আক্কেলপুর
বাংলাদেশের
রাজশাহী বিভাগের
জয়পুরহাট
জেলার একটি উপজেলা।
স্থানাঙ্ক : ২৪.৫১ এবং
২৫.০৩ ডিগ্রী উত্তর দ্রাঘিমা এবং ৮৮.৫৪ ও ৮৯.০৬ ডিগ্রি পূব দ্রাঘিমার মধ্যে
আক্কেলপুর উপজেলার অবস্থান। এই জেলার উত্তরে জয়পুরহাট সদর এবং ক্ষেতলাল উপজেলা,
পূর্বে দুপচাঁচিয়া উপজেলা, দক্ষিণে আদমদীঘি উপজেলা, পশ্চিমে বদলগাছি এবং
নওগাঁ সদর
উপজেলা।
জনশ্রুতি আছে, এই এলাকায় আক্কেল কাজী নামক
একজন সম্পদশালী ব্যক্তি বাস করতেন। তার নাম অনুসারে এ স্থানের নাম হয়েছে আক্কেলপুর।
অন্যদিকে কথিত আছে যে, সাবেক 'ইকুরকুরি' মৌজায় সপ্তদশ শতাব্দীতে হজরত শাহ মখদুম
(রাঃ) নামক একজন ধর্মীয় সাধক সুদূর পারস্য থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য এখানে আসেন। তিনি অনুভব
করেন যে এখানকার লোকজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান। ফারসি আক্কেলমান্দ শব্দের অর্থ
বুদ্ধিমান। পরবর্তী সময়ে আক্কেলমান্দ হতেই আক্কেলপুর নামকরণ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ আমল থেকেই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় আক্কেলপুর ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য
বিশেষ করে সব্জির জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বকাল পর্যন্ত
আক্কেলপুরে প্রধান পরিচয় ছিল বগুড়া জেলার একটি রেলস্টেশন হিসেব। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে সাবেক বগুড়া জেলার আদমদীঘি থানার কিছু
অংশ নিয়ে প্রথমে আক্কেলপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় আক্কেলপুর রেলগেটের নিকট
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফজর উদ্দিন আকন্দ সাহেবের ভাড়া বাসায় প্রথমে পুলিশ স্টেশন চালু
হয়। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে আক্কেলপুর সদরকে
পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের আওতায়
জয়পুরহাট জেলার উপজেলায় উন্নীত করা হয়। সে সময় তুলসীগঙ্গা নদীর পশ্চিম পাড়ের প্রায়
৯ একর জায়গা জুড়ে এর প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়।
আক্কেলপুর জয়পুরহাট জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা। এই উপজেলার আয়তন ১৩৯.৪৭
বর্গকিলোমিটার। এই উপজেলা ৫টি ইউনিয়ন, ১১৬টি মৌজা, ১৪৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত।
এর ইউনিয়নগুলো হলো
−
গোপিনাথপুর,
রুকিন্দিপুর,
তিলকপুর, রায়কালী ও সোনামুখী।
জেলার প্রধান নদী : তুলসিগঙ্গা।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা যুদ্ধ
মুক্তিযোদ্ধা খোকন ও তার ২২ জন সহযোদ্ধা কানপুর গ্রামে রাজাকারের হাতে ধরা পড়ে।
এ সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের গুলিতে শহিদ হন। এরপর রাজাকাররা এসব
মুক্তিযোদ্ধাদের আক্কলপুর পাকবাহিনীর হাতে সোপর্দ করে। আক্কেলপুর উপজেলা সদরের
নিকটে আমুট্ট গ্রামে ফসলের মাঠের বধ্য ভূমিতে এঁদের হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পরে
ওই স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলার প্রাচীন নিদর্শনাদি
গোপীনাথপুর মন্দির : জয়পুরহাট জেলার
আক্কেলপুর উপজেলা সদর হতে মাত্র ৬/৭ কিঃ মিঃ পূর্বে গোপীনাথপুরে এই মন্দিরটি
অবস্থিত। এটি গোপীনাথ ঠাকুরের মন্দির নামে পরিচিত। যতদূর জানা যায় ভারতের
নদীয়া জেলার শান্তিপুরে প্রভুপাদ অদ্বৈত গোস্বামী সবসময় ঈশ্বরের ধ্যান করতেন।
তার স্ত্রী সীতা দেবীও ছিলেন সতী-সাধ্বী নারী । একদিন ২৪ পরগণার যুবক নন্দ
কুমার এবং নদীয়া জেলার আর এক যুবক যজ্ঞেশ্বর রায় প্রভুপাদ অদ্বৈত গোস্বামীর
নিকটে এসে দীক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে অদ্বৈত গোস্বামী মহোদয় সব কথা শুনে তাদেরকে
সীতাদেবীর কাছে পাঠান । সীতাদেবী ধ্যান যোগে জানতে পারেন যে, এই যুবকেরা পূর্ব
জম্মে জয়া ও বিজয়া নামে দুই সখী ছিল। তখন সীতাদেবী যুবকদের মাথা ন্যাড়া করে
স্নান করে আসতে বলেন । সীতাদেবীর নির্দেশ মত কাজ শেষ করে এলে তিনি তাদের দীক্ষা
দেন। সীতাদেবী নন্দকুমারের নাম নন্দিনী এবং যজ্ঞেশ্বরের নাম জংগলী রাখলেন।
নন্দিনী প্রিয়া বরেন্দ্র এলাকায় বর্তমান জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার
গোপীনাথপুর গ্রামের ১কিঃমিঃ উত্তরে গভীর জঙ্গলে নদীর ধারে একটি মন্দির স্থাপন
করেন। জনশ্রুতি আছে যে, ১৫২০ হতে ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন
হুসেন শাহ নন্দিনী প্রিয়ার পূজা-পার্বণ ও অতিথি সেবার কথা শুনে খুশি হয়ে
তাম্রফলকে লিখে পূর্ণগোপীনাথপুর ও গোপালপুর মৌজার সব সম্পত্তি দেবোত্তর হিসেবে
প্রদান করেন । এরপর পুরানো গোপীনাথপুর মন্দিরটির সংস্কার করা হয়। পাল যুগের
নির্মাণ কৌশল অনুসারে এ মন্দিরটির কাঠামো নির্মিত।
১৩০৪ বঙ্গাব্দের এক ভূমিকম্পে এ মন্দিরটি ভেঙ্গে পড়ে। ১৯২৮ হতে ১৯৩৬
খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বর্তমান মূল মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়। এখনও পুরাতন
কারুকার্যের কিছু নমুনা মূল ভবনে রয়েছে। মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুট। এখানে
প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় আরতি এবং মধ্যাহ্নে আধামণ চালের অন্নভোগ দেওয়া হয় ।
প্রতিবছর দোল পূর্ণিমাতে এখানে মেলা বসে এবং ১৩দিন ধরে এ মেলা চলে ।
জয়পুরহাট বার শিবালয় মন্দির:
জয়পুরহাট সদর থেকে তিন মাইল উত্তর পশ্চিমে ছোট যমুনা নদীর তীরে বেল-আমলা গ্রামে
এই মন্দিরটি অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা নিভৃত স্থানে বারটি
শিবমন্দির রয়েছে । মন্দিরগুলি কোন যুগে এবং কার দ্বারা নির্মিত তা সঠিকভাবে
জানা যায় নি। তবে মন্দিরের গঠন প্রণালী ও নির্মাণশৈলী দেখে ধারণা করা হয় এগুলি
সেন যুগে নির্মিত । কারণ সেন রাজা বল্লভ সেন ছিলেন শিবের উপাসক তথা শৈব।
এতদঞ্চলে সেন রাজাদের আরও কিছু কীর্তি রয়েছে।