বিষয়: নজরুলসঙ্গীত
শিরোনাম: আমি যার নূপুরের ছন্দ বেণুকার সুর
আমি যার নূপুরের ছন্দ বেণুকার সুর
─
কে সেই সুন্দর কে!
আমি যার বিলাস-যমুনা বিরহ-বিধুর
কে সেই সুন্দর কে॥
যাহার গানের আমি বনমালা
আমি যার কথার কুসুম-ডালা,
না-দেখা সুদূর
─
কে সেই সুন্দর কে॥
যার শিখী-পাখা লেখনী হয়ে
গোপনে মোরে কবিতা লেখায়
সে রহে কোথায় হায় !
আমি যার বরষার আনন্দ-কেকা,
নৃত্যের সঙ্গিনী দামিনী-রেখা,
যে মম অঙ্গে কাঁকন-কেয়ূর
কে সেই সুন্দর কে॥
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১
জুলাই (শুক্রবার ১৫ শ্রাবণ ১৩৪৯)
নজরুলের সাথে
এইচএমভি একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিপত্রের গানটির উল্লেখ ছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স
ছিল ৪৩ বৎসর ৪ মাস ।
- ভাবসন্ধান: যা পরম সত্য, যা পরম সুন্দর, তাই
পরমস্রষ্টা, নন্দনতত্ত্বের চিরন্তন সিদ্ধান্ত- এই গানে বিস্ময়-মুগ্ধ
আত্ম-জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে কবি উপস্থাপন করেছেন। কবি অনুভব করেন, তিনি যে
পরমসত্তার নূপুরের ছন্দ, বেণুকার সুর। তিনি একই সাথে প্রেম-যমুনার বিলাসী এবং
প্রেম-বিরহে কাতর নায়ক। তিনি তাঁর পরমসত্তার স্বরূপ জানেন না। তাই তাঁর এই
বিমুগ্ধ আত্ম-জিজ্ঞাসা- কে সেই সুন্দর কে!?
কবি মনে করেন, কবি নিজই সেই পরমসত্ত্বার গানের মালা, কথার
পুষ্প-ডালা। তিনি বিরাজ করেন তাঁর অন্তরে, তাঁকে অনুভব করেন অন্তর্দৃষ্টিতে।
কিন্তু নয়ন মেলে তাঁকে দেখতে পান না। তাই 'দেখা-না-দেখায়' মেশা এই
পরম সত্তা তাঁর কাছে হয়ে ওঠে- 'না-দেখা সুদূর'।
কবি অনুভব করেন, তিনি যা কিছু রচনা করেন, তার সবই পরমস্রষ্টা তাঁর শিখী পাখা (ময়ুরের
পালক) কলম হয়ে, তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নেন। কবির সংগোপনে রচিত সকল কবিতে তাঁকে দিয়ে
লিখিয়ে নিয়ে- সেই পর্মস্রষ্টা কোথায় লুকিয়ে থাকেন, কবি তা জানেন না।
প্রকৃতির যা কিছু সুন্দর, সবই তিনি। কবি যেন সেই পরমসুন্দরের আনন্দনৃত্যে মুখর
ময়ুর, আর নৃত্যসঙ্গিনী বিদ্যুৎ লতা। যেন সকল সুন্দর তাঁর অঙ্গে
কাঁকন-কেয়ুরের মতো অলঙ্কার হয়ে বিরাজ করে। সেই পরম সুন্দর তাঁকে আভরিত করেন, 'দেখা-না-দেখার'
রহস্যময়তায় নিজেকে আবরিত করে। শেষ পর্যন্ত সেই পরম সুন্দরকে দেখা হয় না।
এ অদর্শনের আকাঙ্ক্ষাই কবির বিমুগ্ধ মনকে আত্ম-জিজ্ঞাসায় উদ্বেলিত করে।
স্বগক্তিতে বলেন 'কে সেই সুন্দর কে!? কিন্তু
উত্তর মেলে না।
- গ্রন্থ:
- অগ্রন্থিত গান। নজরুল-রচনাবলী─দশম খণ্ড [নজরুল জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। বাংলা একাডেমী, জ্যৈষ্ঠ ১৪১৬। মে ২০০৯। ১০৩ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ২৪৯-২৫০]
- নজরুল গীতি, অখণ্ড
- প্রথম সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৬ আশ্বিন ১৩৮৫। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮]
- দ্বিতীয় সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ১ শ্রাবণ ১৩৮৮। ১৭ জুলাই ১৯৮১]
- তৃতীয় সংস্করণ [ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৮ মাঘ ১৪১০। ২৩ জানুয়ারি ২০০৪। কাব্য-গীতি। ৮৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ২৪]
- পরিবর্ধিত সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। বৈশাখ শ্রাবণ ১৪১৩। এপ্রিল-মে ২০০৬] ৯৮ সংখ্যাক গান। পৃষ্ঠা:১৮- ১৯।
- নজরুল গীতিমালা
৩য় খণ্ড। প্রথম প্রকাশ [বাঙলা একাডেমী, ঢাকা। ভাদ্র ১৩৭৭। সেপ্টেম্বর ১৯৭০। ৬ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ১৬-১৮।
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ২২। পৃষ্ঠা ৭-৮]
- নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড)। স্বরলিপিকার:
সুধীন দাশ। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। ২২ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ১০৮-১১০]
- রেকর্ড:
- ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১
জুলাই (শুক্রবার ১৫ শ্রাবণ ১৩৪৯)নজরুলের সাথে
এইচএমভি
একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিপত্রের গানটির উল্লেখ ছিল।
- এইচএমভি'র
[সেপ্টেম্বর ১৯৪২ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৯)]। এন ২৭৩১১। শিল্পী:
ইলা ঘোষ। সুরকার: কমল দাশগুপ্ত।
[
শ্রবণ নমুনা]
- সুরকার: কমল
দাশগুপ্ত
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
- নিতাই ঘটক। সঙ্গীতাঞ্জলি, প্রথম খণ্ড (জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড
পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৩৭৫। পৃষ্ঠা: ৪৭-৪৯]
[নমুনা]
-
সুধীন দাশ।
নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড)।
প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর
১৯৯৫। ২২ সংখ্যক গান।] [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ভক্তি, সাধারণ (সত্য-সুন্দর)
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সুর
- রাগ: রাগের উল্লেখ নেই।
- তাল:
কাহারবা
- গ্রহস্বর: পা।