ফার্সি
বানান
বিশ্লেষণ:
ফ্+আ+র্+স্+ই
উচ্চারণ:
far.si
(ফার্.সি)
শব্দ-উৎস:
ফার্সি ভাষায় এর নাম
فارسی (ফর্সি বা
পর্সি)>বাংলা
ফার্সি।
পদ:
বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
ফার্সি
|
ইরানিয়ান ভাষা
|
ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষা
|
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা
|
প্রাকৃতিক ভাষা |
ভাষা
|
যোগাযোগ
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
ইংরেজি:
farsi।
প্রাচীন পারশ্যের ভাষার সাধারণ নাম। বর্তমানে ইরানের রাষ্ট্রীয় এবং সাংস্কৃতিক
ভাষা। ইরান ছাড়া এই ভাষার কয়েকটি দেশে এর আঞ্চলিক রূপ পাওয়া যায়। যেমন-
আফগানিস্তানে 'দারি', তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানে 'তাজিক'। এছাড়া ইরাক, রাশিয়া এবং
আজারবাইজানে এই ভাষার প্রচলন রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১১ কোটি মানুষ এই ভাষায়
কথা বলে।
মধ্য এশিয়ার
ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবার
থেকে এই ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল।
ধারণা করা হয়,
ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবারের সূত্রপাত ঘটেছিল
প্রাগ্
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার
থেকে। এই ভাষা-পরিবারের একাংশ খ্রিষ্ট-পূর্ব ৪০০০ বৎসরের দিকে উরাল পর্বতের
খিরঘিজের স্তেপ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। খ্রিষ্ট-পূর্ব ৩৫০০ বৎসরের দিকে এই
ভাষা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো‒
প্রাগ-ইন্দো-ইরানিয়ান (ইন্দো-ইরানিয়ান
ভাষা
উপ-পরিবারের
পূর্ব-রূপ) ও গ্র্যায়েসো-এরিয়ান।
খ্রিষ্ট-পূর্ব ৩৫০০ বৎসর থেকে পরবর্তী ২৫০০
বৎসরের ভিতরে বিবর্তিত ভাষাকে বলা হয় প্রাগ-ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষা।
প্রাগ-ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষাসমূহের ভিতরে ভাষাগত ঐক্য মোটামুটিভাবে খুব কাছাকাছি
ছিল। কারণ এই সময়ের ভিতর- এই ভাষার লোকেরা আশ-পাশের অঞ্চলের ভিতর সম্প্রসারিত হলেও
দূরবর্তী ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে নি। খ্রিষ্ট-পূর্ব ২৫০০ বৎসরের পরে এরা দূরবর্তী অঞ্চলে
ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এরা মূলত দক্ষিণ-পূর্ব রাশিয়া, কাজাকিস্তান এবং
ককেশাস অঞ্চলের দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর একটি শাখা ককেশাস পার্বত্য অঞ্চল অতিক্রম করে
উত্তর মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের দিকে চলে যায়। এর পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে এই অঞ্চলে
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার বিকাশ ঘটে নিজস্ব ধারায়। এই সময় এই অঞ্চলের আসিরীয় এবং সেমেটিক
ভাষাসমূহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই ভাষাটি একটি স্বতন্ত্র রূপ লাভ করে। এই
স্বতন্ত্র ভাষায় ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় 'মিতান্নি'
শিলালিপিতে।
খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ বৎরের পরে
প্রাগ-ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষা বিবর্তিত হয়ে যে ভাষায় রূপ নেয়, তাকে ভাষাবিজ্ঞানীরা
ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষা হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। এই সময় মধ্য-এশিয়ার পশ্চিম-পূর্ব
বরাবর উরাল নদী থেকে তিয়েন শান পর্যন্ত এরা বসতি স্থাপন করেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০
অব্দের ভিতরে এই ভাষা উপ-পরিবারে মানুষ তিনটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই অঞ্চল তিনটি
হলো‒
- নুরিস্তানি ভাষা :
খ্রিষ্ট-পূর্ব ১৮০০ অব্দের দিকে
ইন্দো-ইরানিয়ান
ভাষা
উপ-পরিবারের একটি বৃহৎ শাখা আফগানিস্তানের কাফিরস্তান নামক প্রদেশে বসতি স্থাপন
করে।
ইন্দো-ইরানিয়ান
ভাষার
এই শাখাটি বর্তমানে নূরিস্তানি ভাষা নামে পরিচিত। উল্লেখ্য কাফিরস্তানের
পূর্ববর্তী নাম ছিল নুরেস্তান ।
-
ভারতীয়-আর্য ভাষা
:
খ্রিষ্ট-পূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে
ইন্দো-ইরানিয়ান
ভাষার
একটি দল ইরান থেকে ভারতে প্রবেশ করে। এরা স্থানীয় অনার্যদের পরাজিত করে
পাঞ্জাবে বসতি স্থাপন করে। এদেরকে বলা হয় ভারতীয়-আর্য ভাষা।
- ইরানিয়ান ভাষা : ইরান থেকে
নুরিস্তানে আগত মানুষ এবং ভারতে প্রবেশকারী মানুষ ব্যতীত যারা ইরানে থেকে
গিয়েছিল, তাদের ভাষাকে বলা হয়‒
ইরানিয়ান ভাষা।
আদি ইরানিয়ান ভাষা থেকে আধুনিক ফার্সি ভাষার
উত্তরণের পর্বকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই পর্ব তিনটি হল-
- প্রাচীন পর্ব: এই পর্বের
সর্বপ্রাচীন নমুনা হলো- জরথুষ্ট্রবাদের পবিত্র গ্রন্থ অবেস্তা বা আবেস্তা। এই
কারণে অনেক সময় এই ভাষাকে আবেস্তান ভাষা বলা হয়। ধারণা করা হয়, প্রাচীন
পারস্যের উত্তর-পূর্ব অংশে এই ভাষা প্রচলিত ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ১১০০ অব্দের দিকে
এই গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল। এই ভাষার ভারতীয় শাখায় (বৈদিক ভাষা) রচিত ঋগ্বেদের
রচনাকাল আনুমানিক ১২০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ। বর্তমানে আবেস্তান এবং বৈদিক উভয়
ভাষাই মৃত।
প্রাচীন
ফারসি ভাষা নূতন রূপ লাভ করে খ্রিষ্টপূর্ব ৫২০ থেকে ৩০০ অব্দের ভিতরে।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০ অব্দে প্রথম পারশ্য সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়। ইতিহাসে এটি
অকিমনিদ সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। এই সাম্রাজ্যের সময়ের
কীলকলিপিতে লেখা প্রাচীন নমুনা পাওয়া গেছে।
- হাখামানশিদের আমলে। এই সময়ের
ফার্সি লেখা হতো । রূপ পাওয়া যায় প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমে
প্রাপ্ত কিছু কিউনিফর্ম লেখ্যরূপে। এ সময় মূলত রাজকার্য চালানোর জন্য এই লিপি
ব্যবহার করা হতো। শিলালিপিতে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, সম্রাট প্রথম দরিউশ এবং
প্রথম খাশইয়রের আমলে এই লিপি লেখা হয়েছিল।
- মধ্য পর্ব: ২৫০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ২২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পার্থীয় সাম্রাজ্য ইরানের ভাষা
এবং সংস্কৃতির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। এদের ভাষার নাম ছিল আর্সাসিদ। এরপর
শুরু হয় সাসানীয় রাজাদের শাসন। এদের রাজত্ব কাল ছিল ২২৪-৬৫১ খ্রিষ্টাব্দ
পর্যন্ত। সাসানীয় সাম্রাজ্যের সময় সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল মধ্য
যুগীয় ফার্সি ভাষা। এই ভাষারই অন্যা নাম ছিল পাহলভী ভাষা। এই সময়ই রচিত
হয়েছিল প্রাচীন ফারসি ব্যাকরণ ও নানা ধরনের সাহিত্য কর্ম। এসব লেখা হতো আরামীয়
লিপি থেকে উদ্ভূত একটি বিশেষ লিপিতে। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে আরবরা পারস্য জয়
করার পর মধ্য যুগীয় ফারসি রাজ মর্যাদা হারায়। এই সময় বহু আরবি শব্দ ফারসি ভাষায়
প্রবেশ করে। এছাড়া ফারসি আদি লিপির পরিবর্তে আরবি লিপির ব্যবহারও শুরু হয় এই
সময়।
- আধুনিক যুগ: আধুনিক ফাসি ভাষার
সূচনা হয়েছিল খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে। বর্তমানে এই ভাষা ইরানের রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
সূত্র: