কাউখালি
চট্টগ্রাম [বাংলাদেশ] বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

কাউখালী উপজেলার নামকরণের উৎপত্তি সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস এই যে- অতীতে স্থানীয় লোকজন পানের যোগ্য পানি পাওয়ার জন্য অনেক কুয়া বা গর্ত খনন করেছিল। স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় কুয়া বা গর্তকে বলা হয় কাউ। শুষ্ক মৌসুমে সকল কুয়া জলশুন্য হয়ে যেতো। এই শুন্য শব্দের সমার্থক শব্দ হলো খালি। কাউ এবং খালি শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে এই স্থানের নাম হয়েছিল কাউখালি।

ভৌগোলিক অবস্থান: ২২°২৯'- ২২°৪৪' উত্তর অক্ষাংশ ৯২°৫৬'-৯২°০৮' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। এ উপজেলার পূর্বে
 নানিয়ার চর, উপজেলা, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা ও চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলা; দক্ষিণে কাপ্তাই উপজেলা ও চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলা; পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলা ও ফটিকছড়ি উপজেলা এবং উত্তরে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা অবস্থিত।

আয়তন: ৩৩৯.২৯ বর্গকিলোমিটার।

নদনদী ও খাল বিল: এই উপজেলার ভিতর দিয়ে চেঙ্গি নদী প্রবাহিত হয়েছে কাউখালী খাল।

জনসংখ্যা ও জাতি সত্তা: ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কাউখালী উপজেলার জনসংখ্যা ৫৯,২৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩০,২৯৫ জন এবং মহিলা ২৮,৯৮৩ জন। মোট জনসংখ্যার ৩৫.৬৬% মুসলিম, ৩.৩৩% হিন্দু, ৬০.৫৩% বৌদ্ধ এবং ০.৪৮% খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা প্রভৃতি নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

যোগাযোগ: কাউখালী উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক। এই পথে সব ধরণের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়।


ইতিহাস ও প্রশাসন:  ব্রিটিশ শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ হিসেবে
রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের পুরো সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ৯ ডিসেম্বর কাউখালী উপজেলার অন্তর্গত বেতবুনিয়া ও বালুখালীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বেতবুনিয়াস্থ চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে কালভার্টের উপর পাকবাহিনীর জীপ গাড়িতে আক্রমণ চালায়। এতে গাড়ির ড্রাইভারসহ ২ জন পাক অফিসারের মৃত্যু ঘটে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে
কাউখালী থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সূত্রে কাউখালী উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

এ উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে।  এগুলো হলো-  বেতবুনিয়া, ফটিকছড়ি, ঘাগড়া ও কলমপতি।

শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কাউখালী উপজেলার স্বাক্ষরতার হার ৩৮.৯০%। এ উপজেলায় ৩টি কলেজ, ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি দাখিল মাদ্রাসা, ৫টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে।

কৃষি: প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, তুলা, আদা, হলুদ, মরিচ, শাকসবজি, গম, সরিষা।
ফল: আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জাম, পেয়ারা, আনারস, পেঁপে।

নির্বাচনী আসন: ২৯৯ পার্বত্য রাঙামাটি।
স্থাপনা

  • বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র:

    পাকিস্তান আমলে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ, বেতার ও টেলিভিশন সুবিধার জন্য বেতবুনিয়ায় একটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে জানুয়ারি, তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ড এবং প্রধান সামরিক শাসক জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

    ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভূ-উপগ্রহটি কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেছিলেন।

    বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন,  এই ভূ-উপগ্রহটি কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। প্রায় ১২৮ একরের জায়গার ওপর স্থাপিত এই  কেন্দ্রটি,  ঊর্ধকাশে স্থাপিত কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করার ব্যবস্থা সচল হয়েছিল। পরবর্তী দীর্ঘ সময়ে এর উন্নয়নের আর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি।

    ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের নিজস্ব ভূ-উপগ্রহ 'বঙ্গবন্ধু কৃত্রিম উপগ্রহ' ঊর্ধ্বাকাশে স্থাপনের পর, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রকে দ্বিতীয় স্টেশন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য এর প্রথম স্টেশনটি স্থাপিত হয়েছে
    গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের তেলিপাড়ায়।


তথ্যসূত্রঃ