বিষয়: নজরুল সঙ্গীত
শিরোনাম: ফিরিয়া যদি সে আসে আমার খোঁজে ঝরা 
		গোলাবে।
	
		
			ফিরিয়া যদি সে আসে আমার খোঁজে ঝরা 
		গোলাবে।
আনিয়া সমাধি পাশে আমার বিদায় বাণী শোনাবে
		॥
			          
			 বলিও তারে এখানে এসে
              
		ডাকে যেন মোর নাম ধ'রে সে,
রবাব যবে কাঁদিবে রমলা সুরের কোমল রেখাবে॥
			          
			 তৃষিত মরুর ধূসর গগন
              
		যেমন হেরে  মেঘের স্বপন,
তেমনি দারুণ তিয়াসা লয়ে কাটিল আমার বিফল 
			জীবন 
একটি ফোঁটা আঁখি-জল ঝরে যেন তার হাতের শরাবে॥
		
	
	- ভাবসন্ধান: নজরুল তাঁর নতুন রাগ সৃষ্টির প্রেরণা থেকে 
	সৃষ্টি করেছিলেন নতুন রাগ 'রমলা'। তিনি এই গানটি রচনা করেছিলেন
	এই রাগের সুর-শৈলীতে। 
	গীতা মিত্রের কণ্ঠে এই গানটি টেপ-রেকর্ডারের মাধ্যমে টেপে প্রথম ধারণ করা 
	হয়েছিল।  
 
 এই গানটিতে পাওয়া যায় কোনো এক বিরহীর, অভিমানী মনের কথা। এই বিরহীর প্রেমিকা 
	তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বহু আগে। সারাজীবনে আর তাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয় নি। শেষ 
	জীবনে তার পরম আক্ষেপের কথা তার কোনো এক কাছের মানুষের কাছে ব্যক্ত করেছেন। 
	জানিয়েছে জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা। উদ্দেশ্য, যদি কখনো তার প্রেমিকা ফিরে আসেন, 
	তাহলে প্রেমিকের মনের কথা যেন তাকে জানায়।
 
 প্রেমিক ধরেই নিয়েছেন যে, প্রেমিকা তাঁর জীবদ্দশায় ফিরে আসবে না। তারপরেও 
	প্রেমিক প্রত্যাশা রাখেন যে, হয়তো তাঁর মৃত্যুর পর প্রেমিকা আসতে পারে। আর যদি 
	তিনি তাঁর খোঁজে আসেন, তাহলে তাকে যেন তাঁর সমাধির পাশে আনা হয় এবং তাঁকে তাঁর 
	(প্রেমিকের) শেষ বিদায়ের বাণী শোনানো হয়। সমাধির পাশে বসে সে যেন তার নাম ধরে 
	ডাকে। তাঁর বিরহের বিলাপ ধ্বনি যেন রবাবের সুরে করুণ হয়ে ধ্বনিত হয়- রমলা রাগের 
	কোমল ঋষভের (কোমল রেখাব) করুণ স্পর্শে। গানের এই অংশে নজরুল রমলা রাগের কোমল 
	ঋষভের প্রয়োগের বিশেষ দিক নির্দেশও দিয়েছেন। গানের এই অংশে কোমল রেখাব শব্দের 
	সুরবিন্যাস করেছেন স জ্ঞা জ্ঞঋ  ঋম জ্ঞজ্ঞ ঋ স। এই স্বর বিন্যাস অনেকটাই 
	রাগ ভৈরবীর মতো।
 
 মরুভূমির ধূসর আকাশ যেমন করে- মেঘ সঞ্চারের স্বপ্ন দেখে, এই গানের প্রেমিকও 
	তেমনি প্রেমের মিলনের স্বপ্ন নিয়ে সারাজীবন অতিবাহিত করেছে। তাঁর কাছে মনে হয়েছে 
	এই আকাঙ্ক্ষা ছিল মরুভূমির ধূসর আকাশ স্বপ্নের মতো রুক্ষ, নিস্ফল। এই বিফলতার 
	মধ্য দিয়ে কেটেছে তাঁর ব্যর্থ জীবন। তাই তাঁর শেষ কামনা- প্রেমিকা যদি ফিরেই আসে, 
	তাহলে তাঁর এই ব্যর্থ ভালোবাসার জন্য যেন একটু অশ্রু ঝরে পড়ে তার মদির হাতে। 
	সমাধিতে রাখা সে হাতের স্পর্শে যেন ব্যর্থ জীবনের কামনাকে প্রশমিত করতে পারে।
 
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু 
	জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মে (শনিবার ২৮ বৈশাখ ১৩৪৭), সন্ধ্যা 
	৭.০৫-টায় কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে নজরুল-সৃষ্ট রাগ নিয়ে তৈরি 'নব রাগমালিকা' 
	গীতিনাট্যের দ্বিতীয়
		পর্ব প্রচারিত হয়েছিল। এই গানটি ছিল এই পর্বের
	
	চতুর্থ গান। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল 
	৪০ বৎসর ১১ মাস।
 
- 
	
	গ্রন্থ:
		- 
		সন্ধ্যা মালতী 
				[শ্রাবণ ১৩৭৭ বঙ্গাব্দে (জুলাই-আগষ্ট ১৯৭০)।
- নজরুল রচনাবলী সপ্তম খণ্ড [কার্তিক 
					১৪১৯, নভেম্বর ২০১২। সন্ধ্যামালতী। 
					৩। পৃষ্ঠা 
					১২-৮]
					
- অপ্রকাশিত নজরুল সংগীত স্বরলিপি-
		 প্রথম খণ্ড (নজরুল ইনস্টিটিউট, আশ্বিন ১৪২২। অক্টোবর ২০১৫) ৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৩৩-৩৪।
[গানটি কাজী নজরুল ইসলামের নিকট শিল্পী গীতা মিত্র (বসু) শিখেছিলেন। শিল্পীর স্বকণ্ঠে যন্ত্রানুষঙ্গ-বিহীন টেপে ধারণকৃত এবং সংগৃহিত ড. ব্রহ্মমোহন ঠাকুরের কাছ থেকে প্রাপ্ত সুর অনুযায়ী স্বরলিপিটি প্রণয়ন করা হয়েছে। সূত্র: শৈল দেবীর গানের খাতা]
			
- সঙ্গীত-গবেষক নজরুল। প্রথম পর্ব। 
		শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। [নজরুল 
		ইন্সটিটিউট, কবিভবন। জ্যৈষ্ঠ ১৪২১, মে ২০১৪)।
		 পৃষ্ঠা: ৭৪-৭৬।
 
 
- বেতার: 
	
		- নবরাগ মালিকা। 
				দ্বিতীয় পর্ব। ১১ মে ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ- (শনিবার ২৮ বৈশাখ 
				১৩৪৭)। সন্ধ্যা 
				৭.০৫টা। চতুর্থ গান]
 
 
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম। 
	
- স্বরলিপিকার: 
	
		- অসিত রায়। [অপ্রকাশিত নজরুল সংগীত স্বরলিপি, প্রথম খণ্ড (নজরুল ইনস্টিটিউট, আশ্বিন ১৪২২। অক্টোবর ২০১৫)]
			পৃষ্ঠা: ৩৩-৩৪।[নমুনা]
 
- বিষয়াঙ্গ: নাট্যগীতি [প্রেম]
- সুরাঙ্গ: 
		
		খেয়ালাঙ্গ