প্রাগ্- ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবার
Proto-Indo-European language
মানুষের কথিত ভাষার একটি প্রাগৈতিহাসিক পরিবার। মানুষের ভাষাসমূহের আদি অবস্থাকে বলা হয় প্রাগৈতিহাসিক ভাষা

ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে প্রাগৈতিহাসিক ভাষা সূদূর অতীতে বিভাজিত হয়ে, বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক ভাষা পরিবারের জন্ম হয়। এরই একটি ভাগ হলো-  প্রাগ্‌-ইন্দো ইউরোপিয়ান ভাষা।

ধারণা করা হয় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বৎসর আগে প্রাইমেট বর্গের অন্তর্গত হোমিনিডি গোত্রের হোমো গণের অন্তর্গত
sapiens নামক আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকা মহাদেশে। সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে বর্তমানে এই অঞ্চলটি হলো মরক্কোর জেবেল ইর্হৌদ (Jebel Irhoud)। উল্লেখ্য আগে মনে করা হতো, দুই লক্ষ বৎসর আগে আদি মানুষ উদ্ভব ঘটেছিল ইথিওপিয়ায়

প্রায় ১ লক্ষ ৯৫ হাজার বৎসর আগে উৎপত্তিস্থল অন্যত্র ছড়িয়ে পড়া শুরু করে। ১ লক্ষ ২৫ হাজার বৎসরের দিকে এরা ইথিওপিয়া সংলগ্ন ইরিত্রিয়া, সুদান এবং মিশরের দিকে ছড়িয়ে পড়া শুরু করে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মানুষ এশিয়ায় ও ইউরোপের দিকে চলে আসে। আফ্রিকা থেকে আগত প্রথম দলটিকে নেগ্রিটো জাতিগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

খ্রিষ্টপূর্ব  ৫০ হাজার বৎসরের দিকে উত্তর আফ্রিকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় এবং এর ফলে উত্তর আফ্রিকায় বন্যা সৃষ্টি হয়। সেই সাথে এই অঞ্চলে বাতাসে তীব্র আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। Mousterian Pluvial নামক জলবায়ু প্রায় ২০ হাজার বৎসর স্থায়ী হয়েছিল। ফলে আফ্রিকার আধুনিক মানুষ উত্তর আফ্রিকার আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া শুরু করে। লেবাননের
Ksar Akil অঞ্চলের যে অলঙ্কার পাওয়া গেছে, তা খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫ হাজার বৎসরের পুরানো। এদেরই একটি দল এশিয়া মাইনর-এ বসতি স্থাপন করে এবং একটি আদি সভ্যতার পত্তন ঘটায়। কালক্রমে এশিয়া মাইনর-এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলের মানুষও নতুন করে নতুন অঞ্চলে যাত্রা করে। এই দলটিই কালক্রমে ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং ভারতবর্ষে বসতি স্থাপন করে। আদিতে এদের যে ভাষা ছিল, তা সময়ের ব্যবধানে অন্যান্য ভাষার জন্ম দেয়। এই ভাষাসমূহ একটি আদি ভাষা রূপ থেকে জন্ম হয়। বিজ্ঞানীরা এই ভাষা-পরিবারের নামকরণ করেছিলেন  ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা। এই ভাষা পরিবারের আগের স্তরটিই প্রাগ-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা নামে চিহ্নিত করা হয়।


আদি ইন্দো-ইউরোপিয়ানরা বাস করতো আনতোলিয়া, বলকান, আরমেনিয়া বা ককেশাস অঞ্চলে। দেখা যায় খ্রিষ্ট-পূর্ব ৩৫০০ অব্দের ভিতরে বলকানঅঞ্চলের বসবাসরত মানুষের ভাষা বিবর্তিত হয়ে গ্র্যায়েকো-আর্য
(Graeco-Aryan) ভাষায় পরিণত হয়। এরই অপর শাখাটি প্রাগ-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা (Proto-Indo-European language) হিসাবে বিকশিত হয়। অবশ্য গ্র্যায়েকো-আর্য ভাষার অস্তিত্ব নিয়ে অনেক ভাষাবিদ সংশয় প্রকাশ করেছেন। মূলতঃ প্রাগ-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাটিও প্রাগৈতিহাসিক। কারণ এই ভাষারও কোন নমুনা পাওয়া যায় নাই। এই ভাষাটিরই বিবর্তিত ধারাটির নাম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা (Indo-European language) । এই ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ভাষাগুলো ব্যাপকভাবে কথিত হয়ে থাকে। এই পরিবারের কিছু ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও, একটি বিরাটসংখ্যক ভাষা বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে। অন্যান্য ভাষা-পরিবারগুলোর তুলনায় এই পরিবারের ভাষাসমূহে সবচেয়ে বেশি লোক কথা বলে থাকে।

সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Anatolian_hypothesis
http://en.wikipedia.org/wiki/Proto-Indo-European_language