কর্ণফুলী কাগজের কল
চট্টগ্রাম [বাংলাদেশ]
বিভাগের
রাঙ্গামাটি
জেলার অন্তর্গত
কাপ্তাই উপজেলার
চন্দ্রঘোনা থানায় স্থাপিত
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়
মালিকানাধীন বৃহত্তম কাগজের কল। এই কলটি বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের দ্বারা পরিচালিত
হয়ে থাকে। কলটি চন্দ্রঘোনায়
কর্ণফুলী
নদীর তীরে অবস্থিত।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তদানীন্তন পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত
হয়েছিল। এই কারখানাটির জন্য সরকার ৩২.৪৭ একর জমি ক্রয় করেছিল। এ ছাড়া লিজকৃত জমি
ছিল ১১৯২.৯৬ একর। এর ভিতরে কারখানার এলাকা ৪৪২.৩২ একর।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন এবং ইতালির সহযোগিতায়
এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় কারখানাটি স্থাপিত হয়। এর স্থাপনা ব্যয় ছিল ৬.৭৫৭
কোটি রুপি।
কারখানটির লক্ষ্যমাত্রা ছিল বার্ষিক ৩০,০০০ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন। ১৯৫৩
খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর থেকে কারখানাটি উৎপাদন শুরু করে। স্থাপনার ত্রুটি থাকার
কারণে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সরকার দাউদ গ্রুপের কাছে ভর্তুকি মূল্যে কারখানাটি বিক্রয় করে
দেয়। এই গ্রুপ এই কারখানাটিকে আধুনিকায়ন করে উৎপাদন অব্যাহত রাখে। ১৯৬৯-৭০
সালে কাগজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩১,৩৭৮ টন।
১৯৭১
খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে, বাংলাদেশ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা
(বিআইডিসি)কারখানটি
অধিগ্রহণ করে। ১৯৭৩-৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ১৯,০৪৪ টন কাগজ
উৎপাদন করে এবং এর বেশিরভাগই বাজারজাতকরণের দুর্বলতায় অবিক্রিত অবস্থায় থেকে যায়। অবিক্রিত কাগজ স্তূপ করে রাখা হতো।
এছাড়া কাগজ তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ
সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ায় কারখানাটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই সময় নিয়মিত কাঠের কাঁচামাল সরবরাহের
নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ বন উন্নয়ন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন।
এই সময় সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হলে, কাগজের চাহিদা
বৃদ্ধি পায়। কর্ণফুলী কাগজ কলের পক্ষে এই চাহিদা মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
১৯৭২-৭৩ এবং ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরের মধ্যবর্তী সময়ে প্রতিবছর গড়ে ১৬ কোটি টাকা লোকসান
হতে থাকে। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে সরকার এই কারখানা সমস্যা শনাক্তের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এই সূত্রে ১৯৭৯-৮০ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ কোটি টাকার একটি পুনর্গঠন পরিকল্পনা অনুমোদন
করে। এ কাজের জন্য ভারত, সুইডেন, আমেরিকা এবং জাপান থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে কারখানাটি পূর্ণোদ্যোমে কাগজ উৎপাদনে সক্ষম হয়ে উঠে। তবে
অব্যবস্থাপনার কারণে বর্তমানে কারখানাটি পূর্ণোদ্যোমে কাগজ উৎপাদন করতে পারছে না।
ফলে সরকারকে প্রতিবৎসর লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বৈদেশিক বাজারে কাগজ রপ্তানি করতে সক্ষম হয়। এই বছরেই কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাকে
সচল রাখার জন্য ৪,১০২ জন
শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। ১৯৯০-৯১ প্রকৃত উৎপাদনের পরিমাণ
দাঁড়িয়েছিল ৩০,২১৬ টন। এর ভিতরে ছিল হাতে লেখার
কাগজ, ছাপা ও মুদ্রণের কাগজ, করোগেটেড বোর্ড, মোমের প্রলেপযুক্ত কাগজ, আঠাযুক্ত
ফিতা এবং বিটুমিন কাগজ।
এই কারাখানার প্রধান কাঁচামাল হলো বাঁশ। এই বাঁশ থেকে উৎপন্ন হয় কাগজের মণ্ড এবং
কাগজ। এর বাইরে এই কারখানায় উৎপাদিত কাগজের জন্য মণ্ড সিলেট পাল্প পেপার মিল সংগ্রহ
করা হয়। উন্নতমানের কাগজের বিদেশ থেকেও মণ্ড আমদানী করা হয়।
তথ্যসূত্রঃ
http://bn.banglapedia.org/