বাঙালি
নিজেদেরকে
একসময় পরিচয় দিতো 'মাছে-ভাতে বাঙালি'। কালক্রমে এ পরিচয় অনেকটাই গৌরব হারিয়েছে।
হারিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম পরিচয় 'নদীমাতৃক' বিশেষণ। ফারাক্কা বা এই জাতীয় বাঁধের
প্রভাব, নদী এবং তৎসংলগ্ন হাওর, বিল ইত্যাদি ভরাট হয়ে যাওয়া, নদীর পানির দূষণ; সব
মিলিয়ে বাংলাদেশে জলসমস্যা বর্তমানে অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠছে ক্রমে ক্রমে। এই সূত্রে
বাংলাদেশের মৎস-সম্পদ ক্রমান্বয়ে দৈন্য দশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের মাছের প্রধান পরিচয়
স্বাদু বা মিঠা পানির
মাছ।
সমুদ্রকূলে
বসবাসকারীদের কাছে সামুদ্রিক মাছের কদর ছিল। কিন্তু তা অখণ্ড বঙ্গদেশের মূল ধারার
মাছ হিসাবে স্বীকৃত ছিল না। যদিও আধা সামুদ্রিক ইলিশ বাঙালি-সংস্কৃতির অংশ, কিন্তু
খাঁটি সামুদ্রিক মাছ (রূপচাঁদা, কোরাল, লইট্যা ইত্যাদি) বৃহত্তর বাঙালি সমাজের কাছে
অনেকটা অপাংক্তেয়ই ছিল। 'মাছে-ভাতে' বাঙলি বলতে যে মাছগুলোকে আদর করে রসুই ঘরে তুলে
এনেছিল, সে তালিকা বেশ একেবারে ছোটো নয়।
পানির প্রকৃতি অনুসারে বাংলাদেশের মাছকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
-
১.
মিঠা পানির মাছ
বাংলাদেশের মিঠা পানির মাছ নিয়ে ১৮২২
খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সিস হ্যামিলটন
(Francis Hamilton) প্রথম গবেষণা শুরু
করেছিলেন। এরপর ১৮৭৫ থেকে ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ভিতর ফ্রান্সিস ডে
(Francis Day)
বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের মৎস্যকূলের বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করেন। এরপর
পর্যায়ক্রমে অনেক গবেষক গবেষণা করেছেন। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্যরা ছিলেন
Shaw and Shebbeare
(১৯৩৭), Ahmed
(১৯৫৩), Bhuiya
(১৯৬৪), Shafi and
Quddush (২০০১),
Talwar and Jhingran
(১৯৯১) এবং
Jayaram (১৯৯৯)।
২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে
Rahman
(রাহমান) ব্যাপক গবেষণার পর, বাংলাদেশের মিঠা পানির মাছের মধ্যে ৫৫টি
গোত্রের অধীন ১৫৪টি গণের ২৬৫টি প্রজাতি তালিকাভূক্ত করেছিলেন। তিনি দেশী মাছের
পাশাপাশি ৬টি গোত্রের ১৬টি প্রজাতির বহির্দেশীয় মাছের তালিকাভূক্ত করেছিলেন।
মূলত এই মাছগুলো বিগত পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশের নিজস্ব মাছ হয়ে উঠেছিল। এই
মাছগুলো হলো―
কমনকার্প, বিগহেড, কার্প, থাইপুটি, মিররকার্প, চোষক মাছ, ব্লাক কার্প, থাই
পাঙ্গাস, আফ্রিকান মাগুর, মিল্কফিশ, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, নাইলোটিকা,
পিরানহা ইত্যাদি। এই বিদেশী মাছগুলোকে মূলত পরিকল্পিতভাবে চাষ করা হয়।
বাংলাদেশের
নদ-নদী, খালবিল, পুকর, বিল, হাওড় প্রভৃতির মিষ্ঠি পানিতে (অলবণাক্ত অর্থে) যে সকল
মাছ জন্মে বা পাওয়া যায় তাদেরকে মিঠা পানির মাছ বলে। এই জাতীয় মাছগুলি হল- আইড়,
ইলিশ, কই, কাচকি, কাতলা, কালিবাউস, খলিসা, গজার, চাঁদা, চিঙড়ি,
চিতল,
টাকি, ট্যাংড়া, দানকিনি, পাঙ্গাস, পাবদা, পুঁটি, বাইন, বোয়াল, মাগুর, মৃগেল, রুই,
শোল, সরপুঁটি ইত্যাদি।
-
২. খাটি সামুদ্রিক বা লবণাক্ত মাছ : বাংলদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় ভূভাগ বঙ্গোপসাগর
দ্বারা বেষ্টিত। বঙ্গোপসাগরে মাছকেই লোনা পানির মাছ বলা হয়। এই শ্রেণীর মাছগুলির
হলো- রূপচাঁদা, ছুরি, লাটিয়া ইত্যাদি।
-
৩. মিশ্র পানির মাছ।
কিছু মাছ বঙ্গোপসাগরের লোনা পানিতে বা নদীর মিষ্টি পানিতে পাওয়া যায়। যেমন -ইলিশ।