রাজস্থলী
চট্টগ্রাম [বাংলাদেশ]
বিভাগের
রাঙ্গামাটি
জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।
কথিত আছে এই উপজেলার আগের নাম ছিল বুধিঝি। রাখাইন রাজ্যের রাজা বর্মী সেনাপতির কাছে
পরাজিত হয়ে এই অঞ্চলে আসেন। এই স্থানে নতুন রাজ্য স্থাপনের জন্য তিনি প্রথা
অনুযায়ী তিনি কলাগাছ রোপণ করেন। সে সময়ের কুসংস্কার ছিল যে, যত বেশি কলার কান্ধি
হবে, রাজ্যের প্রসার হবে তত।
রাজা রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের খাগড়াছড়ি পাড়ায় এই কলাগাছ রোপণ করে
একটি থলে ঝুলিয়ে দেন। কিন্তু কলার ছড়ায় কান্ধি কম হওয়ায়, তিনি হতাশ হয়ে এই
স্থান ত্যাগ করে বান্দরবান চলে যান। রাজা চলে গেলেও কলাগাছটিতে রাজার ছোট থলে রয়েই
যায়। তখন থেকে ওই স্থানটি রাজারথলে নামে পরিচিত হয়ে উঠে। কালক্রমে এই নাম রাজারথলি
হয়ে যায়। বাঙালি পুরোহিতদের দ্বারা থলে বা থলি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ স্থলী দ্বারা
প্রতিস্থাপিত হয়ে রাজস্থলী নামে পরিণত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান:
২১°১৭'-
২১°২৬' উত্তর অক্ষাংশ ৯২°০৬'-৯২°২২'
পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।
রাঙ্গামাটি জেলা সদর
থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। এর উত্তরে
কাপ্তাই উপজেলা, পূর্বে
বিলাইছড়ি
উপজেলা, দক্ষিণে
বান্দরবান
জেলার
বিলাইছড়ি উপজেলা ও
বান্দরবান
সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে
চট্টগ্রাম
জেলার
রাঙ্গুনিয়া
উপজেলা অবস্থিত।
আয়তন: ১৪৫.০৪ বর্গকিলোমিটার।
নদনদী ও খাল বিল: এই উপজেলার ভিতর দিয়ে
প্রবাহিত হয়েছে হয়েছে কাপ্তাই খাল।
জনসংখ্যা ও জাতি সত্তা: ২০১১
খ্রিষ্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই উপজেলার জনসংখ্যা ২২,৬১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ
১২,১৪২ জন এবং মহিলা ১০,৪৬৯ জন। মোট জনসংখ্যার ২২.৭৮% মুসলিম, ৭.১৮% হিন্দু, ৬২.৪১%
বৌদ্ধ এবং ৭.৬৩% খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা,
মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, চাক, খুমি, লুসাই, পাংখোয়া প্রভৃতি আদিবাসী
জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
উপাসনালয়: রাজস্থলী উপজেলায় ১৬টি মসজিদ, ৩টি মন্দির, ২৮টি বিহার এবং ২টি
গীর্জা রয়েছে।
শিক্ষা: রাজস্থলী উপজেলার স্বাক্ষরতার হার ৩৪%। এ উপজেলায় ২টি কলেজ,
৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়
রয়েছে।
অর্থকরী ফসল:
তিল, ভুট্টা, চিনা বাদাম, সরিষা, মসূর, আলু, মিষ্টি আলু, বারমাসি শিম, ঢেরস,
বেগুন, পাহাড়ী মরিচ ইত্যাদি। মসল্লা জাতীয় ফসলের মধ্যে যেমন- আদা, হলুদ, পেঁয়াজ,
রসুন, তেজপাতা, ধনিয়া, মরিচ, বিলাতি ধনিয়া ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক সম্পদ: বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বাঁশ, বেত, পাথর বালি ইত্যাদি।
প্রাণিজ সম্পদ: গরু, ছাগল, হরিণ, ভাল্লুক, বানর, শুকর, গয়াল, হাতি, ইত্যাদি।
যোগাযোগ:
রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে
বিলাইছড়ি যাওয়ার কোনো সড়ক ব্যবস্থা নেই।
রাঙ্গামাটি জেলা সদরের
তবলছড়ি নৌঘাট থেকে বা কাপ্তাই
উপজেলার কাপ্তাই নৌঘাট থেকে
কাপ্তাই হ্রদ ও রাইখ্যাং
নদী হয়ে ইঞ্জিন বোটে এই উপজেলায় যাওয়া যায়।
প্রশাসন: বর্তমানে এই উপজেলাটিতে ৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। এগুলো হলো-
ঘিলাছড়ি, গাইন্দ্যা ও বাঙ্গালহালিয়া।
ইতিহাস:
এই অঞ্চল রাখাইন শাসনাধীন ছিল। ব্রিটিশরা অঞ্চলের অধিকার লাভের পর, ১৯০৯
খ্রিষ্টাব্দে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অংশের একটি থানা স্থাপন করে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের পর
পাকিস্তান আমলে রাজস্থলী থানা হিসেবেই থেকে যায়।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকবাহিনী এ উপজেলায়
ব্যাপক হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। এই সময় ভারতের মিজোরাম রাজ্যের
বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র মিজো গেরিলারা পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষের দিকে গাইন্দ্যা ইউনিয়নে বান্দরবান জেলার সীমান্ত সংলগ্ন
এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা
শহীদ হন। ১৫ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এই থানাকে উপজেলায় পরিণত করা হয়।
নির্বাচনী আসন: ২৯৯ পার্বত্য রাঙামাটি।
দর্শনীয় স্থান: রাজস্থলী ঝুলন্ত সেতু। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ পদাতিক বাহিনীর
সৈন্যরা কাপ্তাই খালের উপর এই সেতুটি তৈরি করেছিল। এই বছরের ২৪শে ফেব্রুয়ারি
ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ সেতুটি উদ্বোধন করেছিলেন।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট।
এই সেতুটি রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড এর রাজস্থলী বাজার ও
গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ওয়ার্ডের নারামুখ মারমা পাড়ার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে।
উল্লেখ্য, বর্ষা মৌসুমে বন্যার কারণে উক্ত দুই ইউনিয়নের মধ্যে যাতায়াত
ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।
তথ্যসূত্রঃ