ব্রহ্মসঙ্গীত
রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত ব্রাহ্মধর্মের অঙ্গ হিসেবে রচিত, পরম ব্রহ্মের উদ্দেশ্যে নিবেদিত গানের সাধারণ নাম ব্রহ্মসঙ্গীত। এই সঙ্গীতের আদিপুরুষও ছিলেন তিনি। সম্ভবত তিনি যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতিতে বর্ণিত 'ব্রহ্মগীতি' বা 'ব্রহ্মগীতিকা' নামক একপ্রকার সাধনসঙ্গীত থেকে এই নাম গ্রহণ করেছিলেন। এই বিচারে ব্রহ্মসঙ্গীতের ধারণাটি অতি সুপ্রাচীন। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন সে ধারারই যোগ্য উত্তরপুরুষ। প্রথমদিকে তাঁর রচিত গানগুলো ব্রাহ্মধর্মের অনুসারীরা চর্চা করতেন।  

১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমদিকে রামমোহন কলকাতায় যখন স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন, সে সময় তিনি কালী মীর্জা'র কাছে কিছুদিন রাগসঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর একেশ্বরবাদী দর্শনকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, সঙ্গীতের শক্তিকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে যে গান রচনা করেছিলেন, কালক্রমে তা ব্রহ্মসঙ্গীত নামে অভিহিত হয়েছে। যতদূর জানা যায় তিনি প্রথম ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করেন ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। গানটি হলো
'কে ভুলালো হায়'। তাঁর রচিত দ্বিতীয় গান 'ভয় করিলে যাঁরে না থাকে অন্যের ভয়'। আর শেষ গান রচনা করেছিলেন বিলেতে, ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে।

শুধু তিনি যে গান রচনা করেছিলেন, তাই নয়, তিনি তাঁর অনুসারীদেরও ব্রহ্মসঙ্গীত রচনায় বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তাঁর এবং তাঁর অনুসারীদের রচিত ব্রহ্মসঙ্গীত নিয়ে একটি ক্ষুদ্র সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৫৬ বঙ্গাব্দে। এই সংকলনটির নাম রাখা হয়েছিল 'ব্রহ্মসঙ্গীত'। এই গ্রন্থের ১০৪টি গানের ভিতরে ৬০টি গান ছিল রামমোহন রায়ের, বাকি ৪৪টি গান ছিল তাঁর অনুবর্তীদের। পরবর্তী সময়ে 'রাজা রামমোহন রায়ের সঙ্গীতাবলী' নামক একটি গ্রন্থে ১০৭টি গান প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু এই গ্রন্থের অনেকগানই ছিল অন্যের রচিত। এছাড়া নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রণীত 'মহাত্মা রামমোহন রায়ের জীবন চরিত' গ্রন্থের পঞ্চম সংস্করণে রামমোহনের গান পাওয়া যায় ২১টি। এছাড়া তাঁর গান অন্যান্য যেসকল গ্রন্থে পাওয়া যায়, তা হলো ভারতীয় সঙ্গীত মুক্তাবলী ২১টি, 'সঙ্গীতসংগ্রহ' প্রথমভাগ ২৫টি এবং 'বাঙালির গান'-এ রয়েছে ২৮টি গান।

 

গানের  উল্লিখিত গানগুলো আলাহিয়া, ইমন, ইমনকল্যাণ,  ইমনভূপালী,  কালাংড়া, কুকুভ,  কেদারা, গৌড় মল্লার, জয়জয়ন্তী, টোড়ি, দেশ, বাগেশ্রী, বাহার, বিভাস, বেহাগ, ভৈরব, ভৈরবী, রামকেলি, লুম  ঝিঁঝিট, সরফরদা, সাহানা, সিন্ধুভৈরবী, সুরট। সেকালে নিধুবাবু এবং কালীমির্জার টপ্পা কলকাতার সঙ্গীতপিপাসুদের আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তাছাড়া রামমোহন কালীমির্জার শিষ্য হ‌ওয়ার সূত্রে, টপ্পার তালিম পেয়েছিলেন এটা বুঝা যায়, তাঁর গানের তালের নাম দেখে। তাঁর অধিকাংশ গানই আড়াঠেকায় নিবদ্ধ, যা টপ্পার কথাই মনে করিয়ে দেয়। কিছু গানে ঝাঁপতাল বা তেওড়া তাল নিবদ্ধ। বিভিন্ন গ্রন্থে সংকলিত রামমোহন রায়ের গানে ধ্রুপদে ব্যবহৃত চৌতাল, সুরফাঁকতালের মতো বিশুদ্ধ ধ্রুপদী তালে নিবদ্ধ গান নেই। এ দেখে এই গানগুলো ধ্রুপদাঙ্গের মনে হতেই পারে। কিন্তু যথার্থ ধ্রুপদের তালের বিচারে এই দুটি তাল নিম্নবর্ণের। এ গানগুলোরও চলন টপ্পার মতো ছিল কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। উল্লেখ্য, রামমোহনের গানে সব মিলিয়ে যে তালগুলো পাওয়া যায়, তা হলো আড়া, আড়াঠেকা, কাওয়ালি, একতাল, ঝাঁপতাল, ঠুংরি, ধামার, যৎ।

১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে রামমোহন ব্রাহ্মসমাজের গায়ক হিসেবে কৃষ্ণপ্রসাদ এবং বিষ্ণুচন্দ্র নামক দুই ভাইকে নিযুক্ত করেন। যদিও এঁরা ধ্রুপদ-শিল্পী ছিলেন। কিন্তু এঁদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, রামমোহন ধ্রুপদ রচনা শুরু করতে পারেন নি। কারণ এই বৎসই তিনি বিলেতে যান এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। উল্লেখ্য রামমোহন রায়ের ব্রহ্মসঙ্গীত নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে।

 

ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের শুরুতে, ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ১১৩, সারকুলার রোডস্থ ভবনে প্রতিষ্ঠা করেন 'আত্মীয় সভা'। এই সময় দ্বারকানাথ ঘোরতর পৌত্তালিক হওয়া সত্ত্বেও রামমোহনকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে গেছেন।  গানটি হলো কি স্বদেশ কি বিদেশে যখন যেথায় থাকি'।  আদি ব্রাহ্মসমাজ নামক গ্রন্থমালার ৬০টি গানের ভিতরে তাঁর কিছু গান ছিল, কিন্তু কোনো গানের সাথেই তাঁর নামের উল্লেখ নেই।
 

তাঁরই অনুপ্রেরণায় ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ২০ আগষ্ট তারিখে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ব্রাহ্মসমাজ গঠিত হয়। এই বৎসরেই ব্রহ্মসঙ্গীত নামক একথি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে রাজা রামমোহন রায় এবং অন্যান্যদের রচিত গান গৃহীত হয়েছিল। এই গ্রন্থে অন্যান্য যাঁদের গান গৃহীত হয়েছিল, তাঁরা হলেন কৃষ্ণমোহন মজুমদার, নীলমণি ঘোষ, নীলরতন হালদার, গৌরমোহন সরকার, কালীনাথ রায়, নিমাইচরণ মিত্র, ভৈরবচন্দ্র দত্ত ও রামচন্দ্র দত্ত। সুরের বিচারে এই গানগুলিতে বাংলার লোকগীতির কোনো ছাপ পাওয়া যায় না। সবই ছিল রাগভিত্তিক এবং ধ্রুপদাঙ্গের।
 

রাজা রামমোহন রায় ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বরে মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হন ইংল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন। এই সময় ব্রাহ্মধর্ম টিকে থাকবে কিনা এ নিয়ে অনেকে সংশয় উপস্থিত হয়েছিল।  দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মধর্মের সদস্য ছিলেন বটে কিন্তু এই ধর্মের প্রতি, তখন পর্যন্ত ততটা নিষ্ঠাবান হয়ে উঠতে পারেন নি। ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্কুল ছেড়ে, তাঁর পিতা প্রিন্স দ্বারকনাথ ঠাকুর-এর প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের কোষাধ্যক্ষ রমানাথ ঠাকুরের অধীনে শিক্ষানবীশ হিসাবে যোগদান করেন। এই সময় ইনি নানা প্রকার মোদ-প্রমোদের মধ্য অতিবাহিত করেন। ফলে তাঁর অভিভাবকরা তাঁর বিবাহের ব্যবস্থা করেন। ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে যশোহরের রামনারায়ণ চৌধুরীর কন্যা সারদাসুন্দরী দেবীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে এঁর পিতামহী অলকা দেবীর মৃত্যুর পর এঁর জীবনধারা পরিবর্তিত হয়ে যায়। এই সময় তিনি ভারতীয় ও ইউরোপীয় ধর্ম ও দর্শনপাঠে ত্মনিয়োগ করেন। এরপর ইনি সকল ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্য থেকে উপনিষদকে যথার্থ গ্রন্থ হিসাবে নির্বাচিত করেন। মূলতঃ উপনিষদের চর্চা ও এর বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই অক্টোবর (২১ই শ্বিন ১২৪৬ বঙ্গাব্দ) তারিখে জোড়সাঁকোর-বাড়ির একটি ছোটো ঘরে দশজন ত্মীয় ও বন্ধু নিয়ে 'তত্ত্বরঞ্জিনী সভা' স্থাপন করেন। এই সভার দ্বিতীয় অধিবেশনে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ সভার চার্য পদ গ্রহণ করলে– চার্য এই নাম পরিবর্তন করে রাখেন– 'তত্ত্ববোধিনী'। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে ইনি 'তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা' স্থাপন করেন। এই স্কুলটি সেখানে জনসমাদর লাভ না করায় স্কুলটি বাঁশবেড়িয়া নামক গ্রামে স্থানান্তরিত করেন এবং শেষ পর্যন্ত দ্বারকানাথের মৃত্যুর পর স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ডিসেম্বর তত্ত্ববোধিনী' নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ইনি ২১ জন ত্মীয়-সহ নুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর অবশিষ্ট ত্মীয়রা এই সময় তাঁকে পরিত্যাগ করেন। ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রহ্মসঙ্গীতের একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এর নাম ছিল নির্গুণস্তোত্র

এই সময় থেকে ব্রহ্মসঙ্গীতের একটি প্রবল ধারা শুরু হয়। এই সময়
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে এর আগে ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের পরে সচল হলো প্রবল বেগে। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল তাঁর সঙ্গীসাথীদের সাথে। পারিবারিক পরিবেশে ব্রাহ্মধ্র্ম এবং ব্রহ্মসঙ্গীত একাককার হয়ে গিয়েছিল। সেই সূত্রে দেবেন্দ্রনাথের পুত্ররাও এর সাথে যুক্ত হলেন। এই সময়ের ব্রহ্মসঙ্গীত রচনায় যাঁদের নাম পাওয়া যায়, তাঁরা হলেন- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মসঙ্গীত
পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর অগ্রজদের সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মসঙ্গীত দিয়ে তাঁর গানের খাতা খোলেন। তাঁর রচিত প্রথম ব্রহ্মসঙ্গীতটি ছিল গান '
গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে'। মঙ্গলবার, ১১মাঘ ১২৮১ বঙ্গাব্দ [২৫ জানুয়ারি ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দ], আদি ব্রাহ্মসমাজের পঞ্চচত্বারিংশ (৪৫) সাংবৎসরিক মাঘোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব রবীন্দ্রনাথকৃত এই গানটি সন্ধ্যাবেলার উপাসনায় পরিবেশিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ এই অনুবাদটি ঠিক কোন সময় করা হয়েছিল, তা জানা যায় না। কিন্তু অনুমান করা যায়- অনুবাদকৃত এই কবিতাটিতে সুরারোপ করা হয়েছিল পঞ্চচত্বারিংশ (৪৫) সাংবৎসরিক মাঘোৎসবের কিছু আগে। এই বিচারে বলা যায়- এই ভজনটি বাংলা গান হিসাবে তৈরি হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ১৩ বৎসর বয়সে। এই গানটি অনুবাদকৃত একটি শিখভজন। এঁরপর ১২৯২ বঙ্গাব্দে (১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে) তাঁর রবিচ্ছায়া নামক গীতিগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে ৭৪টি ব্রহ্মসঙ্গীত গৃহীত হয়েছিল। প্রথমদিকের গ্রন্থগুলিতে রবীন্দ্রনাথের রচিত ব্রহ্মসঙ্গীতগুলো আলাদা শিরোনামে থাকতো।  এই গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে গানের বহি ও বাল্মীকি প্রতিভা  (১৮৯৩), কাব্যগ্রন্থাবলী (১৮৯৬), কাব্যগ্রন্থ (১৯০৩), রবীন্দ্রগ্রন্থাবলী (১৯০৪) গান (১৯০৮।

 

গান গ্রন্থের ১৯০৯ সংস্করণে ভাবের বিচারে গানগুলোকে সাজানোর প্রথম উদ্যোগ নেন। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে ব্রহ্মসঙ্গীত অংশের নতুন নাম দেওয়া হয়েছিল 'ধর্মসঙ্গীত'। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথের সকল গান নিয়ে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে গীতবিতান -এর প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড এবং ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে এর তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হলো। তিনখণ্ডের এই গ্রন্থে 'ব্রহ্মসঙ্গীত' বা 'ধর্মসঙ্গীত' শিরোনামে কোনোটিই রইলো না। গীতবিতান-এর ১৩৪৮ সংস্করণে 'পূজা' পর্যায়ে অধিকাংশ ব্রহ্মসঙ্গীত গৃহীত হলেও, কিছু গান ভিন্ন শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ গীতবিতানের পূজা পর্যায়ের গানগুলোকে এক কাতারে রেখেছিলেন বটে, কিন্তু তিনি নিজেই এতে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। ফলে তিনি এই গানগুলোকে আরও কিছু উপভাগে বিভক্ত করেছিলেন। এই ভাগগুলো হলো- গান, বন্ধু, প্রার্থনা, বিরহ, সাধনা ও সংকলন, দুঃখ, আশ্বাস, অন্তর্মুখে, আত্মবোধন, জাগরণ, নিঃসংশয়, সাধক, উৎসব, আনন্দ, বিশ্ব, বিবিধ, সুন্দর, বাউল, শেষ, পরিণয় (আনুষ্ঠানিক)।

তিনি অদ্বৈতবাদ ব্রহ্মসঙ্গীতের জ্ঞানভিত্তিক প্রকাশকে ভক্তিবাদে পরিণত করেছিলেন। ঠাকুরবাড়ির সাথে সম্পৃক্ত বিষ্ণ চক্রবর্তী, যদুভট্ট, রামপতি বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজচন্দ্র রায়, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামীদের কলাবিদদের হাতে ব্রহ্মসঙ্গীত পৃথকধারায় ধ্রুপদ সঙ্গীতে পরিণত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সমৃদ্ধ করেছিলেন গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণীজনেরা। এঁরা খেয়াল গান করলেই ব্রহ্মসঙ্গীতে সে ধ্রুপদের গম্ভীর চালটা বজায় রেখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মসঙ্গীতে ধ্রুপদের চলনে রাগাশ্রয়ী ব্রহ্মসঙ্গীতের পাশাপাশি লোকসঙ্গীতের সুরও এসেছে।


সূত্র :
রবীন্দ্রসঙ্গীত মহাকোষ। প্রবীরগুহ ঠাকুরতা। দে'জ পাবলিশিং। জানুয়ারি ২০০৮, মাঘ ১৪১৪।
রবিজীবনী ১-৯ খণ্ড। প্রশান্তকুমার পাল।
রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মসংগীত। দিলীপকুমার বিশ্বাস। দেশ সাহিত্য সংখ্যা ১৩৯৩।