ভাবসন্ধান: সনাতন হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব সঙ্গীত।
এই গানে কবি গভীর ধ্যানের ভিতর দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের রূপদর্শন এবং আধ্যাত্মিক মহিমা
উপলব্ধি করার বিষয় তুলে ধরেছেন। তাঁর এই ধ্যানদর্শনে ভক্ত ফিরে পাবেন সংসারের
শান্তি। জীবন হয়ে উঠবে প্রেমপূর্ণ আনন্দময় ব্রজধাম।
পৌরাণিক কাহিনি মতে- কালিয় নামক একটি বিষাক্ত সাপের বিষে- যমুনা নদীর একটি
আবর্ত এতটাই বিষাক্ত হয়ে পড়েছিল যে,এই জলাশয়ের কাছে কোন গাছ জন্মাতো না বা
আবর্তের উপর দিয়ে কোন পাখি উড়ে যেতে পারতো না। জীবকূলকে রক্ষার জন্য কৃষ্ণ
লাফ দিয়ে ওই আবর্তে প্রবেশ করেন। পরে এই সাপকে হত্যা করে কালিন্দী নদীতে
নিক্ষেপ করেন।পৌরাণিক কাহিনিতে এই ঘটনাকে কালিয়দমন বলা হয়। মানুষের নানা
কুপ্রবৃত্তি কালিয় সাপের মতো বহুফণা বিস্তার করে জগৎ সংসারের যাপিত জীবনকে
বিষময় করে তোলে। একমাত্র শ্রীকৃষ্ণের অনুক্ষণ ধ্যানের মাধ্যমে জগতের-সংসারের
কালিয়দমন করা সম্ভব। গানটির স্থায়ীতে কবি শ্রীকৃষ্ণের আরাধানার বা রূপ দর্শনের
মাধ্যম হিসেবে ধ্যানকেই বিশেষভাবে বেছে নিয়েছেন।
গানটির স্থায়ীর পরে, কবি শ্রীকৃষ্ণের দৈহিক ও আধ্যাত্মিক রূপবর্ণনা করেছেন।
নব-মেঘবর্ণের মনোহর রূপে কৃষ্ণ ব্রজধামকে আনন্দ- লীলানিকতেনে পরিণত করেছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণের ধ্যানের আনন্দময় মহিমার ইঙ্গিত পাওয়া যায় অন্তরার তিনটি পঙ্ক্তিতে।
শ্রীকৃষ্ণের ধ্যানের মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের রূপদর্শনে কলুষিত সংসার হয়ে যেতে
পারে ব্রজধাম- কবি যেন তারই ঈঙ্গিত দিয়েছেন।
বনমালায় শোভিত জ্যোতির্ময় (বিদ্যুৎ-বর্ণ) হলুদবর্ণের পোশাকধারী শ্রকৃষ্ণ,
ব্রজধামের মধুবনে, কামদেবতার বাণস্বরূপ (মদনমোহন) তনুধারী গোপিনীর
মনোহরণকারীরূপে বিরাজ করেন। ধ্যানের মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের এই রূপ দর্শনে
ভক্তের জীবন হয়ে উঠবে প্রেমঘন আনন্দধাম।
রচনাকাল ও স্থান: গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৪) মাসে,
এইচএমভি থেকে এই গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর
৩ মাস।