' মঞ্চস্থ হয়েছিল। এই নাটকে কৃষ্ণচন্দ্র
'বৈতালিক' চরিত্রে অভিনয় করেন। এই নাটকে তাঁর কণ্ঠের গান 'অন্ধকারের
অন্তরেতে অশ্রু বাদল ঝরে' দর্শকদের মোহিত করেছিল।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুলাই সীতা পুনরায় মঞ্চস্থ হয়। ২৬ জুন রবীন্দ্রনাথের 'বিসর্জন
নাটকে 'অন্ধ ভিখারি'র চরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০ আগষ্ট বসন্তলীলা পুনরায় মঞ্চস্থ হয়। এরপর শিশিরকুমার ভাদুরী
মনমোহন থিয়েটার নাট্যমন্দির লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ১১ আগষ্ট জলন্ধর চট্টোপাধ্যায়ের রোমান্টিক নাটক 'সত্যের সন্ধান'
মঞ্চস্থ হয় মিনার্ভা থিয়েটারে। এই নাটকে কৃষ্ণচন্দ্র গান পরিবেশন করেছিল। ২২শে
ডিসেম্বর শরৎচন্দ্র ঘোষের নাটক 'জাতিচ্যূত' নাটক মঞ্চস্থ হয় মিনার্ভা থিয়েটারে
গিরিনাথ চরিত্রে অভিনয় করেন। এই নাটকটি অন্ধ চরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে ১১ আগষ্ট মিনার্ভা থিয়েটারে শরৎচন্দ্র ঘোষের
শ্রী নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। এই নাটকে কৃষ্ণচন্দ্র অংশগ্রহণ করেন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের জুন জলন্ধর চট্টোপাধ্যায়ের 'রঙ্গরাখি' নাটকে অভিনয় করেন।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার কর্নওয়ালিস স্ট্রিট
তিনি
রংমহল থিয়েটার প্রতিষ্ঠাদের
একজন ছিলেন।
এই সময়
শিশিরকুমার ভাদুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিরে আসেন এবং সতু সেন।
এঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তিনি যোগেশচন্দ্র চৌধুরীর
রচিত 'শ্রী শ্রী বিষ্ণুপ্রিয়া' মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত। এই নাটকে
শিশিরকুমার কৃষ্ণচন্দ্রকে অভিনয় করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। ৮ আগষ্ট এই নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এই
নাটকে তিনি 'পাগলু' চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি সঙ্গীত পরিচালকও ছিলেন। এরপর
তিনি একের পর এক 'বিজয়িনী', 'রঙের খেলা', সিন্ধু গৌরব', আশাবরণা ও রাজ্যশ্রী নাটকে
অংশগ্রহণ করেন।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের
রংমহল থিয়েটার আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। এর ফলে,
থিয়েটার-কর্তৃপক্ষ ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে। এই কারণে কিছুদিন থিয়েটার বন্ধ রাখতে
হয়। এই ঋণ পরিশোধ করে নতুন
করে নাট্যমঞ্চ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন- যামিনী
মিত্র, যোগেশ চৌধুরী,
কৃষ্ণচন্দ্র দে, রঘুনাথ মল্লিক
প্রমুখ।
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮
আগষ্ট শরদিন্দু বন্দ্যোপাধায়ের
রচিত বন্ধু নাটক মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকের সঙ্গীত পরিচালনায়
ছিলেন
কৃষ্ণচন্দ্র দে
ও
কাজী
নজরুল ইসলাম।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে নভেম্বর (বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৩৬৯)
তিনি পরলোক গমন করেন।