কুবলাই খান
(১২১৫-১২৯৪ খ্রিষ্টাব্দ)
মোঙ্গল জাতির অন্যতম যোদ্ধা এবং চীনের রাজা। ১২১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি ছিলেন চেঙ্গিশ খানের প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রের রাজা। উল্লেখ্য তিনি ছিলেন চেঙ্গিশ খানের কনিষ্ঠ পুত্র তোলুই খানের চতুর্থ পুত্রসন্তান। তাঁর মা ছিলেন উদারতাবাদী নেস্টেরিয়ান খ্রিস্টান পরিবারের কন্যা। নাম ছিল সোরঘাঘতানি বেকি।

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে চেঙ্গিশ খানের মৃত্যুর পর মঙ্গোলিয়ার তত্ত্বাবধায়ক শাসক হিসেবে অধিষ্ঠিত হন তোলুই খান। কিন্তু ১২২৯ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত সম্রাট নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়ে মোঙ্গল সিংহাসনে বসেন চেঙ্গিশ খানের তৃতীয় পুত্র ওগেদাই খান। ১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ওগেদাই খান কুবলাইকে চীনের হেবেই প্রদেশের ১০,০০০ পরিবার বসবাসকারী একটি অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি এই অঞ্চলের প্রধান প্রশাসক ছিলেন না। মূলত তিনি মূল প্রশাসকের সহায়তাকারী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তবে রাজবংশের সন্তান এবং সুদক্ষ সৈনিক হিসেবে তাঁকে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সমীহ করতেন। এই সময় মোঙ্গলরা স্থানীয় চাষীদের কৃষিখামারগুলো ধ্বংস করে দিয়ে চারণভূমি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এর ফলে এই অঞ্চলের জনসংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় এবং সেই সাথে রাজস্বও কমে যায়। কুবলাই এই অঞ্চলে পুনরায় কৃষি খামার গড়ের তোলার উদ্যোগ নেন। ফলে দ্রুত এই অঞ্চলে জনসংখ্যা এবং রাজস্ব বৃদ্ধি পায়। 

১২৪৬ খ্রিষ্টাব্দে
ওগেদাই খানের মৃত্যুর পর সম্রাট হন গুয়ুক খান । ১২৪৮ খ্রিষ্টাব্দে গুয়ুক খানের মৃত্যুর ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্য লাভ করেন মঙ্গ্‌কে খান এই সম্রাটের আমলে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে উত্তরাঞ্চলের কুবলাই ভাইসরয় হিসেবে দায়িত্ব পান।

১২৫২ খ্রিষ্টাব্দে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হন। তিনি চীনের ইউনান, সিচুয়ান অঞ্চলের বিদ্রোহ দমন করেন।

১২৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে তিনি এই অঞ্চলে মোঙ্গল আধিপত্যকে সুসংহত করেন। এই সময় তিনি এই অঞ্চলে একটি প্রশাসনিক রাজধানী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এই রাজধানীর নাম দেওয়া হয় শং-তু বা জিনু নামে অভিহিত করা হয়।

১২৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মঙ্গ্‌কে খানের মৃত্যুর পর মোঙ্গলদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। মৃ্ত্যুর পূর্বে মঙ্গ্‌কে খান তাঁর উত্তরাধিকার ঘোষণা না করায়, এই গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে কুবলাই খান রাজত্বে অধিষ্ঠিত হলে, তার ছোট ভাই আরিক বোকে এর বিরোধিতা করেন।  ১২৬০ খ্রিষ্টাব্দে এই বিরোধ যুদ্ধে রূপলাভ করে। শেষ পর্যন্ত ১২৬৪ খ্রিষ্টাব্দে হালাকু খান এবং অন্যান্য মোঙ্গল সেনাপতিদের সহায়তায় কুবলাই মোঙ্গল সাম্রাজ্যের অধিপতি হন।

ইতিমধ্যে কুবলাই খান চীন অভিযান চালিয়ে সাফল্য লাভ করেন। তাঁর এই প্রভাব মঙ্গোলিয়া থেকে পূবের তিব্বত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। ১২৬০ খ্রিষ্টাব্দে কুবলাই খান 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পাকে জাতীয় ধর্মশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এই শিক্ষকের মাধ্যমে তিব্বতী ও মোঙ্গলদের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্ম ও রাষ্ট্র পারস্পরিক সম্পর্কের এক রাজনৈতিক সূচনা  ঘটেছিল। তিনি কুবলাই খানের নির্দেশে নতুন লিপি তৈরি করেছিলেন।

১২৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেইজিং শহরর নতুন রাজধানী স্থাপন করেন। তিনি এই শহরের নাম রাখেন তাতু (বৃহৎ নগরী)। ১২৭১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি চীনের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। মূলত তাঁর মাধ্যমেই চীনে ইউয়ান রাজবংশের পত্তন হয়েছিল।

১২৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র :