জয়পুরহাট জেলা
ইংরেজি :
Rajshahi District

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি জেলা।

অবস্থান: উত্তরে গাইবান্ধাদিনাজপুর জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।  দক্ষিণে বগুড়ানওগাঁ‎ জেলা। পূর্বে বগুড়া গাইবান্ধা জেলা। পশ্চিমে নওগাঁ‎ জেলা ও  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ

এর আয়তন ৯৬৫.৪৪ বর্গকিলোমিটার বর্গকিমি। এই জেলার ৫টি উপজেলা নয়টি। উপজেলাগুলো হলো
জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল ইউনিয়ন সংখ্যা ৩২টি। গ্রামের সংখ্যা ৯৮৮টি। মৌজার সংখ্যা ৭৬২টি।

 

সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৪.৬ ডিগ্রী সে. সর্বনিম্ম ১১.৯ ডিগ্রী সে. । বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৬১০ মিঃ মিঃ ।


ইতিহাস
খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর আগে জয়পুরহাট নামক কোনো স্বতন্ত্র নাম পাওয়া যায় না। দীর্ঘকাল ধরে এই অঞ্চল গৌড়ের পাল ও সেন বংশীয় রাজাদের শাসনাধীন ছিল। সে সময়ে জয়পুরহাটের স্থানীয় নাম ছিল বাঘাবড়িহাট। পরবর্তী সময়ে কাগজপত্রে এর নামকরণ করা হয় গোপেন্দ্রগঞ্জহাট।

কথিত আছে পাল বংশীয় রাজা জয়পালের নামানুসারে জয়পুরহাট এর নামকরণ হয়। উল্লেখ্য, জয়পুরহাটের খঞ্জনপুর হতে ২ কিঃ মিঃ পশ্চিমে রাজা জয়পালের রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ আছে।


ব্রিটিশ শাসনমালে খাজনা আদায় এবং খঞ্জনপুর নীলকুঠিকেন্দ্রের অধীনস্থ ইংরেজবণিকদের নিরাপত্তার জন্য যমুনার তীরবর্তী লালবাজারে একটি থানা স্থাপন করা হয়। বর্তমান জয়পুর সদরের পশ্চিম দিকে যমুনা নদীর প্রান্ত বরাবর এই পুরানাপৈলে থানা অফিস ছিল। বর্তমানে এর নাম করিমনগর। করিমনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী যমুনানদীর ঘাটকে এখনো থানার ঘাট বলা হয়। এর দক্ষিণ দিকে লালবাজার পোষ্ট অফিস স্থাপিত হয়েছিল। সে সময়ে লালবাজার থানার খঞ্জনপুরে ইংরেজদের কুঠিবাড়ি ছিল। কুঠিবাড়ির তত্ত্বাবধায়ক পলিবাড়ি, খঞ্জনপুর, পুরানাপৈল ও পাঁচবিবি অঞ্চলের নীলকুঠিগুলোর তদারক করতেন। লালবাজার থানার সাথে প্রধান যোগাযোগপথ ছিল যমুনানদী। সে সময়ে লালাবাজার, ক্ষেতলাল এবং বদলগাছি থানা দিনাজপুর জেলার অন্ত্রর্গত ছিল।

 

১৮২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত উত্তর বঙ্গের এই অঞ্চলটি প্রশাসনিকভাবে রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলা হিসেবে পরিচিত ছিল। এই তিনটি জেলাই ছিল আয়তনে বিশাল। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী জেলা থেকে আদমদিঘি শেরপুর নৌখিলা ও বগুড়া থানা, রংপুর জেলা থেকে দেওয়ানগঞ্জও গোবিন্দগঞ্জ থানা দিনাজপুর জেলা থেকে লালবাজার, ক্ষেতলাল ও বদলগাছি থানা নিয়ে বগুড়া জেলা গঠিত। এই সময় এই জেলার প্রশাসক হিসেবে জন্য একজন জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। ব্যাণ্ডেল নামক একজন ম্যজিস্ট্রেটের অধীনে এই জেলা শাসিত হতো।

 

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিকম্পের কারণে যমুনা নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়। ফলে শুকনো মৌসুমে নৌযোগাযোগ অচল হয়ে পড়া শুরু করে। এছাড়া যমুনার পূর্বপ্রান্ত ভাঙনের ফলে লালবাজার থানা হুমকির মুখে পড়ে। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই মার্চ লালবাজার থানা অফিসকে খাসবাগুড়ী অঞ্চলে সরিয়ে আনা হয়। সে সময় এই স্থানের স্থানীয় নাম ছিল পাঁচবিবি। কথিত আছে এই অঞ্চলে পাঁচটি বিবির দরগা ছিল। ১০ই মহরম উপলক্ষে এসকল দরগায় তাজিয়া নির্মাণ করে উৎসব করা হতো। এসকল দরগায় জারি, সারি, মুর্সিদি গানের আসর বসতো। এছাড়া লাঠিখেলা ও মেলা হতো। অনুষ্ঠান শেষে পাঁচ বিবির দরগার তাজিয়া একটি স্থানে সাজিয়ে রাখা হতো। লোকমুখে ওই স্থানটি পাঁচবিবি নামে পরিচিতি লাভ করে।

 

১৮৭৫-১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চলে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করার জন্য ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা থেকে জলপাইগুড়ি পর্যন্ত প্রায় ২৯৬ মাইল দীর্ঘ রেলালাইন স্থাপন করা শুরু হয়। আমদানি-রফতানি এবং লোক চলাচলের সুবিধার জন্য ৪-৭ কিলোমিটার পরপর রেলস্টেশন তৈরি করা হয়। এই সময় এই অঞ্চলের তিলকপুর, আক্কেলপুর, জামালগঞ্জ এবং বাঘাবাড়ি-তে রেলস্টেশন স্থাপিত হয়। এই সূত্রে দমদমাতেও রেলস্টেশন স্থাপিত হয়। দমদমায় স্থাপিত রেলস্টেশন এবং থানা অফিসকে প্রশাসনিকভাবে নাম দেওয়া হয় পাঁচবিবি।

 

১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাঘাবড়িতে রেলস্টেশন স্থাপনের পর, খঞ্জনপুর এবং লালবাজার হাট গুরুত্বহীন অঞ্চলে পরিণত হয়। জয়পুর সরকারি ক্রাউন স্টেটের নামানুসারে বাঘাবাড়ি নাম পাল্টের রেলস্টেশনের নাম রাখা হয় জয়পুরহাট। কথিত আছে রাজস্থানের জয়পুর-এর সাথে ডাকঘর এবং রেলস্টেশনের নামের পার্থক্য করার জন্য জয়পুরের সাথে হাট শব্দ যুক্ত করা হয়েছিল।

 

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে জয়পুরহাট এবং পাঁচবিবির কয়েকটি গ্রাম নিয়ে পৃথকভাবে একটি থানা স্থাপন করা হয়। এই নতুন থানার নামকরণ করা হয় জয়পুরহাট। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে জয়পুরহাট থানাভবন তৈরি করা হয়। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ভূমি জরীপে জয়পুরহাট-এর পৃথক থানার এলাকার নকশা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি এই থানাকে বগুড়া জেলার মহকুমায় উন্নীত করা হয়। ১৯৮৪ সালে জয়পুরহাট জেলা গঠিত হয় ।

দর্শনীয় স্থান
ক্ষেতলাল উপজেলার আছরাঙ্গা দিঘী
কালাই উপজেলার নান্দাইল দিঘী
পাঁচবিবি উপজেলার প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি পাথরঘাটা
আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর মন্দির
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বারশিবালয় মন্দির
আছরাঙ্গা দিঘী
নান্দাইল দিঘী
লাকমা রাজবাড়ি
পাথর ঘাটা
নিমাই পিরের মাজার
গোপিনাথপুর মন্দির
হিন্দা কমবা শাহী মসজিদ


সূত্র :
http://www.joypurhat.gov.bd/