গীতবিতান
রবীন্দ্রনাথের রচিত সকল গানের বাণী অংশ নিয়ে সঙ্কলিত গ্রন্থ বিশেষ।
এই
গ্রন্থটি প্রকাশের আগে রবীন্দ্রনাথের গানগুলো তত্ত্ববোধনী, ভারতী'র মতো
বিভিন্ন পত্রিকায়,
রবীন্দ্রনাথের নিজের
নাটকে বা স্বতন্ত্র
সঙ্গীত-সংকলনে এবঢ
জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাটকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানের সম্পূর্ণ সংগ্রহ এবং প্রচারের
উদ্দেশ্যে গীতবিতান
নামক একটি 'সঙ্গীতসঙ্কলন' প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ নেন
১৯৩৮ বঙ্গাব্দে । বিশ্বভারতী-গ্রন্থালয় থেকে দু্ই
খণ্ডে গীতবিতান প্রকাশিত হয় - ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে ( সেপ্টেম্বর-অক্টো বর
১৯৩১ )।
উল্লেখ্য এর তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল- ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে। এরপর গ্রন্থটির
সকল খণ্ডের সংস্কার করা হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে। বিশ্বভারতী ব্যবহারের সুবিধার্থে
পরে গীতবিতানের অখণ্ড সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রথম খণ্ডের শুরুতে, কোন্ কোন্
গ্রন্থ থেকে এই খণ্ড দুটির গানগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, তার নাম এবং গৃহীত গানের
তালিকা দেওয়া আছে। দুটি খণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য, পৃষ্ঠাঙ্কের ধারাবাহিকতা রক্ষা
করা হয়েছে। এই সূত্রে প্রথম খণ্ডের শেষ গান 'হে মোর চিত্ত পূণ্যতীর্থে' ৩৬৪ পৃষ্ঠায়
শেষ হয়েছে। আর দ্বিতীয় খণ্ডের পৃষ্ঠাঙ্ক শুরু হয়েছে ৩৬৫ পৃষ্ঠা থেকে। আর শেষ হয়েছে
৬৬৮ পৃষ্ঠায়।
১৩৩৯ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ (জুলাই আগষ্ট ১৯৩২) গীতবিতানের তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। এর
পত্রাঙ্ক শুরু হয়েছে ৬৭১ থেকে, আর শেষ হয়েছে ৮৫৮ পৃষ্ঠায়।
গীতবিতানের দ্বিতীয় সংস্করণ
১৩৩৮-১৩৩৯ বঙ্গাব্দে গীতবিতানের তিনটি খণ্ডের প্রকাশের পর, রবীন্দ্রনাথ এর
দ্বিতীয় সংস্করণের প্রস্তুতি শুরু করেন। এই বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে, তিনি
গানগুলোকে বিষয়ানুক্রমিক বিন্যাসে মনোযোগী হন। এই সূত্রে ১৩৪৫ বঙ্গাব্দের ভাদ্র
(আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ১৯৩৮) মাসে, গীতবিতানের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
এই দুটি খণ্ডের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-
গীতিবিতান যখন প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল তখন সংকলন-কর্তারা সত্বরতার তাড়নায় গানগুলির মধ্যে বিষয়ানুক্রমিক শৃঙ্খলা বিধান করতে পারেন নি। তাতে কেবল যে ব্যবহারের পক্ষে বিঘ্ন হয়েছিল তা নয়, সাহিত্যের দিক থেকে রসবোধেরও ক্ষতি করেছিল। সেইজন্যে এই সংকলনে ভাবের অনুপূর্ব রক্ষা করে গানগুলি সাজানো হয়েছে। এই উপায়ে, সুরের সহযোগিতা না পেলেও, পাঠকেরা গীতিকাব্যরূপে এই গানগুলির অনুসরণ করতে পারবেন।
;[ভাদ্র ১৩৪৫]
এই সংস্করণের প্রথম খণ্ডে
স্থান পেয়েছিল পূজা ও স্বদেশ পর্যায়ের গান। দ্বিতীয় খণ্ডে স্থান পেয়েছিল প্রেম,
প্রকৃতি, বিচিত্র ও আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের গান। এই সংস্করণে 'প্রথম যুগের
উদয়দিগঙ্গনে' গানটি ভূমিকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। কিন্তু এই দ্বিতীয়
সংস্করণের গানগুলোতে প্রচুর ভুল থাকায়, তা বাতিল হয়ে যায়। এই বাতিলকৃত সংস্করণটি
বর্তমানে 'বিরল প্রচার' সংস্করণ হিসেবে অনেকে উল্লেখ করে
থাকেন । এরপর নতুন করে
গীতবিতান প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর । এই প্রচেষ্টায়
১৩৪৮ বঙ্গাব্দের মাঘ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯৪২) মাসে
পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ হিসেবে গীতবিতান দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়।
এই সংস্কর্ণটিকে মূলত দ্বিতীয় সংস্করণের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
গীতবিতানের পরবর্তী সংস্করণ
এই গ্রন্থদ্বয়ের নূতন সংস্কতণ প্রকাশিত হয়- যথাক্রমে
পৌষ ১৩৫১ এবং আশ্বিন ১৩৫৪-তে। এই গ্রন্থমালার
তৃতীয় খণ্ড নতুনভাবে
প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৫৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন (এপ্রিল-মে ১৯৫০)
মাসে।
এরপর এই
গ্রন্থের সংশোধিত ও সংযোজিত পুনর্মুদ্রণ হয়-
প্রথম খণ্ড (চৈত্র
১৩৭০), দ্বিতীয় খণ্ড (আশ্বিন ১৩৭০), তৃতীয় খণ্ড (জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৬)।
তৃতীয় খণ্ড প্রকাশের আগেই ১৩৭১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে গীতবিতানের অখণ্ড সংস্করণ
প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণে যুক্ত করা হয়- অখণ্ডসূচী।
অখণ্ড গীতবিতান
১৩৭১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে তিন খণ্ডের গীতবিতানকে
একত্রিত করে অখণ্ড গীতবিতান নামে প্রকাশিত হয়। এর চারটি মুদ্রণ হয়েছিল যথাক্রমে আশ্বিন ১৩৭২, বৈশাখ ১৩৭৩, বৈশাখ
১৩৭৪ ও বৈশাখ ১৩৭৫ বঙ্গাব্দে।
অখণ্ড গীতবিতানের প্রথম সংস্কারকৃত পাঠ: ১৩৭৬ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে এর একটি সংস্কারকৃত পাঠ প্রকাশিত হয় এবং এর
পুনর্মূদ্রণ হয় পৌষ ১৩৭৭ বঙ্গাব্দে।
অখণ্ড গীতবিতানের দ্বিতীয় সংস্কারকৃত পাঠ:
১৩৮০ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে এই
সংস্কারকৃত পাঠ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে এর পুনর্মুদ্রণ প্রকাশিত হয়েছে বহুবার।