গাইবান্ধা
জেলা
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের
রংপুর বিভাগের একটি
জেলা।
স্থানাঙ্ক: ২৫.৩০ থেকে ২৫.৩৯০
উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৯.১২০ থেকে ৮৯.৪২০ পূর্ব
দ্রঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
অবস্থান: উত্তরে তিস্তা নদী এবং কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলা, উত্তর পশ্চিমে
রংপুর জেলার পীরগাছা এবং পশ্চিম পার্শ্বে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলা
এবং দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা, পশ্চিম-দক্ষিণে
জয়পুরহাট জেলার
কালাই উপজেলা এবং দক্ষিণে
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ ও সোনাতলা উপজেলা এবং পূর্ব পার্শ্বে
ব্রহ্মপুত্র
নদ।
এর আয়তন ২১৭৯.২৭ বর্গ কিলোমিটার। এই জেলার উপজেলা
৭টি। উপজেলাগুলো হলো−
গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্ল্যাপুর, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা
উপজেলা।
১৯৯১ সালের আদমশুমারী রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯,৪৯,২৭৪ জন।
ইতিহাস
১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ব-কালে
গাইবান্ধা নামে কোনো জায়গার সন্ধান পাওয়া যায় না। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ইজি গ্লেজিয়ার
তার রিপোর্টে গাইবান্ধা নামটি উল্লেখ করেন। সম্ভবতঃ ১৭৯৩ সালের আগে ঘাঘট নদীর
তীরবতী এই স্থানটি একটি পতিত ভূখণ্ড এবং গোচারণ ভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হতো।
গাইবান্ধার নামকরণ সম্পর্কে একটি কিংবদন্তী প্রচলিত আছ। কিংবদন্তী দুটো হলো− পাঁচ হাজার বছর আগে মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজধানী ছিল গাইবান্ধার গোবিন্দগজ থানা এলাকায়। মহাভারতের মতে- এই রাজা বিরাটের রাজসভায় পঞ্চপাণ্ডবের দ্রৌপদীসহ ছদ্মবেশে তদের ১২বছর কাটান। পরবতী ১ বছর অজ্ঞাত বাসের কালে যুধিষ্টির কঙক নামে বিরাট রাজর পাশা খেলার সাথী হয়েছিলেন। আর ভীমের দায়িত্ব ছিল পাচকের কাজ করা এবং তার ছদ্মনাম ছিল বল্লভ। বিরাট রাজার মেয়ে রাজকন্যা। উত্তরার নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র শিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিলেন অর্জুন বৃহন্নলা ছদ্মনামে। গোশালার দায়িত্বে ছিলেন সহদেব তন্তীপাল নামে এবং অশ্বশালার দায়িত্বে ছিলেন নকূল, তার ছন্দনাম ছিল গ্রন্থিক। আর বিরাট রাজার রানী সুদেষ্ণার গৃহপরিচারিকা হয়েছিলেন দ্রৌপদী। এই বিরাট রাজার বিখ্যাত ছিলেন গোসম্পদের জন্য। তার গাভীর সংখ্যা ছিল ষাট হাজার। মাঝে মাঝে ডাকাতরা এসে বিরাট রাজার গাভী লুণ্ঠন করে নিয়ে যেতো। সে জন্য বিরাট রাজা একটি বিশাল পতিত প্রান্তরে গো-শালা স্থাপন করেন। গো-শালাটি সুরক্ষিত এবং গাভীর খাদ্য ও পানির সংস্থান নিশ্চিত করার জন্য, নদী তীরবর্তী ঘেসো জমিতে এই গোশালা স্থাপন করা হয়েছিল। সেই নির্দিষ্ট স্থানে গাভীগুলোকে বেঁধে রাখা হতো। প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে এই গাভী বেঁধে রাখার স্থান থেকে এতদঞ্চলের কথ্য ভাষা অনুসারে এলাকার নাম হয়েছে গাইবাঁধা এবং কালক্রমে তা গাইবান্ধা নামে পরিচিতি লাভ করে। এই গল্পটি গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এই নাম প্রচলিত থাকলে, ব্রিটিশশাসকরা গোড়া থেকেই এই নাম ব্যবহার করতো। তাছাড়া এই অঞ্চলজুড়ে বিশাল জলাভূমি ছিল। গাইবান্ধা জেলার সাথে রাজা বিরাটের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে আজও প্রমাণিত হয় নি। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান যেমন হাতীবান্ধা, বগবান্ধা, চেংড়াবান্ধা, মহিষবান্ধা ইত্যাদি নামে জায়গা থাকায় মনে হয় গাইবান্ধা নামটি খুব বেশী পুরানো নয়।
হারুণ-উর-রশিদ প্রণীত, ‘জিওগ্রাফি অব বাংলাদেশ’ (১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ) গ্রন্থ মতে −'১৭৮৭ সালের ভয়াবহ বন্যা এবং ১৮৯৮ সালের শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে বৃহত্তর রংপুর ও বগুড়া অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির যথেষ্ঠ পরিবর্তন ঘটে। তিস্তা নদীর গতি পথ পরিবর্তন, দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট ও গাইবান্ধার তুলশীঘাটের মধ্যবর্তী ১৫ মাইলের বিস্তীর্ণ নদী ভরাট হয়ে যাওয়া এবং করতোয়া, ঘাঘট ও কাটাখালীর মত ছোট ছোট নদীর উৎপত্তি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।'
বগুড়া জেলার ইতিহাস গ্রন্থানুসারে জানা যায়−৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে চীনাপরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ যখন পৌন্ড্রবর্ধন তথা মহাস্থানগড় এলাকা থেকে পুর্ব উত্তরে কামরূপে যান। সে সময় তিনি একটি বিরাট নদী অতিক্রম করেছিলেন। হিউয়েন সাঙ এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে জানান যায় যে, বর্তমান গাইবান্ধা জেলা শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকা সপ্তম শতাব্দীতে নদীগর্ভে ছিল। কেন না পৌন্ড্রবর্ধন থেকে কামরূপ যাওযার যে নদী পথের কথা হিউয়েন সাঙ এর বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, সে পথ গাইবান্ধা জেলার উপর দিয়েই পড়ে। প্রাচীন মানচিত্রে উত্তরে মহাস্থানগড় (পৌণ্ড্রবর্ধন) দক্ষিণ পুর্বে বিক্রমপুর (ঢাকা) আর চট্টগ্রাম দেখা যায়। পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর মধ্যস্থ অঞ্চলে কোন স্থান দেখা যায় না। এছাড়া উক্তগ্রন্থের মানচিত্রে যে এলাকাটিতে জলাভূমি এবং বিশাল নদী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাতে রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার সাথে সংশ্লিষ্ট চলন বিল, বগুড়া জেলার ধুনট, সারিয়াকান্দি, গাবতলী, সোনাতলা এলাকাসহ গাইবান্ধা জেলার অধিকাংশ স্থলভাগ অন্তর্ভুক্ত হয়।
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকার পুর্বাংশসহ সমগ্র জেলা, নদীবাহিত পলিমাটি দ্বারা ভরাট হয়ে গড়ে উঠেছে। এছাড়া ভুমিকম্পের কারণেও এই অঞ্চলের ভূমি উন্নীত হয়েছে। একসময় তিস্তামুখ ঘাট এর অবস্থান ছিল তুলশীঘাটের কাছে। সেখান থেকে জামালপুর পর্যন্ত বিশাল নদী ছিল। অপরদিকে গোড়াঘাট পর্যন্ত ১৮ মাইল দুরত্বের চলাচলের পথ ছিল নদীপথে। বলা হয়ে থাকে ভূমিকম্পের ফলে তুলশীঘাট ও দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানার নদীপথটি ভরাট হয়ে স্থলভাবে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে রেলওয়ের যে ফেরী ঘাটকে তিস্তামুখ ঘাট হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়, তা প্রকৃতপক্ষে তিস্তা নদীর মুখ নয়, বরং যমুনা নদীতে অবস্থিত। রেলের ফেরীঘাটের তিস্তামুখ ঘাট নামকরণে একথার প্রমাণ মেলে যে, তিস্তা নদী যেখানে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়েছিল সেখানে রেলফেরীঘাট স্থাপিত হয়েছিল। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথ যে পরিবর্তিত হয়েছে তা নদীর বর্তমান অবস্থান থেকে প্রমাণিত হয়। মোশাররফ হোসেনের দিনাজপুরের ইতিহাস গ্রন্থে থেকে জানা যায়, ১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে করতোয়া নদী বিরাট রাজা ও রাজা ভগদত্তের সীমানা নির্ধারক নদী ছিল। এর মাঝখানের করোতোয়া নদী বিরাট এলাকা থেকে কামরূপের রাজা ভগদত্তের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। উল্লেখ্য আদিকালের কামরূপ এলাকা ধরা হয় আসাম থেকে ময়মনসিংহ জেলা পর্যন্ত। এ থেকেই গাইবান্ধা জেলার ভূখণ্ডের কোন অস্তিত্ব ধরা পড়ে না।
মোঘল সম্রাট আকবরের সভা পন্ডিত আবুল ফজল প্রণীত ‘আইন-ই-আকবরী’ নামক গ্রন্থে আকবরের শাসন পদ্ধতি ছাড়াও তাঁর শাসনমালে রাজ্যের সীমানা এবং মহালসমুহের বিবরণ পাওয়া যায়। আই-ই-আকবরী গ্রন্থে ঘোড়াঘাট সরকারের আওতাধীন যে ৮৪টি মহলের বিবরণ রয়েছে তাতে গাইবান্ধা নামে কোন মহালের নাম নেই। অবশ্য সেখানে নামান্তরে বালকা (বেলকা), বালাশবাড়ী (পলাশবাড়ী), তুলশীঘাট, সা-ঘাট (সাঘাটা), বেরী ঘোড়াঘাট, কাটাবাড়ি আলগাঁ ইত্যাদি নাম দেখা যায়। এ থেকে বলা যায় ষোড়শ শতাব্দীতেও গাইবান্ধা কোন উল্লেখযোগ্য ভুখণ্ড হিসাবে পরিগণিত হয় নি। ষোড়শ শতাব্দীরও আগে থেকে ঘোড়াঘাট ছিল একটি উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক কেন্দ্র।
ইংরেজ গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেষ্টিংস-এর শাসনামলে রংপুর জেলা কালেক্টরেটের আওতায় ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ২৪টি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়ন। সে সময়ে, বর্তমান গাইবান্ধা এলাকায় সে সময় ৩টি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই থানা তিনটি হলো গোবিন্দগঞ্জ থানা (২৭৮ বর্গমাইল) এবং সাদুল্যাপুর থানা (১৮৮ বর্গমাইল) গঠিত হয়। উল্লেখ্য এ দুটি থানা ছিল ইদ্রাকপুর পরগনায়। অপর থানাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে পাতিলাদহ পরগনায়। ভবানীগঞ্জ মৌজায় অবস্থিত ৯৩ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই থানার নাম ছিল ভবানীগঞ্জ। রংপুরের কালেক্টর ই-জি গ্লেজিয়ার এর ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের রিপোর্টে এই তথ্য উল্লেখিত হয়েছে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, রংপুর জেলার সদর থেকে সাদুল্যাপুর থানার দুরত্ব ছিল ৩৮ মাইল, গোবিন্দগঞ্জ ৫৬ মাইল এবং ভবানীগঞ্জের দুরত্ব ছিল ৫৪ মাইল।
ইংরেজ শাসনামলে এতদঞ্চলে সংঘটিত সন্ন্যাস
বিদ্রোহ, ফকির মজনু শাহ, দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠকসহ নানা বিদ্যোহীরা তাদের তৎপরতা
চালাতেন ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীপথে। এছাড়া গাইবান্ধার পার্শ্ববর্তী তুলশীঘাটের
সাথে সিপাহী বিদ্রোহের কিছুটা সংযোগ ছিল বলে তথ্য পাওয়া যায়। রতনলাল চক্রবর্তী রচিত
'বাংলাদেশে সিপাহী বিদ্রোহ’ গ্রন্থ মতে ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের সময়
একদল বিদ্রোহী সিপাহি রংপুরের দিকে অগ্রসর হয়। এই সংবাদ পেয়ে রংপুর ট্রেজারীর সম্পদ
রক্ষার্থে তৎকালীন কালেক্টর ম্যাকডোনাল্ড ট্রেজারীর সমুদয় মালামাল ঘোড়ার বহরে করে
৪০ মাইল দুরে তুলশীঘাটের গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে রাখেন। উল্লেখ্য, তুলশীঘাট নামক
স্থানটি ঘর তুলশী গাছসহ বিভিন্ন গাছ-গাছালিতে পরিপুর্ণ ঘন জঙ্গল ছিল। তবে তুলশী
গাছের আধিক্যের কারণেই স্থানটির নাম হয়েছিল তুলশীঘাট। রংপুর জেলা থেকে এই সব এলাকার
বিদ্রোহীদের তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব ছিল না। সেজন্য প্রশাসনিক কারণে ব্রহ্মপুত্র
নদীর তীর ঘেষে ভবানীগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে এই ভবানীগঞ্জ থানাতেই
এতদঞ্চলের মধ্যে প্রথম ফৌজদারী শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়।
১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সাদুল্যাপুর এবং ভবানীগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত হয় ভবানীগঞ্জ মহকুমা।
১৮২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই এপ্রিল গোবিন্দগঞ্জ থানা পাশ্ববর্তী বগুড়া জেলা অন্তর্ভুক্ত
হয়। কিন্তু ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই আগস্ট গোবিন্দগঞ্জ থানাকে বগুড়া থেকে বিচ্ছিন্ন
করে ভবানীগঞ্জ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পর্যায়ক্রমে সাঘাটা, ফুলছড়ি, পলাশবাড়ী
এবং সর্বশেষে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে সুন্দরগঞ্জ থানা ভাবানীগঞ্জ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত
হয়। ভবানীগঞ্জ মহকুমা পাতিলাদহ পরগনায় স্থাপিত হলেও মহকুমার পশ্চিমাংশ অর্থাৎ
বর্তমান গাইবান্ধা শহর এলাকা ছিল বাহারবন্দ পরগনায় এবং এই দুই এলাকা ছিল দুইজন
প্রতিদ্বন্দ্বী জমিদারের আওতাধীন। ভবানীগঞ্জ মহকুমায় ফৌজদারী শাসন ব্যবস্থার আওতায়
মহকুমা সদরে ভবানীগঞ্জের জমিদারের এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ফৌজদারী আদালত।
ভবানীগঞ্জে মহকুমা থাকাকালীন সেখানে প্রশাসনিক সদর দপ্তর, ডাকঘর, ফৌজদারী আদালত,
জেলখানা এবং হাসপাতাল থাকলেও দেওয়ানী আদালত সে সময়ে ছিল মুক্তিপুর পরগনাধীন
বাদিখালীতে। ভবানীগঞ্জ মহকুমা সদর থেকে বাদিয়াখালীর দুরত্ব ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমে
প্রায় ১০ কিলোমিটার। পাতিলাদহ এবং মুক্তিপুর পরগনার দুই জমিদারের আভিজাত্যের
লড়াইয়ের কারণেই মহকুমা সদর থেকে এতদুরে দেওয়ানী আদালত প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়।
এছাড়া ভবানীগঞ্জসহ পাতিলাসহ পরগণাভুক্ত এলাকা ছিল ঠাকুর পরিবারের জমিদারীতে। বলা
হয়ে থাকে এই ঠাকুর পরিবারের প্রসন্ন ঠাকুর ছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবারের
শরীক। পাবনা জেলার কুঠিবাড়ী যেমন ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরদের জমিদারী, তেমনি এই
পাতিলাদহ পরগনার জমিদারী লাভ করেন প্রসন্নঠাকুরের পরিবার। অন্যদিকে বাহারবন্দ
পরগনার অংশটি ছিল কাশিম বাজারের কৃষ্ণ নাথের স্ত্রী মহারানী স্বর্ণময়ীর আওতাধীন
জমিদার মনীন্দ্র নন্দীর জমিদারীতে। আর মুক্তিপুর পরগণার অংশটুকু ছিল থানসিংহপুরের
জমিদার লাহিড়ী পরিবারের অধীন। তাই ভবানীগঞ্জে ঠাকুর পরিবারের জমিদারীতে মহকুমা
সদরসহ ফৌজদারী কোর্ট স্থাপিত হলে থানসিংহপুরের জমিদার ইংরেজ সরকারের সাথে যোগাযোগ
করে দেওয়ানী আদালতটি তাদের জমিদারী এলাকা মুক্তিপুর পরগনাধীন বাদিয়াখালীতে স্থাপন
করেন।
১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর পুর্বপাড় জুড়ে ভবানীগঞ্জ মহকুমা এলাকায় ব্যাপক নদী ভাংগন শুরু হয়। ফলে ভাবনীগঞ্জ মহকুমা সদর শহর স্থানান্তরিত করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সে সময় ভবানীগঞ্জের জমিদার ঠাকুর পরিবার এবং থানসিংপুরের জমিদার লাহিড়ী পরিবারের মধ্যে চরম দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। উভয় জমিাদর তাদের নিজ নিজ জমিদারীতে নতুন মহকুমা সদর স্থাপনের প্রচেষ্টা চালান। শেষ পর্যন্ত ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে পাতিলাদহ পরগনার ভবানীগঞ্জ মৌজা থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে রাজা বিরাটের কথিত গো-শালা ও গো-চারণভুমি হিসাবে পরিচিত গাইবান্ধা নামক স্থানে মহকুমা সদর স্থানান্তর করা হয়। সেসময় মহারানী স্বর্ণময়ীর দান করা বাহারবন্দ পরগণার গাইবান্ধা নামক স্থানে মহকুমার নতূন প্রশাসনিক ভবন ও আদালত ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাদীয়াখালী থেকে দেওয়ানী আদলত নব-নির্মিত প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। গোড়ার দিকে গাইবান্ধায় প্রতিষ্ঠিত মহকুমাটি ভবানীগঞ্জ নামে ছিল। কিন্তু ভবানীগঞ্জ মৌজাটি ব্রহ্মপুত্রের ভাংগনে বিলীন হতে শুরু করলে, মহকুমাটির নাম পরিবর্তন করে গাইবান্ধা করা হয়।
মহকুমার গোড়াপত্তন হওয়ার পর গাইবান্ধায় নগরায়ন শুরু হয় । ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে গাইবান্ধা মহকুমা শহর এলাকার আয়তন ছিল ২.৩৩ বর্গমাইল এবং শহরের লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ১,৬৩৫ জন। গাইবান্ধা শহরের গোড়া পত্তনের পর ধীরে ধীরে জনসংখা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে শহর এলাকার জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৮ হাজার। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলায় রূপান্তরিত হয়।
গাইবান্ধার মুক্তিযুদ্ধ
[সূত্র :http://www.gaibandha.gov.bd/node/106941]