শাহআলম দ্বিতীয়
(১৭২৮-১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দ)
মোগল সাম্রাজ্যের ষোড়শ সম্রাট। তাঁর অন্যান্য নাম আলী গওহর বা আলী গৌহার১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন
আলমগীর দ্বিতীয়। মায়ের নাম নওয়াব জিনাত মহল।

তাঁর সময়ে মোগল সাম্রাজ্য প্রায় ভেঙে পড়েছিল। তাঁর পূর্বর্তী সম্রাট আগের
তৃতীয় শাহজাহানের রাজত্বকালে ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে আবদালির আক্রমণকারী বাহিনীকে তাড়িয়ে দেয় মারাঠারা এই সময় সদাশিবরাও ভাউ তৃতীয় শাহজাহানকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর মারাঠা নিয়ন্ত্রণে শাহ আলমকে সম্রাট ঘোষণা দেন।

১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে
আবদালি ভারত আক্রমণ করেন এবং পাঞ্জাব থেকে মারাঠাদের উৎখাত করেন। এরপর তিনি মারাঠাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। পানি পথে বালাজি রাওয়ের মারাঠা বাহিনীর সাথে আব্দালির যুদ্ধ হয়। ‌এই যুদ্ধে বালাজি পরাজিত হন।

ইতিমধ্যে বঙ্গদেশে
নবাব সিরাজদৌল্লার পতনের পরে মীরজাফর রাজত্ব চলছিল। ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে
লর্ড ক্লাইভ ইংল্যান্ডে ফিরে গেলে, ইংরেজরা নানা কারণে মীরজাফরের প্রতি বিরূপ আচরণ শুরু করে। ইংরেজরা ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে মীরকাশিমকে সিংহাসনে বসায়। এর বদলে মীর কাসিম কোম্পানির প্রধান প্রধান ব্যক্তিদের প্রচুর উপঢৌকন দেন এবং বর্ধমান, মেদেনীপুর ও চট্টগ্রাম ইংরেজদের দান করেন। তবে তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা। নবাব এ সময় কয়েকজন হিন্দু কর্মচারী, জমিদার ও ব্যবসায়ীর অবাধ্যতায় বিরক্ত হয়ে ওঠেন। এ জন্য আজিমাবাদের নায়েম নাযিম রামনারায়ণ, গুপ্ত পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা রাজা মুরলী ধর এবং রাজবল্লভ, জগৎশেঠ ও অন্যদের গ্রেফতার করেন। ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র করার অপরাধে রামনারায়ণ, রাজবল্লভ, উমেদরায়, জগৎশেঠ এবং আরো কয়েকজনের প্রাণদণ্ড হয়। ইংরেজদের প্রভাব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য মীর কাসিম তার রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গের এ স্থানান্তর করেন। বিলম্বিত বোধোদয়ের কারণে তিনি ইংরেজদের বিনাশুল্কে বে-আইনি ব্যবসায় নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করেন। কোম্পানির কর্মকর্তারা এর বিরোধিতা করায় তিনি সব বণিকের পণ্যদ্রব্যের ওপর হতে শুল্ক রহিত করে দেন। এই ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যে ইংরেজদের একচেটিয়া ও বিশেষ সুবিধা নষ্ট হয়। কারণ এর ফলে তাদের অন্য বণিকদের সাথে সমপর্যায়ে ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা করতে হতো। এ সব কারণে মীর কাসিমের সাথে ইংরেজদের স্বার্থের সংঘাত দেখা দেয়। ১৭৬৩ সালে ইংরেজদের সাথে তার সংঘর্ষ বেধে যায়। কাটোয়া, মুর্শিদাবাদ, গিরিয়া, সুতি, উদয়নালা ও মুঙ্গেরের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীর কাসিম ক্ষমতাহারা অবস্থায় অযোধ্যায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে  কোম্পানির কর্মকর্তারা দ্বিতীয়বার মীরজাফরকে বাংলার সিংহাসনে বসায়।

মীর কাসিম অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও শেষ মোগল সম্রাট (শাহ্ আলম) সাথে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর তাদের সম্মিলিত সৈন্যবাহিনীর সাথে বক্সার নামক স্থানে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়। বক্সারের এই যুদ্ধে ইংরেজেরা জয়লাভ করে। বক্সার যুদ্ধের পর ইংরেজেরা অযোধ্যাও দখল করে নেয়। সুজাউদ্দীন রোহিলাখণ্ডে আশ্রয় নেন। এমন প্রেক্ষাপটে শাহ আলম ইংরেজদের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হন।  এসকল কারণে মোগল সাম্রাজ্যের ক্ষমতা বিপুলভাবে হ্রাস পায়। ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৯ নভেম্বর তিনি মৃত্যবরণ করেন। এরপর রাজত্ব লাভ করেছিলেন দ্বিতীয় আকবর।

তাঁর ৫জন স্ত্রী ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
 


সূত্র: