বিদায়ের বেলা মোর ঘনায়ে আসে।
দিনের চিতা জ্বলে অস্ত আকাশে॥
দিন শেষে শুভদিন এলো বুঝি মম
মরণের রূপে এলে মোর প্রিয়তম,
গোধূলির রঙে তাই দশ দিশি হাসে॥
দিন গুণে নিরাশার পথ-চাওয়া ফুরালো,
শ্রান্ত এ জীবনের জ্বালা আজ জুড়ালো।
ওপার হ'তে কে এলো তরী বাহি'
হেরিলাম সুন্দরে, আর ভয় নাহি,
আঁধারের 'পারে তার চাঁদ মুখ ভাসে॥
'বিকালের মূলতানীর পর পিলু ভীমপলস্ত্রী প্রভৃতি রাগিণীতে আর কড়ি মা নেই। সান্ধ্য প্রহর যেই এল, অমনি কড়িমা আন্লেন 'পূরবী'কে ধ'রে। পূরবী এল কাঁদতে কাঁদতে। দুই মা'র গলা জড়িয়ে এর কান্না অতি সকরুণ।।
দিনাবসানের ঈঙ্গিত মৃত্যুর রূপকতায় উঠে এসেছে এই গানে। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কবি পূরবীকে জীবনের সুর ও ছন্দের অবসানের বেদনায় দেখেছেন। কবি সূর্যকে অস্তাকাশে জীবনাবসানের চিতার আগুনরূপে কল্পনা করেছেন। আবার মৃত্যুর অন্ধকার জগতের ওপারে যে অপার শান্তির জগত, তার ছায়াও দেখেছেন পূরবী রাগে। তাই কবি পূরবীকে বন্ধুর মতো স্বাগত জানিয়েছেন। কবি মনে করেন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পার্থিব যন্ত্রণা অবসান ঘটে এবং পরপারের অপার শান্তির জগতের দ্বার খুলে যায়। যে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় তিনি এতদিন অতিবাহিত করেছেন, পূরবী তারই বার্তা এনে দেয় অগ্রদূত হয়ে। তাই তিনি জীবনযাত্রা শেষে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অপার শান্তি ও সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করার প্রেরণা পান পূরবীর সুরে। কবি উপলব্ধি করেছেন মৃত্যুর অন্ধকারময় সাগরে ওপারে রয়েছে অপার শান্তির পারাবার। মৃত্যুর অন্ধকার অবয়বের ভিতরে ফুটে উঠে সৌন্দর্যের চন্দ্রমুখ। তাই কবির কাছে পূরবী জীবনের শেষ বন্ধু।
প্রহর
পরিচারিকা।
গীত্ চিত্র। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১১ অক্টোবর, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৫ আশ্বিন। ১৩৪৮)। সময়: রাত ৭.৪৫-৮.২৯
সূত্র: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা। ১ অক্টোবর, ১৯৪১। পৃষ্ঠা:
১০৫৮