টেসো/আইটেসো
Teso/Iteso
এদের ভাষার নাম  আইটেসো। এই কারণে এদেরকে আইটেসো নামে অভিহিত করা হয়।

আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উগান্ডা ও পশ্চিম কেনিয়ার আদিবাসী। ঐতিহ্যগতভাবে এদেরকে আইটেসো ভূ-অঞ্চলের অধিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদের ভাষার নাম আটেসো
(Ateso)

বৃহত্তম
নাইলো-হামাটিক নৃগোষ্ঠীর একটি অংশ। 
টেসোদের ধারণা যে এরা এসেছিল বর্তমান মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া অঞ্চল থেকে। হিব্রুভাষী জোশেফ মিশরের একজন কৃষ্ণাঙ্গী কন্যাকে বিয়ে করেছিল। এরপর ইস্রায়িলের দাসরা নিজস্ব বাসভূমির জন্য মিশর ত্যাগ করে, তখন এর একটি দল ইথিওপিয়াতে প্রবেশ করে এবং এখানে বসতি গড়ে তোলে এদেরকে গোষ্ঠীগতভাবে নাইলো-হামাটিক বলা হয়। এরা বাস করতো ইথিওপিয়ার অরণ্যাঞ্চলে। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে একদল মানুষ ইথিওপিয়া থেকে উগান্ডার উত্তর-পূর্বে চলে এসেছিল। পরে এরা দুই ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়। এর একটি শাখা বর্তমান কেনিয়াতে এসে বসতি স্থাপন করে। এদের থেকে পরে উৎপত্তি ঘটে মাসাই এবং কালেনজিন গোষ্ঠী। অন্যদিকে অপর শাখা থেকে উদ্ভব হয় আটেকের জাতি। আরও পরে আটেকেরা আরও বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীতে বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগগুলো হলো- টেসো,  ডোডোথ, জিয়ে, কারামোজোং এবং কুমাম।

এর একটি শাখা থেকে উদ্ভব হয় আটেকার (
Ateker)নৃগোষ্ঠী। পরে এই নৃগোষ্ঠী বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এদের ভিতরে উল্লেখযোগ্য ভাগগুলো হলো- জিয়ে (Jie), তুর্কানা (Turkana), কারামোজোং (Karamojong) এবং টেসো (Teso)

১৮শ শতাব্দীর শুরুর দিকে, এদের একটি অংশ বর্তমান উত্তর-পূর্ব উগান্ডার কারামোজা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। ১৮শ শতাব্দীর মধ্যভাগে এদের একাংশ উগান্ডার দক্ষিণ দিকে চলে আসে। এই অভিবাসনের সময় অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর সাথে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। এই সূত্রে টেসোরা উত্তর দক্ষিণ শাখায় বিভাজিত হয়ে যায়।

১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে উগান্ডার পূর্বাঞ্চল কেনিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে এই অঞ্চলের টেসোরা কেনিয়ার নাগরিকত্ব লাভ করে। এদেরকে বর্তমানে বলা হয় কেনিয়ান টেসো। আর উগান্ডার টেসোদের বলা হয় উগান্ডান টেসো।

এরা মূলত কৃষিজীবি। খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি বিংশ শতাব্দীর শুরু দিকে এরা জমি চাষের জন্য ষাঁড় ব্যবহার শুরু করে। এদের কৃষি পণ্যের ভিতরে রয়েছে জোয়ার, বাজরা, তুলা, মাশরুম, কাসাভা, শাকসব্জী।  বর্তমানে তুলা এদের প্রধান অর্থকরী ফসল। এদের প্রধান খাদ্য ভিতরে জোয়ার।

এরা সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। এদের সমাজ ছোটো ছোটো গোষ্ঠীতে বিভক্ত। একই গোষ্ঠীর ভিতরে বিবাহ নিষিদ্ধ। এই গোষ্ঠীর ভিতরে রয়েছে বংশ
(liniage)। বংশের পাঁচ পুরুষ পর্যন্ত রক্তের সম্পর্ককে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়।

টেসোরা মূলত ছিল প্রকৃতি পূজারী। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে মিশনারিদের প্রভাবে খ্রিষ্টানধর্ম গ্রহণ করে। বর্তমানে এদের অধিকাংশই ক্যাথলিক খ্রিষ্টান। এদের আদি ধর্মমতে প্রধান দেবতার নাম আকিজ বা এডেকে। এদের কল্যাণকর দেবতা হলো- আজোকিন। এই দেবতা আকারে ক্ষুদ্র বলে ঝোপঝাড়ে বাস করে। এদের মৃত্যু দেবতা আইপারা। এছাড়া নানা ধরনের নানা ধরনে অপদেবতা এরা বিশ্বাস করতো।

সূত্র: