কাপ্তাই উপজেলা
চট্টগ্রাম [বাংলাদেশ] বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। কাপ্তাই নামকরণ নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। অনেকে মনে করেন মার্মা কত্থয় (কোমর) এবং কিয়ং (খাল) শব্দদ্বয়ে কাপ্তাই নামটি প্রচলিত হয়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থান: ২২°২১'-২২°৩৫' উত্তর অক্ষাংশ ৯২°০৫'-৯২°১৮' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। 
রাঙ্গামাটি  জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। এর উত্তরে কাউখালি, উপজেলা ও রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা, পূর্বে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা ও বিলাইছড়ি উপজেলা, দক্ষিণে রাজস্থলী উপজেলা এবং পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলা।

আয়তন: ২৫৯ বর্গকিলোমিটার।

নদনদী ও খাল বিল: কাপ্তাই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে
কর্ণফুলী। এছাড়া রয়েছে কাপ্তাই হ্রদ ও কাপ্তাই খাল।

জনসংখ্যা ও জাতি সত্তা: ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কাপ্তাই উপজেলার জনসংখ্যা ৬৬,১৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬,৬৭৭ জন এবং মহিলা ২৯,৪৫৮ জন। মোট জনসংখ্যার ৬২.৭৮% মুসলিম, ৫.৯৫% হিন্দু, ৩০.৪৯% বৌদ্ধ এবং ০.৭৮% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মুরং, খিয়াং, পাংখোয়া প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

প্রশাসন
১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুন প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলাকে ভাগ করে
রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের
ACT XXII দ্বারা ঐ বছরের ১লা আগষ্ট তারিখে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। এই সময় একজন অফিসারকে পার্বত্য ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীদের জন্য সুপারিনটেনডেন্ট পদে নিযুক্ত করা হয়। এভাবেই রেগুলেশান জেলার সিভিল, ক্রিমিনাল এবং রাজস্ব আদালত ও কর্মকর্তাদের অধিক্ষেত্র হতে পাহাড়ী ও বনাঞ্চলকে আলাদা করা হয়। একজন হিল সুপারন্টেন্ট নিয়োগের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল আক্রমণকারী ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীদের প্রতিরোধ করা এবং সাধারণ ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর লোকদের রক্ষা করা। তার অধীনস্থ পাহাড়ী এলাকাকে তখন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে অভিহিত করা হয়। উল্লেখ্য এর আগে এই অঞ্চলকে কার্পাসমহল বলা হত। এই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সদর দপ্তর চন্দ্রঘোনাতে স্থাপিত হয়। এই ব্যবস্থার পর, পরবর্তী কয়েক বছরের জন্য সীমান্তের শান্তিরক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়। এ সময়ে রাণী কালিন্দি চাকমা রাজার দায়িত্বে ছিলেন।

১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক জেলার সৃষ্টি করা হয়। এই সময় চন্দ্রঘোনা এই জেলার সদর দপ্তর করা হয়। সে সময় কাপ্তাই ছিল
রাঙ্গামাটি জেলার মহকুমা। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে কাপ্তাইয়ে থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে কাপ্তাইকে রাঙ্গামাটি জেলার উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

বর্তমানে এই উপজেলায় রয়েছে ৫টি ইউনিয়ন। এর ভিতরে চন্দ্রঘোনা থানার অধীনে আছে ২টি ইউনিয়ন। এ দুটি ইউনিয়ন হলো- চন্দ্রঘোনা সদর ও রাইখালী। অপর দিকে কাপ্তাই থানার অধীনে রয়েছে ৩টি ইউনিয়ন। এই তিনটি ইউনিয়ন হলো- চিৎমরম, কাপ্তাই সদর এবং ওয়াজ্ঞা।

এই ৫টি ইউনিয়নে রয়েছে ১০টি মৌজা, ১৪৮টি গ্রাম রয়েছে। উপজেলা শহর ২টি মৌজা নিয়ে গঠিত। উপজেলা শহরের আয়তন ১২৬.৯১ বর্গ কিমি এবং জনসংখ্যা ৩৭৭২০ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিমি ২৯৭ জন।

সংসদীয় আসন: ২৯৯ রাঙামাটি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: কাপ্তাই উপজেলার স্বাক্ষরতার হার ৬০.৩০%। এ উপজেলায় রয়েছে ১টি ডিগ্রী কলেজ, ১টি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১টি স্কুল এন্ড কলেজ, ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি দাখিল মাদ্রাসা, ৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে।

স্বাস্থ্য: সরকারী হাসপাতাল রয়েছে ২টি। এছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে ৪টি।
 

যোগাযোগ ব্যবস্থা: কাপ্তাই উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক এবং রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়ক। এই সড়ক পথে সব ধরণের যানবাহন চলাচল করে থাকে।

শিল্প-কলকারখানা
দেশের প্রধান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এই উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কাগজের কল
কর্ণফুলী কাগজের কল, ওয়াজ্ঞা টি এস্টেট, কাঠ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ও বাংলাদেশ টিম্বার এই উপজেলায় অবস্থিত।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের সাহায্যে উৎপাদিত ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।

কৃষি: কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য, কর্ণফুলি নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বর্তমানে এই হ্রদে প্রচুর পরিমাণে মিঠাপানির মাছ চাষ হয়। নৌবিহার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি আবাদ ইত্যাদিতেও এর অবদান উল্লেখযোগ্য। প্রধান ফসল ধান। অন্যান্য ফসলের মধ্যে রয়েছে আখ, আনারস, পাহাড়ি আলু, তুলা, আদা ও শাকসব্জি।

বনজ সম্পদ: কলা, কাঁঠাল, আদা, মাছ, তুলা, বাঁশ, বেত ইত্যাদি।
ফলদবৃক্ষ: কলা, কাঁঠাল, আম. লেবু, নারকেল,

দর্শনীয় স্থান:


তথ্যসূত্রঃ
http://kaptai.rangamati.gov.bd