প্রমথনাথ মিত্র
১৮৫৩-১৯১০ খ্রিষ্টাব্দ
ব্রিটিশ ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী বাঙালি বিপ্লবী এবং অনুশীলন সমিতি নামক গুপ্ত সমিতির আদি -পুরুষ। ব্যারিস্টার পি মিত্র নামে অধিক পরিচিত ছিলেন।
 
১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার জেলার নৈহাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বিপ্রদাস মিত্র ছিলেন পেশায় প্রকৌশলী।

১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিলাত থেকে ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফেরার পর গ্রামের লোকজন তাঁর পিতা বিপ্রদাসকে প্রায়শ্চিত্ত করতে বলেন। কিন্তু বিপ্রদাস তাতে রাজী না হলে, গ্রামের লোকজন তাঁকে এরকঘরে করার উপক্রম করে। এই কারণে কলিকাতায় এসে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু  প্রমথ মিত্র ধর্মান্তরিত হন নি।

ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করবার সময়ে তিনি আয়ারল্যান্ড এবং রাশিয়ার বিপ্লবীদের কথা জানতে পারেন। ভারতকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি বিপ্লবী দল গঠনের সংকল্প করেন। ভারতে ফিরে আসার পর তিনি দেখলেন স্বাধীনতার জন্য ইতিমধ্যে ছোটো ছোটো গুপ্ত সংগঠন তৈরি হয়েছে। প্রথম দিকে তিনি এসকল গুপ্ত সমিতিগুলোর ভিতরে সমন্বয় করার উদ্যোগ নেন। এ সকল দলের সার্বিক কর্মকাণ্ডে তিনি সন্তুষ্ট হতে না পেরে নিজেই ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে  নিখিল বঙ্গ বৈপ্লবিক সমিতি গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।  বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় র 'অনুশীলন' প্রবন্ধের আদর্শে এই সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়েছিল। এই কারণে পরে এই সংগঠনের নামকরণ করেন 'অনুশীলন সমিতি '। প্রায় একই সময় বরোদায় অরবিন্দ ঘোষ একটি গুপ্ত বিপ্লবী দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য তিনি যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতায় পাঠান। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে অরবিন্দের নির্দেশ অনুসরণ করে যতীন্দ্রনাথ একটি গুপ্ত দল গঠন করতে সক্ষম হন।

ইতিমধ্যে  ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মার্চ, কলকাতার ১২ মদন মিত্র লেনে ব্যারিষ্টার প্রমথনাথ মিত্র বিপ্লবী দল হিসেবে 'অনুশীলন সমিতি স্থাপন করেন। যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এই নতুন দলটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অরবিন্দকে জানান। এরপর অরবিন্দের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা 'অনুশীলন সমিতি'-তে যোগদান করেন। ধীরে ধীরে এই সংগঠনের সাথে কলকাতার ছোট ছোট ক্লাব ও সংগঠন এই সমিতিতে যোগদান করে। সংগঠনের কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য একটি পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়। এর সভাপতি ছিলেন ব্যারিষ্টার প্রমথনাথ মিত্র, সহ-সভাপতি ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশঅরবিন্দ ঘোষ আর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

প্রমথনাথ এই সমিতির আর্থিক দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি অনুশীলন সমিতির ঢাকা শাখারও ডিরেক্টর নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঢাকা অনুশীলন সমিতির পুলিনবিহারী দাস তারই প্রচেষ্টায় বিপ্লবী হয়েছিলেন।

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

রচনাবলী