রসগোল্লা
বানান বিশ্লেষণ: র্+অ+স্+অ+গ্+ও+ল্+ল্+আ
উচ্চারণ:
rɔ.ʃo.go৷.৷a (র.শো.গোল্.লা)
শব্দ-উৎস: সংস্কৃতরস+ ফার্সি গুল্লা > বাংলা রসগোল্লা
ইংরেজি:
Syrup Filled Roll, Rasgulla

অর্থ:
বাংলার ঐতিহ্যবাহী রসে ডুবানো এক প্রকার ছানার মিষ্টি। বাংলার রসগোল্লার খ্যাতি জগৎজোড়া।

রসগোল্লা তৈরির উপাদান

ছানা – ২৫০ গ্রাম (ভারী কিছু চাপা দিয়ে জল বার করে নিতে হবে। কারণ ছানায় জল থাকলে রসগোল্লা ভেঙ্গে যাবে)
ময়দা – ১ বড় চামচ
সুজি – ১ বড় চামচ
রস তৈরির জন্য চিনি – ৭০০ গ্রাম
৪ কাপ জল

প্রণালী: প্রথমে উৎকৃষ্ট মানের ছানা সংগ্রহ করতে হবে। এর সাথে ময়দা এবং সুজি পরিমাণ মতো মিশিয়ে খুব ভাল করে মেখে নিতে হবে। তারপর সেগুলোকে গোল গোল করে বল বা গোল্লা তৈরি করতে হবে। এরপর পৃথক একটি পাত্রে পানির সাথে চিনি মিশিয়ে সরবত বা রস বানাতে হবে। এই রস আগুনের সাহায্যে ফুটাতে হবে। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা আসলে, তাতে গোল্লা আস্তে আস্তে ছাড়তে হবে। রসে রসগোল্লাগুলো একটু ডুবেই আবার ভেসে উঠেবে। উৎতপ্ত অবস্থায় রসযুক্ত পানি গোল্লাগুলোকে সিদ্ধ করবে। এই সময় গোল্লাগুলো ফুলে বেশ বড় হয়ে যাবে। পুরোপুরি সিদ্ধ হয়ে গেলে, গোল্লাগুলো রসের ভিতর ডুবে যাব। এরপর ফুটন্ত রস থেকে ঝাঁঝরা দিয়ে তুলে এনে,  আগে থেকে তৈরি করা আলাদা পাত্রের রসে রসগোল্লাগুলো ছেড়ে দিতে হবে। এরপর ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করতে হবে।

রসগোল্লার ইতিহাস
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের কার্যবিবরণী, ১৩১৩ [পৃষ্ঠা ১১১] -তে প্রকাশিত ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা -'লুচিতরকারী' প্রবন্ধ প্রসঙ্গে'. থেকে জানা যায়- রাণাঘাটের পালচৌধুরী মহাশয়ের মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক হারাধন ময়রা ১৮৪৬-৪৭ সালের দিকে প্রথম রসগোল্লা তৈরি করেন। একদিন তাঁর শিশুকন্যার কান্না থামাবার জন্য উনানের ওপর তৈরি রসে ছানার পিণ্ড ফেলেন। পরে তিনি দেখেন যে, এক ধরনের নতুন মিষ্টান্ন তৈরি হয়েছে। এও মিষ্টান্নকে পালচৌধুরী জমিদারেরা 'রসগোল্লা' নামকরণ করেন।

অনেকে মনে করেন বরিশাল অঞ্চলে পর্তুগীজদের কাছ থেকে উন্নতমানের ছানা তৈরির কৌশল শিখেছিল, স্থানীয় ময়রারা। এদের হাতে রসগোল্লার আদি রূপ সৃষ্টি হয়েছিল। প্রণব রায়ের রচিত 'বাংলার খাবার' গ্রন্থ থেকে মতান্তর হিসেবে উল্লেখ আছে- '...কলকাতায় বেনেটোলার সীতারাম ঘোষ স্ট্রীটের দীনু ময়রার পূর্বপুরুষ ব্রজ ময়রা হাইকোর্টের কাছাকাছি দোকানে ১৮৬৬ খ্রীস্টাব্দে প্রথম রসগোল্লা আবিষ্কার করেন বলে জানা যায়।' পরে রসগোল্লার আরও প্রকরণ তৈরি হয়েছে। যেমন- স্পঞ্জ রসগোল্লা।  বাগবাজারের স্পঞ্জ রসগোল্লা আবিষ্কৃত হয়ে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে'। উল্লেখ্য স্পঞ্জ রসগোল্লার আবিষ্কারক ছিলেন নবীন ময়রা। পরে স্পঞ্জ রসগোল্লার আদলে নতুন ধরনের মিষ্টান্ন তৈরি করেছিলেন বর্ধমান জেলার ভাতার গ্রামের গোপাল ময়রা। তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল 'গোপালগোল্লা'। এর বাইরে অন্যান্য যে সকল রসগোল্লার নাম পাওয়া যায়, তা হলো- কমলা রসগোল্লা, রাজভোগ, ক্ষীরমোহন, দিলবাহার, চমচম, রসকদম্ব, মৌচাক, দানাদার, রসমুণ্ডী, ছানার গজা, ছানার মুড়কি। রসগোল্লারই একটি ভিন্ন প্রকরণ হলো- পান্তোয়া।

রসগোল্লা কোন অঞ্চলের মিষ্টি এ নিয়ে ভারতের উড়িষ্যা এবং পশ্চিম বঙ্গের মধ্যে একটি বিরোধ তৈরি হয়েছিল। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ সরকার রসগোল্লার জিআই ট্যাগ লাভ করে।


সূত্র: