প্রাগৈতিহাসিক ভাষা প্রাগ-ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবার |
ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবার
কুরগান উপপ্রমেয় অনুসারে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০-১০০০ বৎসরের ভিতর ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষার মানুষ আনাতোলিয়া থেকে বলকান অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। উপরের মানচিত্রে ভাঙা রেখা যুক্ত তীর চিহ্ন দ্বারা বলকান অঞ্চলে প্রবেশের সঙ্কেত দেখানো হয়েছে। |
কুর্গান উপপ্রমেয় (Kurgan
hypothesis):
এই উপপ্রমেয় ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের মানুষ প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল কৃষ্ণ
সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের উত্তরাঞ্চলের শুষ্ক প্রান্তরে বসতি স্থাপন করেছিল।
আধুনিক মানচিত্র অনুসারে এই অঞ্চলটি ছিল রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল ও ইউক্রেইন। এরা
ঘোড়াকে পোষ মানাতে সংক্ষম হয়েছিল। এবং এদের হাতেই তাম্রযুগের চূড়ান্ত পর্যায়
সাধিত হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ অব্দের কিছু পরে এরা মধ্য এশিয়া, ইউরোপ এবং
ভারতে প্রবেশ করেছিল। ইউরোপে আগত এই জাতির মানুষের ভাষা থেকে জন্ম নিয়েছে
কেল্টিক, ইটালিক, জার্মানিক, বাল্টো-স্লাভিক, গ্রিক এবং অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষা
সমূহ। পক্ষান্তরে মধ্য এশিয়া হয়ে এর একটি দল ইরান এবং ভারতবর্ষে প্রবেশ করে এবং
কালক্রমে এই ভাষা থেকে জন্ম নেয় ইরানের ভাষা এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষা।
এই সময়ের এদের একটি দল আনাতোলিয়াতে বসতি স্থাপন করেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব
৪০০০-১০০০ বৎসরের ভিতর ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষার মানুষ ককেশাস অঞ্চল পার হয়ে
আনাতোলিয়া থেকে বলকান অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫০০-৫০০০ বৎসরের ভিতরে একদল মানুষ আনাতোলিয়া থেকে একদল মানুষ বলকান অঞ্চলে চলে আসে। এদের একটি দল খ্রিষ্টপূর্ব ৬২০০-৫২০০ অব্দের দিকে সার্বি্যার দানুব্স্ নদীর তীরে বসতি স্থাপন করে। ভাষাবিজ্ঞানীরা এই অঞ্চলের আদি সভ্যতাকে স্টার্কেভো সংস্কৃতি (Starčevo culture) নামে অভিহিত করে থাকেন। অবশ্য কোনো কোনো ভাষাবিজ্ঞানী আদি স্টার্কেভো সভ্যতার ভাষাকে প্রাগ্-ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষা নামে অভিহিত করতে চান না। এদের অপর দলটি খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮০০-৫৩০০ অব্দের ভিতরে আনাতোলিয়া থেকে হাঙ্গেরির কোরোস অঞ্চলে প্রবেশ করে। এদের সভ্যতাকে কোরোস সভ্যতা (Körös culture) বলা হয়।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দের দিকে আনতোলিয়া থেকে অপর একটি দল উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দিকে চলে আসে। এদেরকে বলা হয় উত্তর-পশ্চিম ইন্দো-ইউরোপীয়ান (Northwestern Indo-European) ভাষী। এরাই হলো ইতালি, কেল্টিক ও জার্মানিক ভাষাগোষ্ঠীর উত্তরপুরুষ। একই সময় বলকান ও টোকারিয়ান অঞ্চলে চলে আসে। বলকান অঞ্চলে আগত ভাষাগোষ্ঠীকে বলা হয় বলকান প্রাগ-ইন্দো-ইউরোপিয়ান (Balkan Proto-Indo-European ) এবং টোকারিয়ান অঞ্চলে আগত ভাষগোষ্ঠীকে বলা হয় আদি স্টেপ প্রাগ-ইন্দো-ইউরোপিয়ান (Early Steppe Proto-Indo-European)।
আদি ইন্দো-ইউরোপিয়ানরা বাস করতো, আনাতোলিয়া,
বলকান, আরমেনিয়া বা ককেশাস অঞ্চলে। এরাই কালক্রমে ইউরোপ, মধ্য এশিয়া, ইরান এবং
ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিল।
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার নামকরণের ভিতর দিয়ে এর ব্যাপ্তী অনুভব করা যায় না। কারণ,
ভারত ও ইউরোপের প্রচলিত ভাষাকে একটি পরিবারের অন্তর্ভূক্ত করে এই পরিবারের নামকরণ
করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই বিচারে একে যথার্থ বিবেচনা করা যায় না। কারণ এই
ভাষা‒
ভারত ও ইউরোপ ছাড়াও ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা এবং এই সকল
মহাদেশের দেশসমূহ এবং এই সকল অঞ্চল-সংলগ্ন বহু দ্বীপপুঞ্জে। তাই বর্তমানে এই
ভাষা-পরিবারের নামকে শুধু মাত্র ভারত ও ইউরোপের সাথে সম্পর্কিত বিবেচনা না করে,
একটি পারিভাষিক নাম হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
প্রাথমিকভাবে এই ভাষা-পরিবারকে কয়েকটি ভাষা উপ-পরিবার হিসাবে ভাগ করা হয়েছে। এই উপ-পরিবারগুলো হলো‒
উল্লিখিত এই পরিবারগুলোর সবগুলোই বর্তমানে প্রচলিত আছে। এছাড়াও দুটি উপ-পরিবার বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই দুটি উপপরিবার হলো‒
সূত্র :
ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।
সাধারণ ভাষা বিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা। ডঃ রামেশ্বর শ।
http://en.wikipedia.org/wiki/Indo-European_languages
http://www.ethnologue.com/subgroups/indo-european