রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়
(১৮৬৫-১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দ)
পত্রিকার সম্পাদক ও শিক্ষাবিদ

১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মে তৎকালীন ভারতের বাঁকুড়া শহরে (বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের একটি জেলা শহর) জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল বাঁকুড়া মিডিল ভার্নাকুলার স্কুলে। এই স্কুল থেকে ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্র বৃত্তি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন।

১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বাঁকুড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন। এরপর কলকাতা ফার্স্ট আর্টস এ চতুর্থ, বিএ অনার্স (ইংরেজি) প্রথম শ্রেণিতে প্রথম উত্তীরণ হন। 

১৮৮৮-৯৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। এই সময়ে তিনি কিছুদিন সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের ইংরেজি সাপ্তাহিক 'ইন্ডিয়ান মেসেঞ্জার'-এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বাংলা পাক্ষিক 'ধর্মবন্ধু' পত্রিকার  সম্পাদনা করেন। 

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন।
১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে চতুর্থ স্থান লাভ করেন।


১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে মাসিক পত্রিকা 'দাসী' প্রকাশিত হলে তিনি সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে  কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এই বছরেই তিনি 'ধর্মবন্ধু' পত্রিকায় সম্পাদক  হিসেবে যোগদান করেন।

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু সাহায্যে তিনি শিশুদের উপযোগী পত্রিকা 'মুকুল' প্রকাশে সহায়তা করেন। এই বছরের অক্টোবর মাসে তিনি এলাহাবাদের কায়স্থ পাঠশালায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বন্ধু বৈকুণ্ঠ দাস-এর সাথে 'প্রদীপ' নামক নতুন একটি বাংলা পত্রিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু বন্ধুর সাথে বনিবনা না হওয়ায়, ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এই পত্রিকা ত্যাগ করেন।

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে (বৈশাখ, ১৩০৮ বঙ্গাব্দ) তিনি নিজ মালিকানায় প্রকাশ করেন প্রবাসী পত্রিকা। প্রথম সংখ্যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৪০। পত্রিকার প্রথম চারটি সংখ্যা কলকাতা থেকে মুদ্রিত হয়েছিল। বার্ষিক মূল্য আড়াই টাকা। পরবর্তী সংখ্যা এলাহাবাদের ইন্ডিয়া প্রেস থেকে মুদ্রিত হ্য়। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে পত্রিকাটি আবার কলকাতা থেকে মুদ্রিত হতো। তাঁর মৃত্যুর পর, ১৩৫০ বঙ্গাব্দে এই পত্রিকাটির সম্পাদনা করেছিলেন তাঁর পুত্র কেদারনাথ  চট্টোপাধ্যায়।

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রকাশ করেন ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরাজী সাময়িক পত্রিকা "দ্য মডার্ন রিভিউ"।

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি  ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে সাধারণ  ব্রাহ্মসমাজের সভাপতি হয়েছিলেন।

১৯২৩ ও ১৯৩১  খ্রিষ্টাব্দে এলাহাবাদে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের মূল সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হিন্দি মাসিক "বিশাল ভারত" প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন। 

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জেনিভায় অনুষ্ঠিত লীগ অব নেশনস্‌-এর বিশেষ অধিবেশনে তিনি ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হিন্দু মহাসভার সভাপতি হয়েছিলেন।

তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং সেকেন্ডারি এডুকেশন রিফর্ম কমিটির সদস্য ছিলেন।
 
১‌৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

রামানন্দের পরিবার:
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর নাম মনোরমা দেবী। এদের চার সন্তান । এঁরা হলেন- কেদারনাথ, শান্তা, সীতা এবং অশোক। উল্লেখ্য, শান্তা উভয়ই সীতা  ছিলেন সুলেখিকা।
তথ্যসূত্র :