১১৯৬ জ্ঞান-হীন তমসায় মগ্ন
পাপ-পঙ্কিলা শক্তি যথায় করে আত্ম-বিসর্জন
ঘৃণায়- যথা দেবী শক্তি-নারী অপমান
সহে |
ভাবার্থ ও
প্রেক্ষাপট:
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে–
ভৈরব হলেন শিব বা
মহাদেবের
অপর নাম। শিবের স্ত্রী সতীর (মহামায়া,
দুর্গা ) দেহত্যাগের পর, সে খবর শিবানী মহাদেবের বর্ণনা করছেন
।
কালিকা পুরাণ
মতে–
দক্ষ
মহামায়াকে
[দুর্গা]
কন্যারূপে পাওয়ার
জন্য কঠোর তপস্যা করেন।
দক্ষের
তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহামায়া
দক্ষকে
বলেন,
তিনি অবিলম্বে তাঁর (দক্ষের)
পত্নীর গর্ভে তাঁর কন্যারূপ জন্মগ্রহণ করবেন এবং
এই কন্যা
মহাদেব-এর
স্ত্রী হবেন। তবে
তাঁকে
(দুর্গাকে)
যথাযথ সমাদর না
করলে তিনি দেহত্যাগ
করবেন।
এরপর
দক্ষ
অসিক্লী -কে
বিবাহ করেন। মহমায়ার
জন্মের পর
দক্ষ
এঁর
নাম রাখেন সতী।
[১-৪৪। অষ্টমোহধ্যায়, কালিকাপুরাণ]
সতী যৌবনে পদার্পণ করলে, মহাদেব-এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। কিন্তু মহাদেব দক্ষকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন না করায় ইনি ক্রমে ক্রমে মহাদেব-এর প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেন। বিবাহের এক বৎসর পর, দক্ষ এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। এই যজ্ঞে দক্ষ মহাদেব ও সতীকে নিমন্ত্রণ করলেন না। সতী নারদের মুখে এই যজ্ঞের কথা জানতে পেরে অযাচিতভাবে যজ্ঞে যাবার উদ্যোগ নেন। কিন্তু তিনি শিব (মহাদেব)-এর কাছে সতী অনুমতি লাভের আশায় গেলে, শিব যথাযথ কারণ দেখিয়ে, সতীকে যজ্ঞে যেতে নিষেধ করেন। সতী তা অগ্রাহ্য করে দক্ষের যজ্ঞে যান। সেখানে দক্ষের মুখে শিবের নিন্দা শুনে সতী দেহত্যাগ করেন। শিবের কাছে শিবানী ভৈরবী এসে দেহত্যাগের বার্তা পৌঁছে দেন। এরপর শিব দক্ষের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাঁর প্রলয়ঙ্করী শক্তিকে জাগ্রত করেন। কাজী নজরুল ইসলাম 'উদাসী ভৈরব' নাটিকায় এই শক্তিকে আহ্বান করেছেন যে ভাবে, তা হলো
সতী! সতী! তোমার দেহত্যাগের প্রায়শ্চিত্ত হবে দক্ষের যজ্ঞ বিনষ্টে—দক্ষের ছিন্ন মুণ্ডে হ'ক ঐ যজ্ঞের আহুতি দান। দম্ভী দক্ষ নিজ কৃত-কর্মের ফল ভোগ করুক। জাগো, জাগো, রুদ্র ভৈরব জাগো। আজ কোটি সূর্যের তেজে ব্রহ্মাণ্ড জাগিয়ে দাও। ছারখার হ'ক স্বর্গ-মর্ত্ত-পাতাল-বিশ্ব যাক রসাতলে।
এই গানে ক্রোধান্বিত প্রলয়ঙ্কর রুদ্রভৈরবকে আহ্বান করে সৃষ্টিকে ধ্বংসের আহ্বান করা হয়েছে। শিব সত্য ও সুন্দরের প্রতীক। শিবের অবজ্ঞার অর্থই হলো সত্য সুন্দরের অবজ্ঞা। বিশ্বজুড়ে যে অশিবের যজ্ঞ চলছে, তাকে ধ্বংস করার জন্য রুদ্রভৈরবকে আহ্বান করা হচ্ছে এই গানের ভিতর দিয়ে। বিশ্বজুড়ে অশিব শক্তি, শক্তিরূপিণী নারী সত্তাকে অপমান করছে। চলেছে ধর্মের নামেও গ্লানিকর হানাহানি। অশুভ শক্তির ধ্বংসের মধ্য দিয়ে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা পাক, এই ইচ্ছাই গানটির আভোগে উপস্থাপিত হয়েছে ।
১. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
২. রেকর্ড সূত্র: নাই।
৩.
রচনাকাল:
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে, কাজী
নজরুল ইসলাম
উদাসী ভৈরব নামক
নাটিকাটি বেতারে অভিনয় আকারে পরিবেশনের
পরিকল্পনা নেন । এই বিচারে বলা যায়, গানটি রচিত হয়েছিল কাজী নজরুল
ইসলাম ৪০ বৎসর বয়সের দিকে।
৪. প্রাসঙ্গিক পাঠ: গানটি কাজী নজরুল ইসলাম, জগৎ ঘটক
রচিত উদাসী ভৈরব নামক
নাটকের জন্য লিখেছিলেন। মূলত এই নাটিকাটির গান এবং অধিকাংশ সংলাপ
নজরুল ইসলাম রচনা করেছিলেন।
নাটিকাটি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই নভেম্বর তারিখে বেতারে প্রচারিত হয়।
এটি ছিল উক্ত নাটকের চতুর্থ গান। গানটি পরিবেশন করেছিলেন গীতা মিত্র-এর কণ্ঠে গীত হয়েছিল।
এই গানটি নজরুল-সৃষ্ট 'রুদ্র-ভৈরব' রাগে নিব্দ্ধ। এই বিষয়ে জগৎ ঘটক তাঁর স্বরলিপি গ্রন্থ 'নবরাগ' -এ লিখেছেন—
'বহুকাল পূর্বের কথা। উদাসী ভৈরব নামে একখানি নাটিকা বেতারে অভিনীত হবার জন্যে কবি আমাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন— এবং এর ছয়খানি গান তিনি রচনা ও তাতে সুরারোপ করেন। সুরগুলি রাগ-ধর্মী ও তাঁর সৃষ্ট নবরাগ। বাসন্তী বিদ্যাবীথির প্রয়োজনীয় নাটিকাটি বেতারে সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হয়েছিল। ... গানগুলি অরুণ-ভৈরব, আশা-ভৈরব, শিবানী-ভৈরবী, রুদ্র-ভৈরব, যোগিনী ও উদাসী ভৈরব।'
৫.সুরকার : কাজী নজরুল ইসলাম।
৬.স্বরলিপিকার : জগৎ ঘটক ।নবরাগ,নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি[নজরুল ইন্সটিটিউট, সেপ্টেম্বর ২০০৫]
৭. সঙ্গীত
বিষয়ক তথ্যাবলী :
গ্রহস্বর : র্সা।
তাল : সুরফাঁক্।
পর্যায় : রাগপ্রধান।
রাগ : রুদ্র-ভৈরব।