মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত
(১৯১০ - ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ)
বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত নাট্যকার, মঞ্চাভিনেতা ও মঞ্চনাট্য
পরিচালিক। মহেন্দ্র গুপ্ত নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ইতিহাসে এমএ পাশ
করেছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থাদিতে তাঁর নামের সাথে এমএ টাইটেল ছাপা হতো।
১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৭
জানুয়ারি ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে মিনার্ভা
থিয়েটারের স্বত্বাধিকারী সলিল মিত্র
স্টার থিয়েটার লিজ নেন। এই সময় এই থিয়েটারে নাট্যকার ও অভিনেতা হিসেবে
যোগদান করেছিলেন মহেন্দ্রগুপ্ত। এখানে তিনি নাট্যমহড়া এবং নাট্যাভিনয় প্রশিক্ষণের দায়িত্ব
পান। সলিলকুমার মিত্রের পরিচালনায় মহেন্দ্রগুপ্তের প্রথম নাটক 'চক্রধারী' মঞ্চস্থ
হয় ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জুন শুক্রবার।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে
স্টার থিয়েটারের জমি কিনে নেন অমিয়কুমার দে। নতুন মালিকানায়
মহেন্দ্রগুপ্ত নাট্য পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি একটানা
স্টারে এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে স্টারে দর্শক সমাগম কম হতে
থাকে। এর জন্য স্টারের মালিক সলিল মিত্র মহেন্দ্র গুপ্তের কর্তব্য অবহেলার দায়
চাপান। এই কারণে তিনি মহেন্দ্র গুপ্তকে অপসারণ করে, নাট্য পরিচালক ও নাট্যকার
হিসেবে যুক্ত করেন দেবনারায়ণ গুপ্তকে।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ ১৩৪৫) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি
মহেন্দ্রগুপ্তের রচিত নাটক '
রুক্সিনী মিলন'-এর রেকর্ড প্রকাশ করেছিল।
এই নাটকের জন্য তিনি ৬টি গান রচনা রচনা করে দিয়েছিলেন।
১৯৫৭ তিনি
রংমহল থিয়েটারে যোগদান করেন। এখানে তিনি যোগ দিয়ে তিনি 'শতবর্ষ আগে' নাটকটি
মঞ্চস্থ করালেন। উল্লেখ্য, নাটকটি ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর স্টার থিয়েটারে।
মঞ্চস্থ হয়েছিল। পরে এই নাটক ইংরেজ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল। রঙমহলে তিনি
নাট্য-উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন।
এই বছরে তিনি নিজের একটি নাট্যদল তৈরি করে, মহড়া শুরু করেন। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন-
'কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চ
'। মূলত কলকাতার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মানিকতলার খালপুলের পাশে
সমাজ সেবিকা শ্যামমোহিনী দেবী এর প্রতিষ্ঠাতা। 'কাশী বিশ্বানথ সমাজসেবামূলক
প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এটি নির্মিত হয়েছিল। এর পাশেই ছিল এদের স্কুল ও দেবমন্দির।
তখন এর নাম ছিল 'কাশী বিশ্বানথ ইনস্টিটিউট। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন কংগ্রেসি ভূমি ও রাজস্ব মন্ত্রী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। নিজেদের কোনো নাট্যদল না থাকায়, এরা নানা
নাট্যদলের কাছে মঞ্চটি ভাড়া দিত। মহেন্দ্রগুপ্ত এই মঞ্চেরই নাম দিয়েছি 'কাশী
বিশ্বনাথ মঞ্চ'। এর ভিতরে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বিশ্বরূপা থিয়েটারের কর্ণধার
রাসবিহারী সরকারে নাট্কের সার্বিক উন্নতির পরিকল্পনা নেন। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে
মহেন্দ্রগুপ্তকে আনা হয়েছিল। তবে মহেন্দ্রের আসাটা ছিল অনেকটা অতিথির মতো।
মহেন্দ্র এই মঞ্চে কতকগুলো তাঁর রচিত পুরানো নাটক মঞ্চস্থ করেন। সেই সাথে তার নতুন
নাটক 'শাপমুক্তি' (১১ এপ্রিল ১৯৬৩) এবং 'রাজা রামপাল' (২৫ জুন ১৯৬৫) অভিনীত হয়েছিল।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জুন বঙ্কিমচন্দ্রের 'কৃষ্ণকান্তের উইল' নাট্যরূপ মঞ্চস্থ হয়
স্টারে। নাট্যরূপ দিয়েছিলেন কুণাল মুখোপাধ্যায়। এই নাটকের উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন
মহেন্দ্র গুপ্ত। তিনি এই নাটকে কৃষ্ণকান্তের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে
অসিত দে রচনা করেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নাটকে উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। অভিনয়
করেছিলেন প্রধান ভূমিকায়।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুলাই স্টারের মঞ্চস্থ হয়েছিল 'সমাধান'। এটি ছিল অজিত
গঙ্গোপাধ্যায়ের রচিত 'দাদু'-এর মঞ্চরূপ। সন্তোষ সিংহের পরিচালনায়, মহেন্দ্রগুপ্তের
উপদেশনায় নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল। এই নাটকটি টানা ১ হাজার চব্বিশ রাত্রি অভিনীত
হয়েছিল। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুলাই থেকে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর পর্যন্ত
এই নাটকে মহেন্দ্রগুপ্ত অভিনয় করেছিলেন। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ নভেম্বর তিনি
মৃত্যুবরণ করেন।
এই সময়ে তাঁর রচিত যে সকল নাটক অভিনীত হয়েছিল, সেগুলো হলো-
- চক্রধারী (৩ জুন
১৯৩৮)
- সোনার বাংলা (২৭ মে
১৯৩৯)
- অভিযান (১ সেপ্টেম্বর
১৯৩৯)
- দেবী দুর্গা (১৮
অক্টোবর ১৯৩৯)
- সতী তুলসী (১৬ মার্চ
১৯৪০)
- উত্তরা (১৮ মে ১৯৪০)
- পাঞ্জাবী কেশর রনজিৎ
সিংহ (২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪০)
- গঙ্গাবতরণ (২৬
অক্টোবর ১৯৪০)
- ঊষাহরণ (২৬ অক্টোবর
১৯৪০)
- কমলেকামিনী (৪ এপ্রিল
১৯৪১)
- রাণী ভবানী (২৪
জানুয়ারি ১৯৪২)
- অলকানন্দা (১৮ এপ্রিল
১৯৪২)
- মহালক্ষ্মী (৯
অক্টোবর ১৯৪২)
- রাণী দুর্গাবতী (৯
জানুয়ারি ১৯৪৩)
- মহারাজা নন্দকুমার (৪
জুন ১৯৪৩)
- টিপু সুলতান (১৯ মে
১৯৪৪)
- শতবর্ষ আগে (২১
ডিসেম্বর ১৯৪৫)। এই নাটক ইংরেজ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল
- হায়দার আলী (১৫ আগষ্ট
১৯৪৬)
- রায় গড় (১৪
সেপ্টেম্বর ১৯৪৬)
- স্বর্গ হতে বড় (১৫
ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭)
- শ্রীদুর্গা (১২
অক্টোবর ১৯৪৭)
- কালিন্দী (তারশঙ্কর
বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসের নাট্যরূপ দেন, ২৫ জুন ১৯৪৮)
- বিজয় নগর (২৩ জুলাই
১৯৪৯)
- নৌকাডুবি (রবীন্দ্রনাথের
রচিত উপন্যাসের নাট্যরূপ দেন, ৭ মে ১৯৪৯)
- ঊর্বশী (৯ ফেব্রুয়ারি
১৯৫০) পৃথ্বীরাজ (২৩ ডিসেম্বর ১৯৫০)
- শকুন্তলা (১২ জুলাই
১৯৫১)
- বালাজীরাও (মহেন্দ্রগুপ্তের
সম্পাদনা ও পরিচালনা, ৬ অক্টোবর ১৯৫১)
- সূর্যমহল (রমেশ
দত্তের 'রাজপুত জীবনসন্ধ্যা' অবলম্বনে, নাট্যরূপ মহেন্দ্র গুপ্ত, ১৯ মে ১৯৫২)
- রাজনর্তকী (২৩ মে
১৯৫৩)
- পদ্মিনী (নীহাররঞ্জন
গুপ্তের কাহিনি অবলম্বনে, ২ এপ্রিল ১৯৫৩)
- সারথী শ্রীকৃষ্ণ
(১৯৫৫)
- শাপমুক্তি(১১ এপ্রিল
১৯৬৩)
- রাজা রামপাল' (২৫ জুন
১৯৬৫)
- কাবুলিওয়ালা (১৮
সেপ্টেম্বর ১৯৬৮। রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা গল্পের নাট্যরূপ)
সূত্র :