বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: হে নট-ভৈরবী আশাবরী
হে নট-ভৈরবী আশাবরী।
ওঠো গো করুণ গান বিসরি'॥
চেয়ে আছ জলভরা নয়নে,
তীব্র নিদাঘ তাপ কোমল করি'॥
পঞ্চমে কোয়েলিয়া ক'য়ে যায়
প্রথম প্রহর দিবা ব'য়ে যায়,
গুরু গঞ্জনা দিতে আসে ঐ
মুখ ভার করি’ তব ননদিনী তোড়ী॥
- ভাবসন্ধান: গানটি আশাবরী রাগের লক্ষণগীত। এই গানের
স্থায়ীতে রাগের ঠাট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নটভৈরবী। কারণ প্রাচীনকালে
আশাবরী ঠাটের নাম ছিল নটভৈরবী। কবি আশাবরীকে করুণ সম্বোধন করেছেন। আশাবরী
করুণ রসের গান। এই করুণ রসের সূচনা হয়-এর আরোহণে গা ও নি (গান) বর্জনের
মধ্য দিয়ে। কবি
অন্তরাতে পাওয়া এই রাগের করুণ রসের কথা পুনরায় বলেছেন- '
চেয়ে আছ জলভরা নয়নে' পংক্তির মাধ্যমে।
এই গানের নিদাঘ দ্ব্যর্থক। রাগের লক্ষণগীতের বিচারে এই রাগে ব্যবহৃত হয়-
তীব্র
নিখাদ, ধৈবত এবং গান্ধার (নিদাঘ)। আবার নিদাঘ শব্দটি প্রখর তাপযুক্ত
গ্রীষ্মকে বুঝায়। তীব্র
নিখাদ, ধৈবত এবং গান্ধার-এর পরিবর্তে এগুলোর কোমল রূপ ব্যবহার করায়- রাগটি
স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে রাগটি দিবা দ্বিতীয় প্রহরে
তথা সকাল ৯টা থেকে ১২টার সময়ে পরিবেশিত হয়। এই সময়ে প্রকৃতি ধীরে ধীরে শীতল
স্নিগ্ধ রূপ পরিহার করে রুক্ষ হয়ে ওঠে। রৌদ্রের তীব্র প্রভাবে প্রকৃতির
রুক্ষ রূপকে প্রশমিত করে আশাবরী।
সঞ্চারীতে পাওয়া যায় পঞ্চমের ব্যবহারিক রূপের কথা। দিবা
প্রথম প্রহরের শেষে আশাবরীর আবির্ভাব। পঞ্চমের ব্যবহারের ফলে, রাগটি দিবা প্রথম প্রহরের আবেশ থেকে বেরিয়ে আসে।
কারণ এই এই রাগের পঞ্চম ন্যাস স্বর। তবে দিবা দ্বিতীয় প্রহরের অপর রাগ টোড়ির সাথে বিরোধ বাধার সম্ভবনা থেকে
যায়। বিশেষ করে অবরহণে জ্ঞ ঋ (গুরু) প্রয়োগের সময়। কারণ কোমল আশাবরীতে এবং
টোড়িতে এই জ্ঞ এবং ঋ-এর ব্যবহার বেশ গুরুত্ব বহন করে। তাছাড়া আশাবরীর সাথে
টোড়ির যেমন বিরোধ আছে, তেমনি আছে কুটুম্বিতা। দ্বিতীয় প্রহরের শেষের দিকে
টোড়ি গাইবার উপযুক্ত সময়। আশাবরী তার জায়গা ছেড়ে না দিলে টোড়ির আবির্ভাব ঘটে
না। তাই ননদিনী টোড়ি বেজার মুখে আশাবরীকে গঞ্জনা দিতে আসে। আশাবরীর পরে টোড়ি,
তারপরে দিবা তৃতীয় প্রহর শুরু। সেখানে টোড়িকেও জায়গা ছেড়ে দিতে হয় সারং
অঙ্গের রাগের কাছে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু
জানা যায় না। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের
[২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৯ (বৃহস্পতিবার ১২ পৌষ ১৩৪৬) কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে নজরুলের রচিত ঠাট-ভিত্তিক 'মেল-মেলন' নামক গীতি-আল্লেখ্য প্রচারিত হয়। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৭ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ
(নজরুল ইন্সটিটিউট, মাঘ, ১৪১৭/ফেব্রুয়ারি, ২০১৪)। গান সংখ্য ১৭৯৭। পৃষ্ঠা:
৫৩৩।
-
বেতার:
-
মেল-মেলন
কলকাতা বেতারকেন্দ্র। [২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৯ (বৃহস্পতিবার ১২ পৌষ ১৩৪৬)। সান্ধ্য অনুষ্ঠান। ৭.২০-৮.০৪
মিনিট। প্রথম গান। আশাবরী ঠাট, রাগ আশাবরী তেতালা]
[বেতার
জগৎ-এর নমুনা পত্র]
- সূত্র:
- বেতার জগৎ। ১০ম বর্ষ ২৪শ সংখ্যা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৪০
- The Indian
Listener Vol. IV. No 24, 7 December 1939. Page 1731
- পর্যায়