রাগ: মূলতানী, তাল: ত্রিতাল
মুকুর ল'য়ে কে গো বসি'
হেরিছে আপন ম্লান-মুখ-শশী॥
সখিরা ডাকে বেলা ব'য়ে যায়
দোপাটির ফুল ঝুরে আঙিনায়'
ধূলাতে লুটায় কাঁখের কলসি॥
হেরিয়া তারি অলস ছবি,
ডুবিতে নারে সাঁঝের রবি
ভাবসন্ধান: গানটি 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত হয়েছিল। এই গীতি আলেখ্যের প্রথম ৮টি রাগাশ্রয়ী গানের চতুর্থ গানটিই ছিল 'মুকুর ল'য়ে কে গো বসি' । এই গানের শুরুতে যাম যোজনায় মূলতানী রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। নিচে নজরুলের পাণ্ডুলিপি থেকে এই বিষয়ক পাঠ তুলে ধরা হলো।
গৌড় সারং-এর পরে অন্য প্রহরকে পরিচয় ক'রে দেওয়ার জন্য আসেন মূলতান রাগের তীব্র মধ্যম। মূলতান রাগের এক মা ─ অর্থাৎ এতে কেবল কড়ি 'মা' লাগে। সকালের টোড়ি আর বিকালের মূলতান একই ঘরের ছেলে মেয়ে। শুধু চাল চলনের তফাতের জন্য দুই জনের স্বভাব দুরকমের হয়ে গেছে। টোড়ি শুনেছেন, এখন মূলতানের খেয়াল শুনুন, তা-হলেই এদের চালের তফাৎ বুঝ্তে পারবেন। টোড়ির রাধা অর্থাৎ 'রে' আর 'ধা' প্রীতি প্রবল, পা দুর্ব্বল। মূলতানীর 'পা' বেশ প্রবল। রাধা প্রীতি খুব কম।
এই গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত এই গানটিতে মুলতান রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে রূপকতার আশ্রয়ে। এটি দিনের চতুর্থ প্রহরের রাগ। এই রাগ প্রসঙ্গে নজরুল বলেছেন- 'সকালের টোড়ি আর বিকালের মূলতান একই ঘরের ছেলে মেয়ে। শুধু চাল চলনের তফাতের জন্য দুই জনের স্বভাব দুরকমের হয়ে গেছে।'
গানটির স্থায়ীতে উঠে এসেছে দিনশেষের প্রকৃতির নিস্প্রভ রূপদর্শন। মুলতান রাগ প্রকৃতির সাথে একাকার হয়ে, যেন আয়নাতে নিজের নিস্প্রভ মুখচন্দ্র দর্শন করছে। দিনের বিদায়ের আয়োজন চলে প্রকৃতিতে। দোপাটির ফুল আঙিনায় ক্রন্দসী নারীর অশ্রুর মতো ঝরে পড়ে। সকালের জল আনার জন্য ব্যবহৃত কলসী অবহেলায় পড়ে থাক আঙিনায়। প্রকৃতির এ শিথিল রূপ দেখে যেন সন্ধ্যার সূর্য ডুব দেওয়ারও স্বস্তি পায় না। পদ্মকোড়ক আঁচলে নিয়ে যেন গ্রামের দীঘি মুলতানীকে আহ্বান করে। কিন্তু দিনশেষে তার যেন উৎসাহ নেই। এসবের ভিতর দিয়েই মুলতানর বিষণ্ণরূপ ফুটে উঠে।
বেতার:
যাম যোজনায় কড়ি মধ্যম।
গীতি-আলেখ্য। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭),
সান্ধ্য অধিবেশন। ৬.৫৫-৭.৪৪।
সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ১২শ সংখ্যা। ১৬ জুন, ১৯৪০। পৃষ্ঠা:
৬৫০-৬৫১