রশিদউদ্দিন হামাদানির চিত্রকর্ম, ১৪শ শতাব্দী

তোলুই খান
(১১৯২-১২৩২ খ্রিষ্টাব্দ)
মঙ্গোলীয় শাসক। তোলুই খান ছিলেন চেঙ্গিশ খানের চতুর্থ ছেলে। ১২২৭ সালে চেঙ্গিশ খানের মৃত্যুর পর, মঙ্গোলিয়ার তত্ত্বাবধায়ক শাসক ছিলেন।

চেঙ্গিশ খানের উত্থানের সময় তোলুই খান খুব ছোট ছিলেন। তাঁর পাঁচ বছর বয়সে এক তাতার তাকে হত্যা করার চেষ্টা করলে, তাঁর বোন আলতানি ও চেঙ্গিস খানের দুই সঙ্গী সে সময় তাকে রক্ষা করেন।

পারাবরিক ঐতিহ্য অনুসারে শৈশব থেকে তিনি যুদ্ধবিদ্যা রপ্ত করতে থাকেন। ১২১১ খ্রিষ্টাব্দে দিকে চেঙ্গিশ খান চীনের রাজার যে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন, ওই অভিযানে তিনি প্রথম অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, ১২১৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে অনুষ্ঠিত লড়াইয়ে চেঙ্গিশ খান  বাহিনী চীন রাষ্ট্রের সৈন্যদের কাছ থেকে তিন হাজার ঘোড়া ও অজস্র মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। যুদ্ধে পরাজয়ের পর, চীনের রাজা জুনডু থেকে পালিয়ে  বিনলিয়েন নামক একটি জায়গায় চলে যান।

নিশাপুরের প্রতিরক্ষাকারীরা তোলুইয়ের শ্যালক তোকুচারকে ১২২০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে হত্যা করেছিল। এর প্রতিশোধের জন্য চেঙ্গিশ খান তাঁকে খোরাসনে পাঠান। ১২২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খোরাসন জয় করে, নিশাপুর ও মার্ভে‌র সকল বাসিন্দাকে হত্যা করা হয়েছিল।
১২২৭ খ্রিষ্টাব্দে চেঙ্গিশ খান -এর মৃত্যুর পর মোঙ্গলীয় সিংহাসনের অন্তর্বতী শাসক হিসেবে দুই বছর মঙ্গোলিয়া শাসন করেন। যোদ্ধা এবং সেনাপতি হিসেবে তোলুই খান উপযুক্ত হলেও রাজনৈতিকভাবে অধিক সক্ষম হওয়ায় চেঙ্গিশ খান - তাঁর তৃতীয় পুত্র ওগেদাই খানকে নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু চেঙ্গিশ খানের মৃত্যুর পর, তাঁর বিশাল সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এবং রাজ্যের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দক্ষ সেনাপতির প্রয়োজন ছিল। এই পরিস্থিতিতে তোলুই খান যোগ্য ছিল। তাই চেঙ্গিশ খান -এর মৃত্যুর পরই ক্ষমতায় আসেন তোলুই খান। তিনি দুই বছরের ভিতরে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করেন এবং সাম্রাজ্যের ভিত মজবুত করেন। এরপর ১২২৯ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট নির্ধারণের জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এই নির্বাচনে ওগেদাই খাননির্বাচিত হন। এরপর তিনি ওগেদাই খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে, তিনি সেনাবাহিনীতে ফিরে যান।

১২৩১-৩২ খ্রিষ্টাব্দে তোলুই উত্তর চীনে ওগেদাই খান-এর সাথে অভিযানে অংশ নিয়েছেন। জিন রাজধানী কাইফেঙে দুইটি বাহিনী প্রেরণ করা হয়েছিল। ওগেদাই খান-এর বাহিনী জিনদের অধিকাংশ প্রতিরক্ষা ভেদ করেন। কিন্তু হঠাৎ ওগেদাই খান অসুস্থ হয়ে পড়লে, মোঙ্গলীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। চিকিৎসকরা কোনো ভাবে ওগেদাই খানকে সুস্থ করতে না পেরে ওঝা'র শরণাপন্ন হন। ওঝার জানান যে, চীনের মাটি ও পানির প্রেতাত্মার কারণে ওগেদাই অসুস্থ হয়েছেন। পরিবারের কেউ নিজেকে উৎসর্গ করলে ওগেদাই সুস্থ হয়ে উঠবেন। এরপর তোলুই বিষাক্ত পানীয় পান করে নিজেকে উৎসর্গ করেন এবং ওগেদাই সুস্থ হন। অনেকর মতে অত্যাধিক মদ্যপানের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।

তোলুইয়ের অনেক স্ত্রী ও উপপত্নী ছিল। তাদের মধ্যে সোরগাগতানি বেকি ছিলেন প্রধান। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পত্নীরা ছিলেন সারুক খাতুন, লিঙ্কুন খাতুন, নায়ান খাতুন, ডোকুজ খাতুন। 

তোলুইয়ের প্রধান পত্নী সোরগাগতানি বেকির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মঙ্গ্‌কে খান (১২০৯-১২৫৯ খ্রিষ্টাব্দ), কুবলাই খান, হালাকু খান, আরিক বোকে। এদের ভিতরে চেঙ্গিশ খানের উত্তরসূরী হিসেব কুবলাই খান, হালাকু খান  ইতিহাসে ধ্বংস ও হত্যার জন্য কুখ্যাত হয়ে আছে ইতিহাসে।