বল্ রে জবা বল্-
কোন্ সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল॥
মায়া-তরুর বাঁধন টু'টে মায়ের পায়ে পড়লি লু'টে
মুক্তি পেলি, উঠলি ফুটে আনন্দ-বিহ্বল।
তোর সাধনা আমায় শেখা (জবা) জীবন হোক সফল॥
কোটি গন্ধ-কুসুম ফোটে, বনে মনোলোভা -
কেমনে মা'র চরণ পেলি, তুই তামসী জবা।
তোর মত মা'র পায়ে রাতুল হবো কবে প্রসাদী ফুল,
কবে উঠবে রেঙে
ওরে মায়ের পায়ের ছোঁয়া লেগে উঠবে রেঙে,
কবে তোরই মত রাঙবে রে মোর মলিন চিত্তদল॥
'...তাঁদের বাবা, ধীরেন দাস [ধীরেন্দ্রনাথ দাস] একদিন অনুপ কুমারকে কথায় কথায় বলেছিলেন, একদিন বিশেষ কোন কাজে খুব সকালে গিয়েছিলেন গ্রামোফোন কোম্পানীর রিহার্সেল অফিসে । তখন কাজী তাঁর কোন জরুরী কাজের জন্য ওখানে ছিলেন। প্রতিদিনের মতো সকাল বেলা উড়িয়া ঠাকুর (পুরোহিত) এসেছে পূজা করতে পুরোহিতের ডালিতে ছিল নানা রকমের ফুল। বিভিন্ন দেবতাকে বিভিন্ন ফুলের পুজা করছেন। কাজীদা আপন মনে পুরোহিতের এই পূজা পর্ব প্রত্যক্ষ করছেন। সব পুজার শেষে পুরোহিতের হাতের ডালিতে পড়ে আছে মাত্র একটি রক্তজবা ফুল। এই ফুলটি পুরোহিত মা কালীর পায়ে দিয়ে পূজা পর্ব শেষ করে চলে গেল। হঠাৎ কাজীদা আমাকে জিজ্ঞনা করলেন, আচ্ছা ধীরু (নজরুল বাবাকে এই নামেই ডাকতেন) সব দেবতাই যে কোন ফুলেই তুষ্ট, তবে কালী ঠাকরুণ কেন শুধুই জবা ফুলে তুষ্ট হন। আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই কাজীদা হন হন করে উঠে গেলেন ওপরে তার নিজের কামরায় । আমি অবাক হয়ে কিছু সময় তার এই চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম, কাজীদা হঠাৎ এমন করে চলে গেলেন কেন? তারপর আমি আমার প্রয়োজনীয় কাজগুলো প্রায় শেষ করেছি এমন সময় দেখলাম কাজীদা ওপর থেকে নিচে নেমে এলেন সোজা আমার রুমে, আমার সামনে দীড়িয়ে বললেন, 'ধীরু, লিখে ফেলেছি।' কাজীদার হাত থেকে কাগজটি নিয়ে দেখলাম একটি অপূর্ব গান (শ্যামা সঙ্গীত)। গানের বাণী নিম্নরূপ: 'শ্যামা সঙ্গীত/দেশ মিশ্র দাদরা/ বল জবা বল...'
['নজরুলের শ্রুতিধর ধীরেন দাস'। আসাদুল হক। হাতে খড়ি/ঢাকা। জানুয়ারি ২০০৪। পৃষ্ঠা: ৫৫।]