মেঘ মেদুর বরষায় কোথা তুমি ফুল ছড়ায়ে কাঁদে বনভূমি॥ ঝুরে বারিধারা ফিরে এসো পথহারা কাঁদে নদী তট চুমি' ॥
ভাবসন্ধান:
রাগ জয়জয়ন্তীতে খেয়ালের সুরাবলম্বনে রচিত বর্ষার ঋতুর গান। বিষয়াঙ্গের বিচারে গানটি প্রকৃতি ও
প্রতেম পর্যায়ের।
খেয়ালভাঙ্গা এই গানটি বন্দিশ হিসেবে রচিত হয়েছে, ফলে গানটির ভাবদর্শন পূর্ণ
দশায় বিকশিত হয়ে ওঠে হয় নি। যদিও সুরে চলনে রয়েছে বিরহ-কাতরতার হাহাকার।
এই গানের প্রকৃতি বর্ষা। প্রেয়সীবিহীন কবির মনোদশা হলো প্রেম-বিরহ। রসের বিচারে শৃঙ্গার। এ গানের শুরু হয়েছে প্রকৃতি ও প্রেমের বর্ষার যুগবন্দীতে। বর্ষার মেঘে ঢাকাআকাশ এমন পরিবেশ প্রেয়সী সঙ্গলাভের জন্য কবি উন্মুখ হয়ে আছে। তাঁর বিরহকাতরতায় যেন বনভূমির যৌবনপুষ্প নিষ্ফল হয়ে ভূমিতে ঝরে পড়ছে। তাঁর সমব্যথী হয়ে বর্ষার মেঘ থেকে কান্না হয়ে ঝরে পড়ছে বৃষ্টিধারা। নদীও তাঁর তটভূমিতে বেদনার চুম্বনে সিক্ত করে চলেছে অবিরাম। প্রকৃতি যেন কবির সাথে সমব্যথী হয়ে,তাঁর প্রয়সীকে ফিরে আসার জন্য সকাতর নিবেদন করছে।
রচনাকাল ও স্থান:
গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁর শিষ্যা দীপালী নাগ
আগ্রা থেকে তাঁর পিতার সাথে কলকাতায় আসেন। এই সময় সেকালের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ
দীলিপকুমার রায়ের বাড়িতে অনুষ্ঠিত একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এই আসরে
এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানির উচ্চপদ্স্থ কর্মকর্তা হেমচন্দ্র সোম তাঁর গান শুনে
মুগ্ধ হন এবং তিনি নলিন সরকার স্ট্রিটে অবস্থিত এইচএমভির অফিসে আমন্ত্রণ জানান।
এইচএমভির অফিসে প্রথম তাঁর সাথে পরিচয় কাজী নজরুল ইসলামের। দীপালী নাগ এই
অফিসঘরের আসরে পরিবেশন করেন- জয়জয়ন্তী রাগে ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ-এর রচিত গান - মোরে
মন্দির আবলো নহি আবে'। এই গানের সুরে তৎক্ষণাৎ নজরুল রচনা করেছিলেন 'মেঘমদুর
বরষায় কোথা তুমি। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর
(ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৫) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে
দীপালী নাগের কণ্ঠে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত
হয়েছিল।
এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ৩ মাস।
এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে নজরুলের রচিত গানটির
রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল।