বিলাইছড়ি
চট্টগ্রাম [বাংলাদেশ] বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

বিলাই-এর প্রমিত বাংলা বিড়াল এবং চাকমা ভাষার ছড়ি অর্থ ঝর্না বা পাহাড়ি ছোট নদী। উল্লেখ্য, সংস্কৃত বিলালী শব্দটি বাংলা ও মৈথিলি ভাষায় 'বিলাই' হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর অঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চল পর্যন্ত 'বিলাই'  অঞ্চলিক শব্দ হিসেবে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক বাংলা থেকে চাকমা ভাষায় এই শব্দটি অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই এলাকার নাম বিলাইছড়ি হয়েছে কেন হয়েছে, সে সম্পর্কে ঐতিহাসিক কোনো নমুনা পাওয়া  যায় না। তবে এ বিষয়ে একটি চাকমা লোককথা আছে। এই লোকথাটি হলো-

একবার স্থানীয় কিছু মানুষ একটি পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে কাঠ সংগ্রহের জন্য গেলে, তারা একটি বৃহৎ এবং হিংস্র বনবিড়ালের মুখোমুখী হয়। বনবিড়ালকে এরা তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে, বিড়ালটি এদের আক্রমণ করে। পরে কাঠুরিয়া বিড়ালটিকে হত্যা করে এবং নিজেদের বসতিতে নিয়ে আসে। পরে এই বিড়লটির হত্যাস্থানকে বিলাইছড়ি নামে অভিহিত করে।

ভৌগোলিক অবস্থান: ২১°৫৪'- ২১°৩৩' উত্তর অক্ষাংশ ৯২°১৭'-৯২°৩৬' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। রাঙ্গামাটি  জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এর উত্তরে জুরাছড়ি রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা, পশ্চিমে কাপ্তাই রাজস্থলী উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমাথানচি উপজেলা এবং পূর্বে মিয়ানমারের  চীন প্রদেশ ও ভারত-এর মিজোরাম প্রদেশ অবস্থিত।

আয়তন: ৭৪৫.৯২ বর্গকিলোমিটার।

নদনদী ও খাল বিল: এই উপজেলার ভিতর দিয়ে রাইখ্যাং নদী প্রবাহিত হয়েছে।


জনসংখ্যা ও জাতি সত্তা: ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিলাইছড়ি উপজেলার জনসংখ্যা ২৮,৫২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫,৬২৭ জন এবং মহিলা ১২,৮৯৮ জন। মোট জনসংখ্যার ১৫.১৪% মুসলিম, ১.৮৮% হিন্দু, ৬৯.২৬% বৌদ্ধ এবং ১৩.৭২% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, বম, মুরং, পাংখোয়া, চাক, রিয়াংখুমি, ম্রো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

উপাসনালয়: এই উপজেলায় রয়েছে ১৬টি মসজিদ, ২টি হিন্দু মন্দির, ৪২টি বৌদ্ধ বিহার ও ৬টি গির্জা রয়েছে।

অর্থকরী ফসল:
তিল, ভুট্টা, চিনা বাদাম, সরিষা, মসূর, আলু, মিষ্টি আলু, বারমাসি শিম, ঢেরস, বেগুন, পাহাড়ী মরিচ ইত্যাদি। মসল্লা জাতীয় ফসলের মধ্যে যেমন- আদা, হলুদ, পেঁয়াজ, রসুন, তেজপাতা, ধনিয়া, মরিচ, বিলাতি ধনিয়া ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক সম্পদ: বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বাঁশ, বেত, পাথর বালি ইত্যাদি।
প্রাণিজ সম্পদ: গরু, ছাগল, হরিণ, ভাল্লুক, বানর, শুকর, গয়াল, হাতি, ইত্যাদি।

যোগাযোগ:
রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে বিলাইছড়ি যাওয়ার কোনো সড়ক ব্যবস্থা নেই। রাঙ্গামাটি  জেলা সদরের তবলছড়ি নৌঘাট থেকে বা কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই নৌঘাট থেকে কাপ্তাই হ্রদ ও রাইখ্যাং নদী হয়ে ইঞ্জিন বোটে এই উপজেলায় যাওয়া যায়।
 
প্রশাসন: বর্তমানে এই উপজেলাটিতে ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। এগুলো হলো-  বিলাইছড়ি সদর, কেংড়াছড়ি, ফারুয়া ও বড়থলি।

ইতিহাস:
এই অঞ্চলটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম অংশ। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর কাছে এই অঞ্চলটি প্রায় অজ্ঞাত ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই অঞ্চলটি বিবাদপূর্ণ এলাকা হিসেবে আলোচিত হয়ে উঠেছিল। উল্লেখ্য, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে, চাকমা রাজা অনুগত পাকিস্তানিদের পক্ষের চাকমারা মিজোরামের কিছু বিদ্রোহীদের সাথে মিলে শান্তিবাহিনী নামে একটি দল গঠন করে এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়েছিল। সে সময়ে এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। পরে শান্তিবাহিনীকে দমনের জন্য ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বিলাইছড়ি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে একটি অতিরিক্ত থানা ফারুয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তৎপরতায় এই বিদ্রোহী দলের সদস্যরা তাদের তাঁদের মূল ঘাঁটি ত্রিপুরায় স্থানান্তরিত করে।  ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বিলাইছড়ি থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়।

নির্বাচনী আসন: ২৯৯ পার্বত্য রাঙামাটি।

দর্শনীয় স্থান


তথ্যসূত্রঃ