ব্রাহ্মধর্ম ও ব্রাহ্মসমাজ
রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত উপনিষদভিত্তিক একেশ্বরবাদী ধর্ম ব্রাহ্মধর্ম নামে পরিচিত। এর এই ধর্মানুসারীদের নিয়ে সৃষ্ট সংগঠনের নাম ব্রাহ্মসমাজ।
এই ধর্মের প্রধান আরাধ্য শক্তির নাম ব্রহ্ম। উপনিষদ মতে–
ব্রহ্ম হচ্ছেন এক এবং অদ্বিতীয় সত্তা।
এই ব্রহ্মার দ্বারা
এই চলমান বিশ্বচরাচর আচ্ছাদিত। ইনি নিজ দশা থেকে পরিবর্তিত হন না। এই কারণে ঈশ
উপনিষদে এঁকে অনেজৎ বা অকম্প (ন এজৎ [কম্পিত হওয়া]) বলা হয়েছে। এবং অচল হয়েও ইনি
প্রচণ্ড বেগবান। এই প্রবল গতিময়তার জন্যই তাঁকে আমরা সর্বত্র পাই। তিনি দূরে, নিকটে,
সবার অন্তরে আছেন। সর্বত্র আছেন বলেই বলেই ইনি 'সর্বত্র বিরাজমান' এবং প্রবল গতিকে
অনুসরণ করে উপলব্ধ করা যায় না বলেই তাঁকে অচল মনে হয় এবং সর্বত্র আছেন বলে মনে হয়।
তিনি
জ্যোতির্ময় এবং অশরীরী। অশরীরী শব্দটি আত্মার স্বরূপ অর্থে উপস্থান করা হয়েছে। এই
কারণে ব্রহ্ম সাধারণ পার্থিব দৃষ্টি ক্ষমতার বিচারে অদৃশ্য। আর তিনি এতই বিস্তৃত
যে, মন বা কল্পনা দিয়েও তাঁকে উপলব্ধি করা যায় না। আবার সকল কিছুর ভিতর দিয়ে ব্রহ্ম
প্রকাশমান বলেই তিনি স্পষ্ট। তাই শুধু দৃশ্যমান বস্তু, শব্দময় সত্তা ভাবনার দ্বারা
জ্ঞাত বিষয় দিয়েও ব্রহ্মকে উপলব্ধির চেষ্টা করা যায় মাত্র কিন্তু পূর্ণব্রহ্মকে চেনা
যায় না। এই উপলব্ধির দ্বারা আবেশিত হয়ে অনেকেই ব্রহ্মকে চেনার ধাঁধায় পড়ে যান। কেন
উপনিষদের দ্বিতীয় খণ্ডের ৩ সংখ্যক শ্লোকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে- জ্ঞানবান ব্যক্তির কাছে
তিনি অবিজ্ঞাত এবং জ্ঞানহীনের কাছে তিনি জ্ঞাত। ইনি ক্ষতরহিত বলেই- উপনিষদে তাঁকে
অব্যয়, অক্ষয়, অক্ষর প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়েছে।
ইনি
পরম আরাধ্য
বলেই
ইনি অর্হ।
ব্রহ্মের
প্রার্থনাসূচক ধ্বনি হলো–
ওম। পূজারীরা যে অর্থে বা উদ্দেশ্যেই এই ধ্বনি উচ্চারণ করে, তা ব্রহ্মের
স্মরণকে বুঝায়। ইনি আধ্যাত্মিক,
আধিদৈবিক, আধিভৌতিক দুঃখের অতীত।
ব্রহ্ম এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমুদয় উপকরণ সৃষ্টি করেছেন। এই সৃষ্টির আদিতে ইনি প্রথমে একজন সৃষ্টির দেবতা তৈরি করলেন। এই দেবতাকে উপনিষদে উল্লেখ করা হয়েছে- ব্রহ্মা নামে। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ের ১৮ সংখ্যক শ্লোকে বলা হয়েছে– যিনি সৃষ্টির প্রথমে ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করিয়াছেন, যিনি তাঁহার উদ্দেশ্যে বেদবিদ্যা প্রেরণ করিয়াছেন, আত্মবিষয়ক বুদ্ধির প্রকাশময় সেই পরমেশ্বরের নিকট মুক্তিকামী আমি শরণাপন্ন হইয়াছি।
মহাভারতের মতে– 'প্রথমতঃ এই বিশ্বসংসার কেবল ঘোরতর অন্ধকারে আবৃত ছিল। অনন্তর সমস্ত বস্তুর বীজভূত এক অণ্ড প্রসূত হইল। ঐ অণ্ডে অনাদি, অনন্ত, অচিন্তনীয়, অনির্ব্বচনীয়, সত্যস্বরূপ, নিরাকার, নির্ব্বিকার, জ্যোতির্ময় ব্রহ্ম প্রবিষ্ট হইলেন। অনন্তর ঐ অণ্ডে ভগবান্ প্রজাপতি ব্রহ্মা স্বয়ং জন্ম পরিগ্রহ করিলেন।' [ সৃষ্টিবর্ণন, অনুক্রমণিকাধ্যায়, আদিপর্ব, মহাভারত]
১৮১৫ থেকে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের
মধ্যে
রামমোহন রায় বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ,
মাণ্ডূক্যোপনিষদ ও মুণ্ডকোপনিষদ বাংলা অনুবাদসহ প্রকাশ করেন। এবং পৌত্তালিক
ধর্মমতের বিরুদ্ধ বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। এর ফলে রক্ষণশীল ব্যক্তিরা ক্রুদ্ধ হয়ে
তাঁর লেখার প্রতিবাদ করতে থাকেন। এই সকল প্রতিবাদ ছিল কটুক্তিপূর্ণ এবং বিদ্বেষ
ভাবাপন্ন। কিন্তু রামমোহন এসবের প্রতিবাদ করতেন যুক্তি দিয়ে ও ভদ্রভাষায়।
প্রতিবাদ-কর্তাদের মধ্যে প্রথম ও প্রধান ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, এঁর
গ্রন্থের নাম 'বেদান্তচন্দ্রিকা'। বেদান্তচন্দ্রিকা'র প্রতিবাদে রামমোহন
ভট্টাচার্যের তীব্রভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন। এই সময় দ্বারকানাথ ঘোরতর পৌত্তালিক হওয়া
সত্ত্বেও রামমোহনকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে গেছেন। যতদূর জানা যায় তিনি প্রথম
ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করেন ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। গানটি হলো- 'কে ভুলালো হায়'।
ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের শুরুতে, ১৮১৫
খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ১১৩, সারকুলার রোডস্থ ভবনে
রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠা করেন 'আত্মীয় সভা'।
১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দের তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র গোবিন্দদাস, রামমোহনের সম্পত্তির অংশ দাবী
করে। এই সংক্রান্ত মোকদ্দমার কারণে তিনি ব্যস্ত থাকায়, নিয়মিতভাবে 'আত্মীয় সভা'
চালাতে পারেন নি। এর ভিতরে তিনি ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে
কলকাতার গরানহাটায় গোরাচাঁদ বসাকের বাড়িতে
হিন্দু কলেজ স্থাপন করেন। এই সময় তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলেন
প্রিন্স
দ্বারকনাথ ঠাকুর। পরে তিনি হেদু্য়ার কাছে ইংরেজি শিক্ষার জন্য একটি
এ্যাংলো-হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে
রামমোহন তাঁর
‘প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’ বইয়ে প্রমাণ করেন যে, সতীদাহ প্রথা অন্যায় এবং এ
বিষয়ে হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্রে কোনো বিধান নেই। এ নিয়ে সে সময়ে হিন্দু সমাজে ব্যাপক
আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর ভিতরে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দে 'আত্মীয় সভা'
বন্ধ হয়ে যায়। ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইউনিটোরিয়ান কমিটি নামে ধর্মসভা স্থাপন করেন।
পত্রিকার স্বাধীনতা হরণের প্রতিবাদে তিনি মীরাৎ-উল-আখ্বার বন্ধ করে দেন। ১৮২৩
খ্রিষ্টাব্দের ১১ ডিসেম্বরে তিনি নিজ খরচে এ্যাংলো-ইন্ডিয়ান স্কুল স্থাপন করেন।
১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ২০ আগষ্ট (৬ ভাদ্র)
রামমোহনের উদ্যোগে ব্রাহ্ম
মতাদর্শের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে, উত্তর কলকাতার বাঙালি খ্রিষ্টান কমল বোসের
বাড়িতে একটি 'ধর্মসভা'র আয়োজন করেন। এই সভার নামকরণ করা হয়েছিল 'ব্রাহ্মসভা'। এই
সভার স্মরণে প্রতিবৎসর আয়োজন করা শুরু হয়েছিল প্রার্থনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান, আর
এই আয়োজনের নামকরণ করা হয়েছিল 'ভাদ্রোৎসব'। ভাদ্রোৎসব- কোন কোন গান পরিবেশিত
হয়েছিল, তার যৎসামান্য নমুনা পাওয়া যায়। এরূপ একটি নমুনা পাওয়া যায়- বামবোধিনী
পত্রিকার ৬৬১ সংখ্যা [ভাদ্র ১৩২৫, সেপ্টেম্বর ১৯১৮, পৃষ্ঠা: ১৫৫-১৫৯] থেকে। এই
পত্রিকায় প্রকাশিত গানটির শিরোনাম ছিল 'ভাদ্রোৎসবের গান'। গানটির গীতিকার ছিলেন
পুলকচন্দ্র সিংহ। সুর করেছিলেন শ্যামসুন্দর মিশ্র। স্বরলিপিকার ছিলেন মোহিনীসেন
গুপ্তা। ধ্রুপদাঙ্গের এই গানের রাগ ও তাল ছিল- গৌড় মল্লার-চৌতাল।
হিন্দু সমাজে প্রচলিত সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে
রামমোহন রায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই
আন্দোলনের সূত্রে ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বরে লর্ড সতীদাহ প্রথা আইন দ্বারা
বিলোপ করেন। দিল্লীর বাদশাহ তাঁকে রাজদরবারে বাদশাহের ভাতা বৃদ্ধির
সুপারিশের জন্য ইংল্যাণ্ডে পাঠান। এই সময় সম্রাট তাঁকে 'রাজা' উপাধি প্রদান করেন।
সেই থেকে তিন 'রাজা রামমোহন রায়' অভিহিত হয়ে থাকেন। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর
তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ এপ্রিল রামমোহন
লিভারপুলে পৌঁছলেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও
গিয়েছিলেন। সেখানে ফরাসি সম্রাট লুই ফিলিপ কর্তৃক তিনি সংবর্ধিত হন। সেখান থেকে
ফিরে এসে তিনি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে বসবাস করতে থাকেন।
'ধর্মসভা'র প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই বছর পর, ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারি (১১ই মাঘ), রাজা রামমোহন রায়ের উৎসাহে দেবেন্দ্রনাথ
ঠাকুর জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে একটি অনুষ্ঠানের ভিতর দিয়ে ব্রাহ্মসমাজের ঘোষণা দেন।
পরে এই বিশেষ দিনকে
ব্রাহ্মধর্মাবলম্বীরা 'মাঘোৎসব' হিসেবে পালন করা
শুরু করেন।
১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বরে মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায়
৮ দিন জ্বরে ভুগে মৃত্যবরণ করেন। এই সময় দেবেন্দ্রনাথ ও তাঁর ঘনিষ্ট সহযোগী
রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ নিষ্ঠা ও আন্তরিক পরিচর্যার দ্বারা ব্রাহ্মসমাজকে রক্ষা করার
উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তবে দেবেন্দ্রনাথ ততটা ধর্মানুরাগী ছিলেন।
১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের
ভাই ভূপেন্দ্রনাথের
মৃত্যু হয়। এর দুই দিন পরে ২১ জানুয়ারিতে তাঁর মা
দিগম্বরী দেবী মৃত্যবরণ করেন।
এই দুটি মৃত্যুর পর
দ্বারকানাথ নিজের অকস্মাৎ মৃত্যু হতে পারে বিবেচনা করে,
১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ আগষ্টে তিনি তাঁর সন্তান ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের আর্থিক
নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ট্রাস্ট তৈরি করেন। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা'
স্থাপন করেন। এই স্কুলটি সেখানে জনসমাদর লাভ না করায়, স্কুলটি বাঁশবেড়িয়া নামক
গ্রামে স্থানান্তরিত করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত দ্বারকানাথের মৃত্যুর পর স্কুলটি বন্ধ
হয়ে যায়। উল্লেখ
এই ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য, তিনি ১৮৪২ সালে (বৈশাখ ১৭৬৪ শকাব্দ)
তত্ত্ববোধনী সভা'র পরিচালনাভার গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মসমাজের বক্তব্য প্রচারের জন্য
১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ডিসেম্বর 'তত্ত্ববোধিনী' নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
এরপর তিনি তাঁর
২১ জন
আত্মীয়-সহ
আনুষ্ঠানিকভাবে
ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর অবশিষ্ট
আত্মীয়রা
এই সময় তাঁকে পরিত্যাগ করেন।
১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
কলকাতায় ব্রহ্মবিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর কিছুদিন পর তিনি ব্রাহ্মসমাজের গুরুত্বপূর্ণ
কাজকর্ম কেশবচন্দ্রের হাতে ন্যাস্ত করেন। পরে ধর্মীয়
আদর্শের
কারণে
কেশবচন্দ্রের সাথে সংঘাত উপস্থিত হলে ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হয়। কেশবচন্দ্রের
অনুগামী সমাজের নাম হয় 'ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ', পক্ষান্তরে দেবেন্দ্রনাথের
অনুগামী ধর্মের নাম হয়- 'আদি
ব্রাহ্মসমাজ'।
দেবেন্দ্রনাথের
আদি
ব্রাহ্মসমাজ আগের গতানুগতিকভাবে কিছু অনুষ্ঠানের ভিতর দিয়ে চলতে থাকে। কিন্তু
কেশবচন্দ্রের
নেতৃত্বে ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজ নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে।
কেশবচন্দ্রের অসাধারণ
সাংগঠনিক ক্ষমতার কারণে, ব্রাহ্ম যুব সম্প্রদায় কেশবচন্দ্রের পক্ষে চলে যায়। ১৮৬৮
খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে পূর্ব ভারতের ব্রাহ্মসমাজের ৬৫টি শাখার প্রায় সবকয়টি নতুন
সমাজে যোগ দেয়। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে সমগ্র ভারতে ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম সমাজ’
এর শাখার সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১০১-এ।
১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে অক্টোবর ভারতবর্ষীয়
ব্রাহ্মসমাজের এক অধিবেশনে কেশবচন্দ্র ব্রাহ্ম বিবাহ বিধিবদ্ধ করার উৎকৃষ্ট উপায়
নির্ধারণের জন্য, অধিবেশনের সভ্যদের কাছে আবেদন জানান। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে সিভিল
ম্যারেজ বিল নামে এটি উত্থাপিত হয়। এ বিলে বলা হয়, ‘যদি কোনো ব্যক্তি হিন্দু অথবা
মুসলমান অথবা ভারতবর্ষে প্রচলিত অন্য কোনও ধর্মাশ্রিত হয়ে সেই ধর্ম অবিশ্বাস করেন
এবং সেই ব্যক্তি ওই ধর্ম প্রকাশ্যরূপে পরিত্যাগ না করে ওই ধর্মের বিবাহ পদ্ধতি
অনুসারে বিবাহ করেন, তাহলে সেই বিবাহ আদালতে বৈধ বলে গণ্য হবে ’ কিন্তু এ ব্যাপারে
তৎকালীন সমাজের অনেকে বিরোধিতা করে। ফলে এ আইন বিধিবদ্ধ না হয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য
পর্যালোচনা কমিটিতে পাঠানো হয়৷
বিবাহ আইন পাশের বিষয়টির বিতর্ক পাশ কাটিয়ে,
কেশবচন্দ্র তাঁর বিশ্বজনীন ধর্ম প্রচারের
জন্য ১৮৬৯ সালের ২২শে আগস্ট একটি নতুন ধরনের মন্দির নির্মাণ করেন। এই মন্দিরে তিনি
হিন্দুদের মন্দির, মুসলমানদের মসজিদ ও খ্রিষ্টানদের গির্জার স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের
ঘটিয়ে অসম্প্রাদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন।
১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে তিনি ইংল্যান্ড যান এবং সেপ্টেম্বর মাসে ফিরে আসেন।
ইংল্যাণ্ডের সমাজ ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করার পর, তাঁর সংস্কার স্পৃহা আরও বৃদ্ধি
পায়। নভেম্বর মাসে তিনি ‘ইন্ডিয়ান রিফর্ম অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই
প্রতিষ্ঠানের আদর্শ ছিল বদান্যতা, ভোগবিলাস-পানভোজনে মিতাচার, নারীর বৈষয়িক ও
সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, মাতৃভাষায় গণশিক্ষা এবং সুলভে পাঠ সামগ্রী সরবরাহ। এই
সংগঠনের মাধ্যমে কেশবচন্দ্র সমাজ সেবা কমিটি, মদ্যপান বিরোধী সঙ্ঘ, বালিকা
বিদ্যালয়, বয়স্কদের জন্য নৈশ বিদ্যালয়, পেশাভিত্তিক কারিগরি শিক্ষার জন্য শিল্প
বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি কলকাতা এবং এর উপকণ্ঠে চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলেন।
১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাস থেকে তিনি সাপ্তাহিক 'সুলভ সমাচার' নামক একটি
পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। পত্রিকাটির মূল্য ছিল মাত্র এক পয়সা। পত্রিকাটিতে
প্রকাশিত প্রবন্ধের মধ্যে ছিল, ‘প্রজাকুলের দুর্দশা’, ‘দরিদ্রের বিলাপ’, ‘কলকাতার
শ্রমিকদের দুর্দশা’ ইত্যাদি। পত্রিকাটি জনগণের অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের
ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বের ওপরও জোর দেয়।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে উত্থাপিত
সিভিল ম্যারেজ বিল পর্যালোচনার পর,
১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে পাস হয়। এই আইনকে
দেবেন্দ্রনাথ গ্রহণ করতে পারেন নি। ফলে তাঁর সাথে কেশবচন্দ্রের ব্যবধান আরও বৃদ্ধি
পায়। এ আইনে ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিদ্যাসাগরের মতো উদারপন্থী সংস্কারকগণ কর্তৃক
সকল সংস্কার স্বীকৃত হয়েছিল। এর ভিতরে ছিল আন্তবর্ণ ও বিধবা বিবাহ সমর্থন, বাল্য
বিবাহ, স্বামী বা স্ত্রী কর্তৃক দ্বিতীয় বিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ এবং বিবাহ
বিচ্ছেদ স্বীকৃত হয়। বিবাহের রীতি হিসেবে বলা হয়,
সাবালক পাত্র-পাত্রীরা ব্রাহ্ম সমাজ মন্দিরে উপস্থিত
হয়ে স্ব স্ব ধর্মে বহাল থেকে ব্রাহ্ম রীতিতে সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিবাহ করতে
পারেন ৷ মন্দিরের আচার্য বিবাহে পৌরহিত্য করলেও তা রেজিষ্ট্রি করবেন সিভিল ম্যারেজ
রেজিস্ট্রার ৷ ওই রেজিস্ট্রার বাংলাদেশ ব্রাহ্মসমাজ ও আইনগতভাবে নিয়োগকৃত হতে হবে
৷ ব্রাহ্ম বিবাহে সংস্কৃতের পরিবর্তে বাংলায় মন্ত্রোচ্চারণ করতে হয় ৷ বিবাহ শেষে
উপস্থিত অতিথিরা প্রার্থনা সভায় অংশ নেন এবং ব্রাহ্ম সংগীত গেয়ে বর-কনের মঙ্গল
কামনা করেন ৷ এই প্রকার বিয়েতে যৌতুক প্রথা ও অতিথি আপ্যায়নের বাহুল্য থাকবে না ৷
সে সময়ে গোঁড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী
ছাড়াও, আদি ব্রাহ্মসমাজের প্রবীণ ব্যক্তিরা গ্রহণ করতে পারেন নি। সে সময় অনেকে এই
আইনকে 'নাস্তিক্যধর্মী সিভিল ম্যারিজ অ্যাক্ট' হিসেবে বিবেচনা করতে থাকেন।
১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে
কেশবচন্দ্র তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে
গবেষণা ও ধ্যনের জন্য সন্ন্যাসীর আশ্রম হিসেবে 'সাধন কানন' প্রতিষ্ঠা করেন। এই
আশ্রমে তিনি এবং ব্রাহ্ম সমাজের কয়েকজন পণ্ডিতকে ইসলাম, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ এবং
খ্রিষ্টান ধর্মগ্রন্থ বিষয়ে পড়াশোনা এবং ধর্মগ্রন্থগুলোর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ
করার জন্য নিয়োগ দেন। এই সময় তাঁরই অনুপ্রেরণায় গিরিশচন্দ্র সেন কুরাআন শরিফের
বাংলা অনুবাদ করেন। এই সময় কেশবচন্দ্রের সাথে রামকৃষ্ণ-এর নিবিড় ব্যক্তিগত সর্ম্পক
গড়ে ওঠে। ব্রাহ্মসম্প্রদায়ের জীবনকে সর্বজনীন ধর্ম করার নিমিত্তে তিনি ১৮৭৮
খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘ভারত আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন। সম্ভবত রামকৃষ্ণের প্রভাবেই তিনি
ব্রাহ্ম সমাজে যোগাভ্যাস, বৈরাগ্য এবং ঈশ্বরকে মাতৃরূপে আরাধনার সূচনা করেন।
কেশবচন্দ্রের নব্য ভাবনা
অনেকেই গ্রহণ করতে পারেন নি। ফলে অনেকে কেশবচন্দ্রের সংশ্রব ত্যাগ করেন। বিশেষ করে
রামকৃষ্ণের প্রভাবে যোগাভ্যাস, বৈরাগ্য এবং ঈশ্বরকে মাতৃরূপে প্রার্থনা করাকে সনাতন
হিন্দু ধর্মের নব্য রূপ হিসেবে বিবেচনা করতে থাকেন। ফলে ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘সমদর্শী
সভা’ নামে একটি উদারপন্থী দল তৈরি হয়। এর প্রকাশ ঘটে ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে শিবনাথ
শাস্ত্রীর নেতৃত্বে। এর ফলে কেশবচন্দ্রের ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও
দুর্বল হয়ে পড়ে নি। কেশবচন্দ্রের ব্রাহ্মসমাজের উপর বড় আঘাত আসে তাঁর একটি
ব্রাহ্মসমাজ বিরোধী একটি সিদ্ধান্তে। তিনি ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে
জনসম্মুখে কুচবিহারের মহারাজার সাথে কেশবচন্দ্র তার নাবালিকা কন্যা সুনীতি দেবীর
বিবাহের ঘোষণা দেন। এটি ছিল ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’-এর উদারপন্থী এবং রক্ষণশীল
উভয় সম্প্রদায়ের জন্য বড় আঘাত। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে 'ব্রাহ্ম বিবাহ আইন' লংঘন করে
কেশবচন্দ্র তার মেয়ের বিবাহকে ন্যায্যতা দেন এবং বলেন যে, এটি ‘ঈশ্বরের
দূরদর্শিতা’। ফলে ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই মে প্রগতিশীলরা সাংবিধানিক ভিত্তিতে
সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ গড়ে তোলে। এই সময় কেশবচন্দ্রের ব্রাহ্মসমাজ নামহীন দুর্বল
একটি সংগঠনে পরিণত হয়।
১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দের মে
মাসে ‘আর্য নারী সমাজ’ গঠনের মাধ্যমে কেশবচন্দ্র তাঁর সংস্কার কর্মকাণ্ড শুরু করেন।
এক্ষেত্রেও তিনি প্রাধান্য দিয়েছিলেন সনাতন হিন্দু ধর্মের আদর্শের প্রতি। তিনি
অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের নারীদের মুক্তির কথা এ সময় বাদ দেন। আবার একই সাথে তিনি
বিশ্বধর্ম অনুসন্ধানে সচেষ্ট হন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর পরিচালিত
ব্রাহ্মসমাজের নাম দেন ‘নব বিধান'। মূলত তিনি এশিয়ার ‘সর্বেশ্বরবাদ’ ও
‘অতীন্দ্রিয়বাদ’-এর সাথে ইউরোপের বস্তুবাদ ও বিজ্ঞানকে সংমিশ্রণ ঘটাতে চেয়েছিলেন
এই নব্য বিধানে। তিনি সকল ধর্মের উৎকৃষ্ট বিষয়ের সমন্বয় করে একটি উদার মতবাদ
প্রচারের চেষ্টা করতে থাকেন।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে কেশবচন্দ্র তাঁর সমাজের প্রাত্যহিক জীবনের সার্বজনীন আইন ও
পথনির্দেশিকা হিসেবে নবসংহিতা সংকলন করেন। তাঁর সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূলেই ছিল
বিশ্বধর্ম প্রতিষ্ঠা। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জানুয়ারি তাঁর শেষ ভাষণ ‘এশিয়াস
মেসেজ টু ইউরোপ’-এ তিনি বৈজ্ঞানিক একতার ভিত্তিতে নব বিধানের প্রয়োজন পুনরুল্লেখ
করেন। তাঁর সর্বাত্মক চেষ্টা সত্ত্বেও নববিধান জনপ্রিয় হয়ে উঠে নি। সমাজের
অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং তাঁর ভগ্নস্বাস্থ্য এ কর্মকাণ্ডকে স্থবির করে দেয়। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই
জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য তাঁর মৃত্যুর পর নেতৃত্বের অভাবে নববিধান
বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ঢাকায় ব্রাহ্মসমাজ ও তাদের অবদান
১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে
কলকাতা এবং তার আশপাশে ব্রাহ্মধর্মের প্রতি
অনুরক্ত লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তার ঢেউ এক সময় ঢাকাতেও পৌঁছায়। কিছু মানুষ
সংগোপনে ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী হয়ে উঠলেও রক্ষণশীল হিন্দুদের ভয়ে তাঁরা নিজেদের
প্রকাশ করেন নি। ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ঢাকার কিছু ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী নিজেদের
বাসায় সভা করে নিজেদের মধ্যে মত বিনিময়ের ব্যবস্থা করেন। প্রথমদিকে এ বিষয়ে উদ্যোগী
ছিলেন ব্রজসুন্দর মিত্র, যাদবচন্দ্র বসু, গোবিন্দচন্দ্র বসু, নরোত্তম মল্লিক,
রামকুমার বসু প্রমুখ। এরই মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা ব্রাহ্মসমাজ। মুনতাসীর মামুনের ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির
নগরী , প্রথম খণ্ড (পৃষ্ঠা: ১৫৬, প্রথম প্রকাশ: জুন ১৯৯৩, অনন্যা প্রকাশনী) গ্রন্থ থেকে জানা
যায়, ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ প্রথম উপাসনা সভা করে ব্রজসুন্দর মিত্রের
ভাড়াবাড়িতে।
১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ রবিবার সকাল ৯টায়, যাদবচন্দ্রের বাসায় ব্রজসুন্দর
মিত্র, গোবিন্দচন্দ্র বসু, রামকুমার বসু ও বিশ্বম্ভর দাস ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন।
এরপর বেলা ১০টায় দীক্ষা নেন রায়মোহন রায় দীক্ষা নেন।
১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে দুর্গাপূজা এড়াবার জন্য দেবেন্দ্রনাথ স্টিমারযোগে আসামের পথে
যাত্রা করেন। এই সময় তাঁর সময় সাথে ছিলেন রাজনারায়ণ বসু। এই যাত্রাপথে তিনি ঢাকা
ব্রাহ্মসমাজ পরিদর্শন করেন। এই সময় তিনি ঈশ্বরচন্দ্রের বাসায় কয়েকদিন ছিলেন। ঢাকাতে
অবস্থানকালে তিনি ব্রাহ্মসমাজের জন্য উপদেশ দেন।
১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার ব্রাহ্ম সমাজ নারী শিক্ষা প্রসারে একটি বালিকা বিদ্যালয়
স্থাপন করেছিল। এতে সহযোগিতা করেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ ব্রেনান্ড এবং ঢাকা
কলেজিয়েট স্কুলের হেডমাস্টার এফ টিড
(F. Tydd)।
১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রজসুন্দর মিত্রের বাড়িতে ব্রাহ্মসমাজের কার্যক্রম চলাকালে
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকায় ব্রাহ্মসমাজ পরিদর্শনে এসেছিলেন। উনিশ শতকের ষাটের দশকে
কেশবচন্দ্র সেন ও বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ঢাকায় এলে শহরের ছাত্রসহ অনেকে এ মতে দীক্ষা
নিতে উদ্বুদ্ধ হয়।
১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ঢাকায় ব্রাহ্মসমাজ
গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রদায় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই সময় ব্রাহ্মদের জন্য
বাংলাবাজার, লালবাগ ও আরমানিটোলায় ছোট ছোট ব্রাহ্ম-উপাসনালয় গড়ে উঠে।
১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ব্রজসুন্দর মিত্র ও
অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঢাকা কলেজে একটি ‘ল’ ক্লাস (Law class) খোলার আবেদন
জানান। সরকার এ আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৮৬৩ সালেই ঢাকা কলেজে একটি ‘ল’ ক্লাস চালু করেন।
পূর্বে আইন শাস্ত্র পড়ার জন্যে পূর্ব বাংলার মানুষকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে
যেতে হতো।
১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। এর নাম ছিল ঢাকা
ব্রাহ্ম স্কুল। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল চৌধুরী তার বাবার
নামে এই স্কুলটির নামকরণ করেন জগন্নাথ স্কুল। বর্তমানে এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
নামে সুপরিচিত।
১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর পাটুয়াটুলীর মোড়ে বর্তমান ঢাকা ব্রাহ্মসমাজ মন্দির
উদ্বোধন করা হয়। এর পর বিভিন্ন সময়ে দলাদলি ও কোন্দলের কারণে ঢাকাতে আরো কয়েকটি
ব্রাহ্মসমাজের দল গঠিত হয়েছিল।
১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে ‘ঢাকা শুভাসাধনা সভা’ নামে অপর একটি সমাজ সংস্কারক সভা তৈরি করা
হয়।
ব্রহ্মসঙ্গীত
ব্রাহ্মধর্মের অঙ্গ হিসেবে বাংলা সঙ্গীতজগতে একটি নতুন ধারার সূচনা করেন।
ব্রহ্মের উদ্দেশ্যে নিবেদিত এই গান বর্তমানে
ব্রহ্মসঙ্গীত নামে পরিচিত। সম্ভবত তিনি যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতিতে বর্ণিত
'ব্রহ্মগীতি' বা 'ব্রহ্মগীতিকা' নামক একপ্রকার সাধনসঙ্গীত থেকে এই নাম গ্রহণ
করেছিলেন। এর শুরু হয়েছিল রাজা রামমোহনের উৎসাহে।
এই বিচারে ব্রহ্মসঙ্গীতের ধারণাটি অতি সুপ্রাচীন।
রাজা
রামমোহন রায় ছিলেন সে ধারারই যোগ্য উত্তরপুরুষ। প্রথমদিকে তাঁর রচিত গানগুলো
ব্রাহ্মধর্মের অনুসারীরা চর্চা করতেন।
[বিস্তারিত:
ব্রহ্মসঙ্গীত ]