বিষয় : নজরুলসঙ্গীত।
শিরোনাম :
ভরিয়া পরান শুনিতেছি গান আসিবে আজি বন্ধু মোর!
ভরিয়া পরান শুনিতেছি
গান আসিবে আজি বন্ধু মোর!
স্বপন মাখিয়া সোনায় পাখায় আকাশে উধাও চিত-চকোর॥
হিজল-বিছানো বন-পথ দিয়া
রাঙায়ে চরণ আসিবে গো পিয়া।
নদীর পারে বন-কিনারে ইঙ্গিত হানে শ্যাম কিশোর॥
চন্দ্রচূড় মেঘের গায়
মরাল-মিথুন উড়িয়া যায়,
নেশা ধরে চোখে আলো-ছায়ায় বহিছে পবন গন্ধ-চোর॥
-
প্রেক্ষাপট ও ভাবার্থ: দীনেশচন্দ্র সেন সঙ্কলিত
মৈমনসিংহ গীতিকায় সঙ্কলিত মহুয়া চরিত্র অবলম্বনে নাট্যকার মন্মথ রায় রচনা
করেছিলেন 'মহুয়া' নামক নাটক। এই নাটকের নায়িকা মহুয়া তার প্রিয়তম নদের চাঁদের
প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছে। তার আগমন প্রায় আসন্ন। মিলনের পূর্বরাগের মধুর
প্রতীক্ষা ও প্রত্যশ্যায় মগ্ন মহুয়া- গানে গানে বলছে- ভরিয়া পরান শুনিতেছি গান,
আসিবে আজি বন্ধু মোর। তার স্বপ্নের প্রহর শেষ হয়েছে। তাই মন-পাখি তার স্বপ্নের
ডানা মেলে যেন হৃদাকাশে মিলিয়ে গেছে। কারণ তার স্বপ্নের নায়ক আজ আসবে।
মহুয়া কল্পনায় তার প্রিয়তমের আসার পথ কল্পনার চোখে দেখতে পায়- তার বন্ধু আসবে
বনপথ ধরে হিজল-রেণুতে চরণ রঞ্জিত করে। আসবে নদীর কিনার ধরে, তার আসর
ভঙ্গিমায় থাকবে যেন শ্যামের (কৃষ্ণের) শৃঙ্গারময় ইঙ্গিত।
পরান বন্ধুর চন্দ্রচূর (শ্যামের মুকট) যেন শোভিত হবে মেঘের গায়, মরাল দম্পতি উড়ে
যাবে আনন্দ বিহারে। এই ভাবনার বিহারে মহুয়ার মনে জেগে ওঠে মিলনের রভস কামনা।
নেশার ঘোরে তার মনে তৈরি হয় মিলনের আলোছায়ার খেলা। তার কাছে মনে হয়, যেন বাতাস
বহিছে যৌবন সৌরভ হরণকারী হয়ে। মহুয়ার চিত্তলোকের রঙিন ভাবনা আছন্ন করেছে,কারণ-
'আজ তার বন্ধু আসবে'।
-
রচনাকাল ও স্থান:
গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর
(১৬ই পৌষ ১৩৩৬), নাট্যকার মন্মথ রায় রচিত 'মহুয়া' নাটক মঞ্চস্থ হয়। নাটকটিতে
এই গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। উল্লেখ্য, মন্মথ রায় নাটকটি ৪-১৯
ডিসেম্বরের মধ্যে রচনা করেছিলেন।
এই সময় নজরুলের বয়স ছিল- ৩০ বৎসর ৭ মাস।
-
মঞ্চ:
মহুয়া
।
নাট্যকার: মন্মথ রায়। দ্বিতীয় অঙ্ক। মহুয়ার গান। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে
কলকাতার
মনোমোহন থিয়েটারে 'মহুয়া' নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল।
- গ্রন্থ:
-
নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ
(নজরুল ইন্সটিটিউট। ফেব্রুয়ারি ২০১২)।
১৮৭৫ সংখ্যক গান।
-
নজরুল-গীতিকা।
- প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। খেয়াল। ৬। বেহাগ-বসন্ত। পৃষ্ঠা ১৩১]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী,
ঢাকা ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭] নজরুল গীতিকা। খেয়াল । ১০৪।
বেহাগ-বসন্ত। পৃষ্ঠা: ২৪৫-২৪৬]
- মহুয়া: মন্মথ রায় নাট্যগ্রন্থাবলী চতুর্থ খণ্ড (মনমথন প্রকাশন। ২২১ সি,
বিবেকানন্দ রোড। কলিকাতা -৭০০০০৬। ১৯৫৮]। দ্বিতীয় অঙ্ক। মহুয়ার গান। পৃষ্ঠা:
২০৩।
- মহুয়ার গান। নজরুল-রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ।
অষ্টম খণ্ড। বাংলা একাডেমি ঢাকা। দ্বিতীয় মুদ্রণ: ফাল্গুন ১৪২৪/ফেব্রুয়ারি
২০১৮। গান সংখ্যা ১০। মহুয়ার গান। বেহাগ ও বসন্ত-একতালা। পৃষ্ঠা:
২৯২-২৯৩।
- পত্রিকা:
- জয়তী, ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ।
-
সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রকাশিকা
[আষাঢ় ১৩৩৮ (জুন-জুলাই ১৯৩১)। বেহাগ-একতালা (বিলম্বিত লয়)।
কথা ও সুর: কাজী নজরুল ইসলাম। স্বরলিপিকার: শ্রীঅনিলভূষণ বাগচী।' পৃষ্ঠা: ১৫৩-১৫৫।
[নমুনা]
- রেকর্ড: মেগাফোন [ মার্চ ১৯৩৪ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪০)] জেএনজি ১০২। শিল্পী:
শোভারাণী গুপ্তা
- বেতার: 'মহুয়া'।
মন্মথ রায় রচিত সঙ্গীতবহুল নাটক।
- প্রথম প্রচার। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৩২
খ্রিষ্টাব্দে (শুক্রবার ১ পৌষ ১৩৩৯), সান্ধ্য
অনুষ্ঠান। ৭টা থেকে ১০টা।
- সূত্র: বেতারজগৎ। ৪র্থ বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা। ১৯৩২। পৃষ্ঠা: ২২৮]
- দ্বিতীয় প্রচার: কলকাতা বেতার
কেন্দ্র। শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০। ২৬ মাঘ ১৩৪৬। সান্ধ্য অনুষ্ঠান। ৬.৪৫-৮.৩৯ মিনিট।
- সূত্র: বেতার জগৎ-এর [১১শ বর্ষ, ৩য়
সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১৫০]
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রেম (নাটকের
গান)।
- সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
- রাগ:
বেহাগ। ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সম্পাদিত
নজরুল-সঙ্গীত,
আদি স্বরলিপি সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট।
অক্টোবর ১৯৯৯) গ্রন্থে [ ৮ সংখ্যক গান।
পৃষ্ঠা: ২০-২২]- স্বরলিপির
শেষের দিকে গানে সুরাঙ্গ বিষয়ে লিখেছেন-
"গানটির এই
স্বরলিপিতে ধৃত সুরটি কিছুটা বিস্ময়কর। সুরটি রয়েছে বিশুদ্ধ বেহাগে অথচ 'নজরুল
স্বরলিপি'তে গানটি
বেহাগ-বসন্ত মিশ্র রাগে আবদ্ধ। 'মহুয়া' নাটকের এই গানটি মঞ্চে
বেহাগ-বসন্ত মিশ্র রাগেই গাইতেন সরযূবালাদেবী−−
বিভিন্ন স্মৃতিকথায় সরযূবালা দেবী এ কথা স্বয়ং জানিয়েছেন। মেগাফোন কোম্পানী থেকে ১৯৩৪ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত গানটির রেকর্ডেও (জে.এন.জি. ১০২ ; শিল্পী-কুমারী
শোভারানী গুপ্তা) বেহাগ-বসন্তে গাওয়া হয়েছে। স্বরলিপিকার অনিল বাগচী ছিলেন কবির
কাছের লোক; 'নজরুল স্বরলিপি'র ভূমিকায় তার স্বীকৃতি রয়েছে।"
- তাল:
একতাল।
- লয়: বিলম্বিত লয়।
- গ্রহস্বর: সা।